মালদা, 4 এপ্রিল: শাসকদল ছেড়ে যারা অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের সমাজিক বয়কট করার কথা ঘোষণা করলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ শুধু তাই নয়, দলত্যাগীদের মাথায় থুতু ছেটানোর নিদান দেওয়ার অভিযোগও উঠল তাঁর বিরুদ্ধে ৷ এমনকি বিরোধীদের রাজ্য সরকারের সমস্ত পরিষেবামূলক প্রকল্পের কার্ড ফেরত দেন ৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ জেলা তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছে হাত শিবির ৷
গত 2 এপ্রিল কালিয়াচকে একটি যোগদান সভা করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী ৷ সেই সভায় কংগ্রেসে যোগ দেন তৃণমূলের নওদা যদুপুর অঞ্চলের সভাপতি রফিক শেখ ৷ তিনি আগে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন ৷ এর পরেই গতকাল নওদার যদুপুরে একটি সভার আয়োজন করে তৃণমূল ৷ জেলা তৃণমূল সভাপতি ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়, মন্ত্রী তজমুল হোসেন, বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক চন্দনা সরকার প্রমুখ ৷
সেই সভায় আবদুর রহিম বকসি বলেন, “বিরোধী কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোর বলছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চোর হলে বিরোধীদলের লোকজন তাঁর দেওয়া বিনা পয়সার চাল খাচ্ছেন কেন ? স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, সবুজ সাথী, বিনা পয়সার বাড়ি নিচ্ছে কেন ? হিম্মত থাকলে তাঁরা যেন সরকারি প্রকল্পের সমস্ত কার্ড জমা করে দেন ৷ আসলে এরা নির্লজ্জ ৷’’ কৌস্তভ বাগচীকেও নিশানা করেন আবদুর রহিম বকসি ৷ তাঁকে ‘মাথা ন্যাড়া বাগচী’ বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি ৷
এও জানান, কৌস্তভ বাগচী যেন কালিয়াচকে এসে কংগ্রেসের সব নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে যান ৷ এর পরেই রফিক শেখকে নিশানা করেন আবদুর রহমান বকসি ৷ জানান, তৃণমূলের এক প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কংগ্রেসে গিয়েছেন ৷ তাঁর সন্দেহ বায়রন বিশ্বাসের বিড়ির বস্তা ভর্তি টাকা পেয়েছেন তিনি ৷ আর তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন রফিক শেখ ৷ সভা মঞ্চ থেকেই রফিক শেখকে সামাজিক বয়কটের নিদান দেন আবদুর রহিম বকসি ৷ এমনকি তাঁর মাথায় থুতু ছেটানোর কথাও বলেন বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন: কংগ্রেসে ফিরলেন সরলা মুর্মু, মালদায় ধাক্কা খেল তৃণমূল
মালদা জেলা তৃণমূল সভাপতির এহেন মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ এক সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস ৷ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ইশা খান চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল গণতন্ত্র মানে না ৷ সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল ও বিজেপি থেকে অনেক মানুষ কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ৷ যোগদানের পরেই তৃণমূলের লোকজন তাঁদের উপর হামলা চালাচ্ছে, মারধর করছে ৷ পুলিশও কোনও প্রমাণ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করছে ৷’’ তিনি পালটা অভিযোগ করেছেন দু’দিন আগে কালিয়াচকে খোদ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি কংগ্রেসের লোকজনদের মারধর করেছে ৷ সিসিটিভি ক্যামেরায় সেই ঘটনা ধরাও পড়েছে বলে জানান ইশা খান চৌধুরী ৷ সেই প্রসঙ্গেই আবদুর রহিম বকসির মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ৷
এ নিয়ে আজ রহিম বকসিকে ফোন করা হলে তিনি দাবি করেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ নিজের ইচ্ছে মতো রাজনৈতিক দল করতে পারেন ৷ কিন্তু, তিনি যদুপুরের যে নেতাকে নিশানা করেছেন বা যিনি কংগ্রেসে গিয়েছেন ৷ সেই নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহুবার চোর বলেছেন ৷ পালটা রফিক শেখের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন আবদুর রহিম বকসি ৷ সেই কারণেই নাকি তিনি সামাজিত বয়কটের কথা বলেছেন ৷