মালদা, 12 সেপ্টেম্বর: ভাঙন দুর্গত এলাকায় গিয়ে ফের রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগলেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ৷ ফের তিনি দাবি করলেন, ভাঙন রোধে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে কোনও পরিকল্পনা পাঠানো হয়নি ৷ গত 2 সেপ্টেম্বর থেকে সোমবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাঁকে কোনও তথ্য দিতে পারেননি রাজ্যের সেচ দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারিও ৷ তাঁর কথায়, রাজ্য সরকার ভাঙন নিয়ে শুধুই রাজনীতি করছে ৷
আজ সাংসদ জানিয়েছেন, কান্তটোলা গ্রামের অন্তত দেড়শো পরিবার অন্যত্র সরে গিয়েছেন ৷ 20-30টি বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ মানুষজন আতঙ্কে রয়েছে ৷ এই মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া রাজ্যের দায়িত্ব ৷ তাছাড়া এই এলাকাগুলি রাজ্য সরকারের অধীনেই পড়ে ৷ রাজ্যের তরফে একবারের জন্যও চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানানো হয়নি, নিজেদের দায়িত্বে থাকা এলাকায় গঙ্গার ভাঙন রুখতে তারা অপারগ ৷ এই কাজে যে কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, সেটাও তারা জানাননি ৷
খগেন মুর্মু বেলন, "এই বিষয়টি আমি বারংবার লোকসভায় তুলেছি ৷ লিখিত ও মৌখিক আর্জি জানিয়েছি ৷ কিন্তু রাজ্যের তরফে কোনও আবেদন না যাওয়ায় কেন্দ্র সেই কাজ করতে পারছে না ৷ এ নিয়ে সমরবাবুর সঙ্গে আমার কথা হয় ৷ তাঁর কাছে রাজ্যের সেচ দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারির ফোন নম্বর নিয়েছি ৷ 2 সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলছি ৷ তাঁর কাছ থেকে শুধু কেন্দ্রকে পাঠানো রাজ্যের আবাদনের চিঠির কপি চাইছি ৷ বাকি কাজ কেন্দ্র করবে ৷ কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনি কোনও তথ্য দিতে পারছেন না ৷ আসলে গঙ্গার ভাঙন নিয়ে রাজ্য সরকার শুধু রাজনীতিই করে যেতে চায় ৷ ভাঙন রোধ করতে চায় না ৷"
আরও পড়ুন: গঙ্গার গ্রাস থেকে মাত্র 300 মিটার দূরে দাঁড়িয়ে কাটাহা দিয়ারা হাইস্কুল!
সম্প্রতি গঙ্গা ভাঙনে বিধ্বস্ত রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের কান্তটোলা গ্রাম ৷ গোটা গ্রামে এখন আর কোনও বাড়ি আস্ত নেই ৷ কিছু বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গায় ৷ সময় থাকতে বাকি বাড়িগুলি ভেঙে ফেলেছেন গ্রামবাসীরাই ৷ ক'দিন আগেই ওই গ্রামে গিয়ে মানুষের রোষের মুখে পড়েন এলাকার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় ৷ গ্রামবাসীদের হাতে ঘেরাও হয়ে যান মালতিপুরের বিধায়ক আবদুর রহিম বকসি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ-সহ তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ৷ মঙ্গলবার সেই গ্রামেই যান উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ ৷ তাঁকে দেখে ভিড় করেন দুর্গত মানুষজন ৷ কয়েকজন মহিলা তাঁর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন ৷ প্রত্যেকেই সাংসদের কাছে দাবি করেন, গঙ্গা বেঁধে দিতে হবে, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ৷
সকাল থেকে নদীর পাড়ে টাঙানো ত্রিপলের নীচে বসে গঙ্গার গতিপ্রকৃতি মাপছিলেন সুধীর মণ্ডল গ্রামে সাংসদ এসেছেন শুনে তিনিও ছুটেছেন সেদিকে লোকজনের ভিড়ে এখনও অবশ্য সাংসদের কাছে তিনি নিজের আর্জি জানাতে পারেননি ৷ তবে খগেনের সঙ্গে কথা বলে গ্রামের গোপাল মণ্ডলের বক্তব্য, "30 কিলোমিটার দূরের গঙ্গা এখন আমাদের বাড়িঘর গিলে নিচ্ছে ৷ আমরা নিজেদের বাড়িঘর খুলে নিয়েছি ৷ দিন দশেক ধরে গঙ্গা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে ৷ কান্তটোলা গ্রামটাই আর কোথায় থাকল ! 125 ঘরের বেশিরভাগটাই ভেঙেচুরে গিয়েছে ৷ গঙ্গায় কিছু পড়ে গিয়েছে, বাকিগুলো ভাঙা হয়েছে ৷ আমরা নদীর বাঁধন চাই ৷ নদীকে বাঁধতে হবে ৷ সাংসদকে বলেছি, গঙ্গাকে বাঁধতে হবে ৷ একইসঙ্গে আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: গঙ্গার ভাঙন রোধ নিয়ে রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রকে তোপ কংগ্রেস সাংসদের
আরেক গ্রামবাসী বলরাম মণ্ডল জানান, দেড়শো ঘর ইতিমধ্যে ভাঙা হয়ে গিয়েছে ৷ গত কয়েকদিনে অন্তত 20টি বাড়ি নদীতে মিলিয়ে গিয়েছে ৷ তাঁরা চাইছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হোক ৷ সাংসদ পাথর দিয়ে নদী বাঁধার ব্যবস্থা করুক ৷ তিন বছর ধরে সবার কাছে নদী বাঁধার আর্জি জানানো হচ্ছে ৷ কেউ কথায় গুরুত্ব দিচ্ছে না ৷ এখন নদী যখন পাড় ভাঙছে, তখন নেতা-মন্ত্রীদের দেখা মিলছে ৷ কিন্তু এখনও কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন: এক লহমায় গঙ্গায় ধসে পড়ল 30-35টি বাড়ি, কান্তটোলায় এখন শুধুই কান্নার সুর; ঘেরাও জনপ্রতিনিধিরা
ক'দিন আগে কান্তটোলায় গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং এলাকার সাংসদ খগেন মুর্মুর বিরুদ্ধে তোপ দেগে বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, "সাংসদ গ্রামে আসলে বিধ্বস্ত মানুষজন তাঁকে গঙ্গায় ফেলে দেবে ৷" তিনি দাবি করেছিলেন, ভাঙন রোধের জন্য রাজ্যের তরফে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও গা করছে না ৷