মালদা, 17 জুলাই : করোনার সংক্রমণ ক্রমেই কমছে জেলায় । মধ্যে কয়েকদিন মালদা মেডিকেলের ভিআরডি ল্যাবে কোনও লালারসের নমুনায় সংক্রমণ ধরা পড়েনি । তবে সম্প্রতি ক’দিন থেকে ফের অল্প কিছু নমুনায় সংক্রমণ ধরা পড়ছে । যদিও তাতে আশঙ্কার কিছু নেই বলে দাবি করছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ । জেলায় টিকাকরণও চলছে গতিতে । কিন্তু সংক্রমণ যত কমছে, ততই বাড়ছে মানুষের অসচেতনতা । মুখের মাস্ক এখন থুতনি থেকে নেমে পেন্ডুলামের মতো গলায় ঝুলছে । শহরে অল্পসংখ্যক মানুষের মুখে বা গলায় মাস্ক দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে সেটাও দেখা যাচ্ছে না ।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও সময় আছড়ে পড়তে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ । এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলার বণিকসভা । মুখে মাস্ক ছাড়া এবার জেলার কোনও বাজারে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না । এমনটাই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। তার জন্য তাঁরা পুলিশি সহায়তার আবেদন জানাতে চলেছেন ৷
করোনার প্রথম ঢেউয়ের থেকে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি প্রাণঘাতী ছিল । তার ধাক্কা সামলাতে সময় লেগেছে প্রায় চার মাস । রাজ্যজুড়ে প্রথমে কঠোর বিধিনিষেধ লাগু করা হয়েছিল । এখন ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পইপই করে সবাইকে সতর্ক করে যাচ্ছেন, করোনা এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি । তাই মুখে মাস্ক, বারবার হাত ধোওয়া এবং শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রেখেই চলতে হবে । কিন্তু কে শোনে কার কথা । দ্বিতীয় ঢেউয়ে আত্মীয় পরিজন কিংবা পরিচিতদের মৃত্যুতেও শিক্ষা নেয়নি মানুষ । হাট-বাজার, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, সব জায়গাতেই উপচে পড়া ভিড় । উধাও শারীরিক দূরত্ববিধি । করোনাবিধি মেনে চলার বালাই নেই সিংহভাগেরই । এমনকি শিশুদের মুখেও মাস্কের দেখা নেই । এই ছবিটা বড্ড বেশি চোখে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে । অথচ তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদেরই সংক্রমিত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা ।
এই অবস্থায় অন্য কিছু ভাবছে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স । সংগঠনের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলছেন, “মালদা জেলায় একটু হলেও করোনা সংক্রমণ কমেছে। কিন্তু আমরা জানতে পারছি, অগস্টেই তৃতীয় ঢেউ আসতে চলেছে। এই অবস্থায় সংক্রমণ রুখতে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। শহরে সেটা চালুও হয়ে গিয়েছে। মুখে মাস্ক না থাকলে শহরের কোনও ব্যবসায়ী ক্রেতাদের মাল দেবেন না। বিক্রেতার মুখে মাস্ক না থাকলে ক্রেতারাও সেই দোকানে মাল কিনবেন না। আমরা দেখছি, এই মুহূর্তে মানুষের মাস্ক পরার প্রবণতা কমেছে। আমরা সেই প্রবণতাকেই বাড়াতে চাইছি। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের ছবিটা সত্যিই খুব খারাপ। সেখানে 60 শতাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক দেখা যাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, "করোনার সংক্রমণ রুখতে দু’একদিনের মধ্যেই আমরা গ্রামীণ ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসছি। শহরের মতো গ্রামেও যাতে মুখে মাস্ক ছাড়া মাল দেওয়া নেওয়া না হয় তা চালু করার জন্য তাঁদের বলব। গতকাল আমরা চাঁচলে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের এই পদ্ধতি চালু করার আবেদন জানিয়েছি। এর সঙ্গে আমরা আরও একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাই। জেলাজুড়ে শহর ও গ্রামের প্রতিটি বাজারে আমরা সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করতে চাইছি। তাঁরা মুখে মাস্ক ছাড়া কাউকে বাজারে ঢুকতে দেবেন না। কয়েকদিন এই ব্যবস্থা চালু থাকলে তার প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দ্রুত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করব। এটা করা গেলে করোনার তৃতীয় ঢেউ আমরা অনেকটাই রুখে দিতে পারব।”
বেয়াড়া মানুষকে সব শেখাতে প্রশাসন যে আরও একবার কড়া হতে চলেছে, তার প্রমাণ মিলেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসুর মন্তব্যে। তিনি বলেন, “করোনার একটু প্রকোপ কমতেই মানুষের মধ্যে গা ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে মানুষজন মাস্ক পরা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। অন্যান্য সতর্কতাগুলিও তাঁরা মেনে চলছেন না। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন তৃতীয় ঢেউ আরও মারাত্মক হতে পারে। আমাদের নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে। একটা কথা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, যাঁরা মাস্ক পরছেন না, তাঁরা যেমন নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন, অন্যদেরও বিপদে ফেলছেন। জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কিন্তু আগামীতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছি।”