মালদা, 25 মে : লোহার গেটের ভিতরেই বন্দী হয়ে থাকল এবছরের খুশির ইদ ৷ সকালে নমাজ পাঠ করে আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে আলিঙ্গনবদ্ধ হতে পারল না শাহজাহান, আমিরুলরা ৷ জোটেনি নতুন জামাও ৷ এবারের ইদটা কাটল কোয়ারানটিন সেন্টারের চার দেওয়ালের মধ্যেই ৷ গোটা জেলাতেই আজ এই ছবি দেখা গিয়েছে ৷ কোরোনার আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে ইদের আনন্দকেও ।
চাঁচল হাটখোলায় থাকা কর্মতীর্থ ভবনে কোয়ারানটিন সেন্টার তৈরি করেছে প্রশাসন ৷ এই মুহূর্তে সেখানে রয়েছে প্রায় 50জন পরিযায়ী শ্রমিক ৷ গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এলাকায় ফিরেছে তারা ৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী ৷ গত পাঁচদিন ধরে সেখানেই থাকছেন স্থানীয় রানিকামাত গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান ৷ বলেন, "আজ ইদ ৷ কিন্তু বাইরে থেকে ফেরার পর এখানেই থাকতে হচ্ছে ৷ এখানে নমাজ পড়ার মতো ব্যবস্থা নেই ৷ তাই আজ নমাজ পড়তে পারিনি ৷ বাড়ির লোকজন ইদ পালন করছে ৷ আমরা এবার উৎসব থেকে দূরে ৷ আল্লার কাছে দোয়া করছি, এই মহামারী যেন দ্রুত বিদায় নেয় ৷ আমরা যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে পারি ৷" একই বক্তব্য গতকাল মুম্বই থেকে এলাকায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিক হেলাল শেখেরও ৷
আজ ছেলে কোলে কোয়ারানটিন সেন্টারের মূল গেটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়েছিলেন নীহার বিবি ৷ তিনিও পরিযায়ী শ্রমিক ৷ পাঁচদিন আগে গুজরাট থেকে ফিরেছেন ৷ গ্রামে ফিরে ঠাঁই হয়েছে এই কোয়ারানটিন সেন্টারে ৷ তিনি বলেন, "কী আর করা যাবে । আজ ইদ ৷ খুশির দিন ৷ কিন্তু এখন এই মহামারী যেভাবে দেখা দিয়েছে তাতে খুশি পালনের উপায় নেই ৷ আল্লার কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন এই বিপদ থেকে তাড়াতাড়ি পৃথিবীকে রক্ষা করেন ৷ পৃথিবী যেন দ্রুত তার নিজের ছন্দ ফিরে পায় ৷"
কোরোনা মোকাবিলায় প্রশাসনের আবেদন মেনে আজ জেলার কোথাও ইদের জন্য জমায়েত হয়নি ৷ কোথাও একত্রিতভাবে নমাজ পাঠের আয়োজনও ছিল না ৷ কিছু মসজিদে হাতে গোনা কয়েকজন নমাজ পড়লেও তা খুবই অল্প ৷ বাড়িতেই সকলে নমাজ পাঠ করেছে ৷ প্রশাসনকে এভাবে সাহায্যের জন্য জেলাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলাশাসক রাজর্ষী মিত্র ও পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ সুষ্ঠুভাবে ইদ পালনের জন্য মালদার অনেক জায়গায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইমামদের পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে ৷