মালদা, 4 মার্চ : 26 বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন মালদা শহরের শরৎপল্লির বাসিন্দা কমলকৃষ্ণ দাস ৷ তার মধ্যে অন্তত 15 বছর নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন সমাজ সচেতনতায় ৷ তারই মূল্য পেলেন তিনি ৷ বেঙ্গালুরুর INSC নামে একটি সংস্থা দেশের নয়জন সেরা শিক্ষকের তালিকায় বেছে নিয়েছে কমলবাবুকে ৷ সেই তালিকায় রয়েছেন এই রাজ্যের আরও তিন শিক্ষক ৷ তাঁদের মধ্যে দু’জন মালদার ৷
চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইন্সটিটিউশনের জীববিদ্যার শিক্ষক কমলবাবু ৷ পড়ুয়াদের পাঠদানের সঙ্গে অনবরত তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায় সমাজকে সুস্থ রাখার ভাবনা ৷ সেই ভাবনা থেকেই প্রায় 15 বছর ধরে তিনি বিষাক্ত পার্থেনিয়াম নিধনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তাঁর সঙ্গী স্কুলের পড়ুয়ারাই ৷ চাঁচলের বিস্তীর্ণ এলাকায় পার্থেনিয়াম নিধনের জন্য মিলেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রশংসা ৷ এর সঙ্গে তিনি জেলার ঐতিহ্য আমচাষকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েছেন ৷ জৈবিক পদ্ধতিতে আমচাষের সুফল নিয়ে প্রচার করে বেড়ান ৷ বছরভর আম চাষিদের সঙ্গে সময় কাটান ৷ চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, রাসায়নিকের ব্যবহার কীভাবে ধীরে ধীরে এই জেলার আম চাষকে অতল খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়েছে ৷ তাতে কাজও হয়েছে অনেকটা ৷ বর্তমানে উত্তর মালদার অনেক আম চাষিই নিজেদের বাগানকে রাসায়নিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করছে ৷
এহেন কমলবাবু গোটা দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা শিক্ষক হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আপ্লুত ৷ ETV ভারতকে তিনি বলেন, “জাতীয় স্তরে নয়জনের মধ্যে আমার কাজকেও যে বিবেচনা করা হবে তা আমার আশায় ছিল না ৷ আমি INSC সংস্থার কর্তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই ৷ আমি মূলত স্কুলে শিক্ষকতা করি ৷ দীর্ঘদিনের শিক্ষকতায় উপলব্ধি করতে পেরেছি, চার দেওয়ালের মধ্যে শিক্ষকতা কখনই আবদ্ধ থাকতে পারে না ৷ তাই আমি পড়ুয়াদের নিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট করে বেড়াই ৷ তার মধ্যে পার্থেনিয়াম নিধন উল্লেখযোগ্য ৷ প্রথমে আমি স্কুল থেকেই এই প্রজেক্ট শুরু করি ৷ পরবর্তীতে চাঁচলের মূল এলাকা থেকে বিষাক্ত পার্থেনিয়ামের পুরোপুরি নিধন সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু এখনও আমাদের আশেপাশে প্রচুর পার্থেনিয়াম গাছ রয়েছে ৷ আমরা স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যে পদ্ধতিতে পার্থেনিয়াম নিধন করা শুরু করেছি, তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে গোটা দেশ থেকেই এই বিষাক্ত উদ্ভিদ পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে ৷ এর সঙ্গে আমি খুশি হব যদি মালদা জেলার প্রতিটি আম চাষি জৈবিক পদ্ধতিতে আম চাষ করেন৷ তাহলেই মালদার আমের গুণগত মান আবার ফিরে আসবে ৷ আমি আশা করি, আগামী দিনে এই জেলায় কীটনাশক ও কৃত্রিম রাসায়নিক সার বর্জিত আমচাষ একদিন সফল হবেই ৷ সেই আশাতেই দিন গুনছি ৷ তবে আমাদের এখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি৷”
কমলবাবু ছাড়াও এই রাজ্য থেকে আরও যে দু’জন এই সম্মান পেয়েছেন, তাঁরা হলেন মালদা রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের অঙ্কের শিক্ষক অনুকূল বিশ্বাস ও হাওড়ার রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক রণজিৎ দাস৷ তাঁরাও পঠনপাঠনের সঙ্গে সামাজিক সচেনতার বার্তা দিয়ে চলেছেন ৷