মালদা, 7 নভেম্বর: দু’দিন আগে তিনিই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন ৷ বিঁধেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ককেও ৷ দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন ৷ যদিও, কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের মন্তব্য ফিরিয়ে নিয়েছিলেন ৷ তৃণমূলের সেই নেতা মনোজ রামের (TMC Leader Accused for Cheating) বিরুদ্ধেই এবার চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ তুললেন দলেরই কর্মী দীপক সিং (Manoj Ram has been Accused of Cheating) ৷ শুধু মৌখিক অভিযোগই নয়, ওই নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় থানায় ৷
ওই তৃণমূল কর্মী দীপক সিং দাবি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস থেকে তাঁকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ ৷ এদিকে প্রতারণার শিকার হয়ে শোকে মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার, ছেড়ে চলে গিয়েছেন স্ত্রীও ৷ এমনকী সময়ে চিকিৎসা করাতে না-পারায় একটি কিডনিও কেটে বাদ দিতে হয়েছে ওই তৃণমূল কর্মীর ৷ আর কোনও উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রতারিত ওই তৃণমূল কর্মী দীপক সিং ৷
ঘটনাটি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈরাঠ গ্রামের ৷ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা দীপক ৷ তিনি বলেন, "উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থায় কনডাক্টরের চাকরি করে দেবে বলে 2016 সালে আমার কাছ থেকে সওয়া দু’লাখ টাকা নিয়েছিলেন তৃণমূলের তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম ৷ 2014 সালে আমি প্রথম চাকরির ডাক পাই ৷ সেবার আমার চাকরি হয়নি ৷ চারদিকে চাকরির খোঁজ করছিলাম ৷ তখনই দলীয়ভাবে আমার সঙ্গে মনোজ রামের পরিচয় হয় ৷ আমিও তৃণমূল করি ৷ মনোজ রামই আমাকে বলেছিলেন, ওকে টাকা দিলে আমার চাকরি করে দেবে ৷"
দীপক সিং বলেন, "2016 সালে আমি নিজেদের শেষ সম্বল, দু’কাঠা জমি বিক্রি করে ওকে সওয়া দু'লাখ টাকা দিই ৷ কিন্তু আমার চাকরি হয়নি, টাকাও ফেরত পাইনি ৷ এই টাকার জন্য আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে ৷ টাকার শোকে বাবা মারা গিয়েছে ৷ নিজের কিডনির চিকিৎসা করাতে পারিনি ৷ একটা কিডনি কেটে ফেলতে হয়েছে ৷ আমি 'দিদিকে বলো' নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছিলাম ৷ ওরা আমাকে থানায় অভিযোগ জমা করতে বলে ৷ আমি মনোজ রামের বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছি ৷"
আরও পড়ুন: চাকরির নামে প্রতারণা ! অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার স্ত্রী ও ছেলেকে গাছে বেঁধে মার
দীপকের মা নির্মলা সিং বলেন, “চাকরি দেওয়ার নাম করে মনোজ রাম সোওয়া দু’লাখ টাকা নিয়েছিল ৷ চাকরি তো করে দেয়নি, উলটে ওই টাকার শোকে আমার স্বামী মারা গিয়েছেন ৷ এখন দুই ছেলে দিনমজুরের কাজ করে ৷ দীপকের বউ ওই টাকার জন্যই বাচ্চা নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে ৷ এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না ৷ এদিকে টাকা চাওয়ায় মনোজ রাম আমার ছেলেকে খুন করার হুমকি দিচ্ছে ৷ আইসি, বিডিওকে সব জানিয়েছি, কিন্তু কিছু হয়নি ৷ আসলে গরিবের কেউ নেই ৷’’
এনিয়ে অভিযুক্ত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মনোজ রামের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ ফোনও ধরেননি তিনি ৷ তবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির বক্তব্য, “কেউ যদি কারও কাছ থেকে অসৎ উপায়ে টাকা নেয়, তবে তার জন্য আইন আছে ৷ সরকার আছে ৷ তার বিরুদ্ধে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ দল কখনও বলেনি, চেয়ারে বসে লুঠতরাজ করবে, মানুষকে বিপদে ফেলবে ৷ এটুকু বলতে পারি, এধরনের কাজ আমাদের দল বরদাস্ত করে না ৷’’
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকেই তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এবার সেই দলে নাম লেখালেন রাজ্যের শাসকদলের তুলসিহাটা অঞ্চল সভাপতিও৷ এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে, যিনি নিজেই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, তিনি আবার অন্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দল ছাড়ার নাটক করেন কী করে? তবে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ঘটনা বিরোধীদের হাতে যে নতুন অস্ত্র তুলে দিল, তা বলাই বাহুল্য ৷