মালদা, 7 সেপ্টেম্বর: আইন রক্ষার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ৷ আবার সেই সঙ্গে প্রতিমা গড়ার বড্ড শখ ৷ তাই দুই ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রেখে কাজ করে আসছেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ৷ তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে তিনি মাটি ব্যবহার থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকার চেষ্টা করেন ৷ ভূমিক্ষয় কী, তিনি সেটা বোঝেন ৷ বোঝেন বৃক্ষচ্ছেদনও ৷ আর এই বোধই তাঁকে অন্যদের থেকে যেন খানিকটা আলাদা করে রেখেছে ৷
তাই মাটির পরিবর্তে কখনও গাছের ছাল, কখনও বা সুতো, কখনও আমের আঁটি দিয়ে দুর্গা মূর্তি বানিয়েছেন তিনি ৷ তবে এবার মাতৃমূর্তি তৈরিতে মাটির বদলে বেছে নিয়েছেন ধানের তুষ আর গমের ভূষি ৷ তাঁর 6 মাসের পরিশ্রম এবার ধীরে ধীরে রূপ পেতে চলেছে ৷ প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে মা ৷
আরও পড়ুন : পুরাকালের রীতি ভেঙে পতিতালয়ের মাটি ছাড়া দুর্গাপ্রতিমা গড়ছে কুমোরটুলি
নাম বিষ্ণুচন্দ্র সাহা ৷ বাড়ি মালদা শহরের(Malda News)কৃষ্ণকালীতলা এলাকায় ৷ পেশায় মালদা পুলিশের হোমগার্ড( Police Home Guard artist making idols in Malda without soil)৷ তবে ছোট থেকে মূর্তি গড়ার বড় শখ ৷ তাই পেশার পাশপাশি সমান গুরুত্ব দিয়েছেন নিজের ইচ্ছেকেও ৷ অনেকদিন ধরেই এভাবে হোমগার্ডের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে তিনি মাটি ছাড়াই মূর্তি বানিয়ে আসছেন ৷ তবে এবার পেশায় থাকাকালীন তাঁর শেষ পুজো ৷ আগামী অক্টোবরেই হোমগার্ডের চাকরি(Malda Police)থেকে অবসরগ্রহণ নেবেন তিনি ৷ তারপর একসময়ের শখই হতে চলেছে তাঁর ভবিষ্যৎ পেশা ৷ ইটিভি ভারতকে খোলাখুলিই জানালেন সেকথা ৷
আরও পড়ুন : সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে গড়া পরচুলাতে সেজে ওঠেন দেবী উমা
প্রতি বছরের মতো বিষ্ণুবাবু এবারও একটিই বড় দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছেন ৷ মালদা শহরের বাঘাযতীন ক্লাবে সেই প্রতিমা দেখতে পাওয়া যাবে ৷ এই বিষয়ে হোমগার্ড শিল্পী বলেন, "এবার আমার ভাবনায় বনদুর্গা ৷ আদ্যাশক্তি প্রকৃতিরও মা ৷ যেভাবে এখন বৃক্ষচ্ছেদন চলছে, তাতে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে ৷ এই প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই আমি মাটি ছাড়া অন্য কোনও মাধ্যম দিয়ে বড় আকারের দুর্গাপ্রতিমা বানাই ৷ ভূমিক্ষয়ের জন্য মাটি এখন দুর্লভ হয়ে গিয়েছে ৷ আমার মনে হয়, শিল্পীরা যদি এদিকে একটুখানি নজর দেন, তবে প্রতি বছর প্রতিমা নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ মাটি নষ্ট হবে না ৷ নিরঞ্জনের পর নদীগর্ভেও মাটি জমবে না ৷ নদীর স্রোত বাধার মুখে পড়বে না ৷ তবে আমি মাটির প্রতিমা তুলে দেওয়ার কথা বলছি না ৷ ছোট প্রতিমাগুলি মাটিরই হোক ৷ বড় প্রতিমা হোক অন্য মাধ্যমে ৷"
তবে বিজ্ঞানমনস্ক হোমগার্ড শিল্পী বিষ্ণুবাবুর এই প্রকৃতি সংরক্ষণের ভাবনা কি অন্য শিল্পীদেরও উদ্বুদ্ধ করবে ? সময়ই তার উত্তর দেবে ৷
আরও পড়ুন : নালিকুলের সিংহবাড়িতে পুজোর জোগাড় করেন ছেলেরা, মেয়েরা থাকেন 'ছুটিতে'