মালদা, ৮ মার্চ : "ভদ্রলোকের চুক্তিতে জেতা আসন ছেড়ে দেওয়া যায় না।" কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আজ এই মন্তব্য করলেন রায়গঞ্জের সাংসদ, CPI(M)-এর পলিটবিওরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। মালদা জেলা কমিটির সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করতে আজ তিনি মালদায় আসেন।
লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের মালদা জেলা কমিটির এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বৈঠক শুরুর আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন সেলিম। তবে বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারেননি। বলেন, "লোকসভা ভোটে কোন আসন কে কাকে ছাড়বে তা আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হবে। ভদ্রলোকের চুক্তিতে জেতা আসন ছেড়ে দেওয়া যায় না। কমিউনিস্ট পার্টির নিজস্ব একটি স্ট্র্যাটেজি রয়েছে। সেই স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ীই নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করা হবে। এনিয়ে আজ কলকাতায় বামফ্রন্টের বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকের পর বাম চেয়ারম্যান বিমান বসু রণকৌশল ঘোষণা করবেন। তবে আমাদের লক্ষ্য, দেশ থেকে BJP-কে সরিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে এই রাজ্য থেকে তৃণমূলকে হটাতে হবে। BJP-কে সরাতে না পারলে দেশে যেমন একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন সম্ভব নয়, তেমনই BJP-র দোসর তৃণমূলকে রাজ্য থেকে না সরাতে পারলে পশ্চিমবঙ্গকেও রক্ষা করা সম্ভব নয়। এরা ভাষা ও জনগোষ্ঠীর নামে বিভাজন তৈরি করছে। সব শেষ করে দিচ্ছে।" সেলিমের মন্তব্য, "গণতন্ত্রের সমাধি রচনা করে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব নয়। আবার ধর্মনিরপেক্ষতাকে শেষ করে গণতন্ত্র রক্ষা করা যায় না।"
সেলিম আজ বলেন, "৫০ দশকের খাদ্য আন্দোলনের সময় থেকে আমরা মোট ১৭টি দল জোট করেছি। তাই জোট রাজনীতি আমাদের কাছে নতুন নয়। কিন্তু এখন UPA, NDA জোট তৈরি করছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ভালো ফল হয়েছিল। সেই নির্বাচনে BJP-তৃণমূলের টেবিলের তলায় জোট না হলে ওরাও ক্ষমতায় আসতে পারত না। মাত্র ২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে এরা ক্ষমতায় এসেছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এই নিয়ে পলিটবিওরো সহ বামফ্রন্টে আলোচনা চলছে। আজই আমাদের রণকৌশল ঘোষণা করবেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। তবে ভদ্রলোকের চুক্তি হল জেতা আসন ছেড়ে দেওয়া। গত বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরে আমরা অনেক আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে ইসলামপুরে ওরা জোর করে প্রার্থী দেয়। এখন রায়গঞ্জ শহর ছাড়া ওই জেলায় কংগ্রেসের তেমন সংগঠন নেই৷ দাড়িভিটের ঘটনার পর ওরা একটি মিছিল পর্যন্ত করতে পারেনি।"
গতকাল দক্ষিণ মালদার সাংসদ, প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরি মন্তব্য করেছিলেন, "লোকসভা নির্বাচনে কয়েকটি আসনে বামেদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হতে পারে।" সেপ্রসঙ্গে সেলিম বলেন, "RSS-এর ভাষায় এটাকে বলে লাভজেহাদ। প্রেম ও ধর্মযুদ্ধ কখনই একসঙ্গে হয় না। কিন্তু তৃণমূল ও কংগ্রেস এখনও নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ বজায় রেখেছে।" এই অবস্থায় কংগ্রেসের সাথে লোকসভা নির্বাচনে কতটা লড়াই করা সম্ভব, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "বন্ধু কখনও বন্ধুর ঘর ভাঙায় না। এখানে মামার ঘর ভাঙিয়ে ভাগ্নিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমন বন্ধুকে আমি অন্তত বন্ধু বলি না।"