মালদা, ১৭ মার্চ : বরফে জ্বলল আগুন ! ভোটের মুখে পুরাতন মালদার আদিনা হিমঘর সমবায় সমিতিতে লাখ লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগ পেয়ে সমবায় দপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্তে যাওয়া হলেও তদন্ত কমিটিকে এড়িয়ে গেলেন সমিতির শীর্ষকর্তারা। যদিও এই বিষয়ে আদিনা হিমঘর পরিচালিত সমিতির কোনও শীর্ষকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুরাতন মালদা ব্লকের মহিষবাথানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মালদা জেলার সবচেয়ে বড় হিমঘরটি সমবায় সমিতি পরিচালিত। যার সদস্য সংখ্যা ৫৬। বর্তমানে এই হিমঘরে ৩টি ইউনিট রয়েছে। চতুর্থ আরেকটি ইউনিট তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। চতুর্থ ইউনিটটি নিয়েই সদস্যদের ৪১ জন অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা নিজেদের লিখিত অভিযোগপত্র জেলা সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে এক সদস্য বিশ্বনাথ সুকুল বলেন, "৬ মাস আগে হিমঘর সমিতির সভায় চতুর্থ ইউনিট তৈরির প্রস্তাব গৃহীত হয়। গত ২৭ জানুয়ারি ফের সভা ডাকা হয়েছিল। সেই সভায় আমরা জানতে চাই, চতুর্থ ইউনিটটি কোথায় তৈরি হবে। কিন্তু সেই সভা চলাকালীন সমিতির চেয়ারম্যান কিংবা অন্য কোনও শীর্ষকর্তা কোনও উত্তর দেননি। সভা শেষ হওয়ার মুহূর্তে চেয়ারম্যান বলেন, ওই ইউনিটটি স্থানীয় মকরমদিঘি এলাকায় তৈরি করা হবে। আমরা মকরমদিঘিতে ওই ইউনিট তৈরির বিরোধিতা করি। বেশিরভাগ সদস্যই জানিয়ে দেন, মকরমদিঘি এলাকায় রাস্তা অপ্রশস্ত। বরং ওই ইউনিটটি চন্দ্রাইল গ্রামে তৈরি করলে ভালো হয়। কারণ সেখানে জমির অবস্থান ভালো। এইনিয়ে সভায় কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও পরবর্তীতে চেয়ারম্যান নিজের খেয়ালখুশি মতো মকরমদিঘিতে প্রায় ৭ বিঘা জায়গা কিনে ফেলেন। সেই জায়গার ভ্যালুয়েশন ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ সেই জায়গা কেনা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকায়। এই বাড়তি টাকা কেন খরচ করা হবে তা নিয়ে হিমঘরের বেশিরভাগ সদস্য প্রশ্ন তোলেন। এই বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগের তদন্তে সরকারি প্রতিনিধিদল হিমঘরে আসে। কিন্তু হিমঘরের চেয়ারম্যান, সম্পাদক, এমন কী ম্যানেজার সহ কোনও বোর্ড সদস্য তদন্তকারী দলের সামনে উপস্থিত হননি। তাঁরা পালিয়ে গেছেন। গোটা ঘটনায় ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে। সেই কারণেই বোর্ড সদস্যদের কেউ আজ তদন্তে সহযোগিতা করেননি। এখানে আলুর বস্তা বিতরণ নিয়েও দুর্নীতি রয়েছে। সরকারি আধিকারিকরা আগামী সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার সময় ফের তদন্তে আসবেন বলে চিঠি করেছেন।"
তদন্ত চলাকালীন হিমঘরে উপস্থিত হিসাবরক্ষক সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, "আজ হিমঘরে তদন্ত করতে এসেছিলেন সরকারি আধিকারিকরা। কিন্তু হিমঘর পরিচালন সমিতির কোনও শীর্ষকর্তা আজ ছিলেন না। হিমঘরের কোনও তথ্য আমার কাছেও নেই। তদন্তের বিষয়ে আগে জানতাম না। আমার কাছে কোনও মেইল আসেনি। এব্যাপারে চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন।"
তদন্তকারী দলের পক্ষে জেলা সমবায় উন্নয়ন আধিকারিক সরিৎ দাস বলেন, "হিমঘরের কাজকর্মের বিষয়ে একটি অভিযোগ আমাদের কাছে জমা পড়েছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ও মালদা সমবায় রেঞ্জের পক্ষ থেকে একটি তদন্তকারী দল এখানে তদন্ত করতে আসে। এই তদন্তের বিষয়ে আগে থেকেই ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্তাদের মেইল ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। যে কোনও কারণেই হোক, নথিপত্র যাঁদের হাতে থাকে তাঁরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ফলে আমরা তদন্তের কোনও কাজ করতে পারিনি। আগামী সোমবার ফের এই হিমঘরে তদন্তে আসব। তার লিখিত নির্দেশিকা হিমঘর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।"
গোটা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সমবায় হিমঘর কর্তৃপক্ষ। চেয়ারম্যান সুজিত দাস, সম্পাদক অনিল রাজবংশী কিংবা ম্যানেজার বীরেশ রাজবংশী নিজেদের ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। তবে স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, "একমাত্র নির্বাচন এলেই হিমঘরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তারপর সব দলই এক হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এই হিমঘরের বোর্ড সদস্যদের মধ্যে বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল, সব দলেরই লোক রয়েছে। এই সব দুর্নীতির বিষয় নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।"