মালদা, 12 জুলাই : বর্ষা শুরু হয়েছে । জল বেড়েছে গঙ্গার । প্রতি বছরই পাড় ভাঙে ৷ তলিয়ে যায় বহু বাড়ি ৷ গত বছর পাড় ভাঙনে নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বীরনগর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাবাজার গ্রামের শ’দেড়েক বাড়ি । এর মধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসনের জন্য সরকারি জমির পাট্টা দেওয়া হলেও এখনও বহু মানুষ গঙ্গাপাড়েই বসবাস করছেন । এরই মধ্যে এ’বছর চিনাবাজারের পাশের গ্রাম লালুটোলায় অল্পবিস্তর পাড় ভাঙা শুরু হয়েছে ৷ নদীপাড়ের বাড়িঘরও গঙ্গায় তলিয়ে যেতে শুরু করেছে । বৃহস্পতিবার রাতে গঙ্গা ভালই ধ্বংসলীলা চালায় । গ্রামবাসীদের দাবি, সেই রাতে নদীতে তলিয়ে যায় 60-70টি বাড়ি । এখনও সবাই সরকারি কোনও শিবিরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাননি । তাঁরা আবার পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করার দাবি তুলছেন । তবে এনিয়ে এখনই তাঁদের কোনও আশা দিতে পারছে না ব্লক প্রশাসন ।
স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল হক বলছেন, “ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি । বিধায়করা আসছেন, কিন্তু কিছু বলছেন না । কেন্দ্রের কেউ এখনও পর্যন্ত এখানে আসেনি । প্রশাসনের লোকজন আসছে, সব দেখে ফিরে চলে যাচ্ছে । মানুষকে কেউ কোনও আশ্বাস দিচ্ছে না । আমরা চাইছি, প্রশাসনের কর্তারা আসুন । তাঁরা সব দেখে আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য কোনও ব্যবস্থা করুন । ঘর হারিয়ে নদীর ধারে কুঁড়ে বানিয়ে থাকছি । একটিমাত্র কুঁড়েতে সবাইকে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে । কোনও শৌচাগার পর্যন্ত নেই । পরিবারের মেয়েদের অসম্ভব কষ্ট করে দিন কাটাতে হচ্ছে । আমরা সরকারি ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে রয়েছি ।”
স্থানীয় অলতি বিবি বলেন, “আমাদের শুধু ঘর বাঁধার জায়গা চাই । এখন নদীর ধারে মাথার উপর প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকছি । সরকারের লোকজন আসছে । সব দেখেশুনে চলে যাচ্ছে । আমরা কীভাবে বাঁচব ? বাড়ির সঙ্গে সবকিছুই নদীতে চলে গিয়েছে । কোনও জিনিস নেই । এমনকি হাঁড়ি-কলসি, বাসনপত্রও নদীতে চলে গিয়েছে । রান্না করে খাব কীভাবে ? ঘর পড়ার পর গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে মাথা গুঁজতে গিয়েছিলাম । কিন্তু সেখানে আগে থেকেই লোক বাস করছে ।”
আরও পড়ুন, মালদায় নদী-ভাঙন, মেলেনি কোনও স্থায়ী সমাধান
আসরাফুল শেখ জানাচ্ছেন, “বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে 12টা পর্যন্ত গঙ্গার ভাঙনে 60-70টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । ভাঙনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে আমরা প্রাণ বাঁচাতে কোনওরকমে পালিয়ে যাই । এখন যে যেখানে পেরেছে, মাথার উপর কিছু একটা টাঙিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছে । কিন্তু এত কিছু হয়ে গেলেও পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির কেউ কোনও আশ্বাস দেয় না । আমরা বিডিও থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হোক । নদী সব গিলে নিয়েছে । পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রবল সংকটে পড়েছি । কিন্তু কোনও দিক থেকেই সহায়তা পাচ্ছি না ।”
ইতিমধ্যে লালুটোলার ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বিডিও মামুন আখতার। তিনি জানিয়েছেন, ভাঙনের সম্পূর্ণ রিপোর্ট তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে । তিনি বিষয়টি জেলা সেচ দফতরের নজরেও এনেছেন । চিঠি দেওয়া হয়েছে ওই এলাকায় ভাঙন রোধের দায়িত্বে থাকা ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষকেও ।