মালদা, 15 মে : দেশ ও রাজ্যের বহু জায়গার প্রাচীন পুজো মাহাত্ম্য গুণে খ্য়াতি লাভ করেছে ৷ দেবী মাহাত্ম্যের কারণে সেসব পুজোয় আজও বিপুল পরিমাণ ভক্ত সমাগম হয় ৷ তেমনই একটি হল মালদা শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার দেবী জহুরাচণ্ডীর পুজো (Jahura Chandi Kali Puja in Malda) ৷
এই পুজোয় ব্রাহ্মণ্যবাদের কোনও ভূমিকা নেই । আলাদা করে কোনও পুরোহিত নয় ৷ প্রায় সাড়ে 300 বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবারের মহিলাদের হাতেই পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী জহুরাচণ্ডী (350 Years Old Puja in Malda) ৷ কোনও পুরুষের পুজো করার বিধান নেই । মালদা শহরের নতুন বাঁশবাড়ি এলাকায় ঘোষবাড়ির পুজো নামে পরিচিত এই পুজোয় শুধু শহরাঞ্চলের নয়, ভিড় জমান ভিন জেলা, ভিন রাজ্য, এমনকি ভিনদেশের মানুষরাও ৷
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত 200 বছর আগে প্রয়াত দীনবন্ধু ঘোষের স্ত্রী নীলো ঘোষ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেন । প্রথমে পুজো হত পুরানো বাঁশবাড়ির গোঁসাইটুলি এলাকায় । 24 বছর বয়স থেকে পুজো শুরু করে 119 বছর পর্যন্ত তা চালিয়ে যান শতায়ু নীলো দেবী । প্রথমদিকে শুধুমাত্র তুলসী গাছে জল ঢেলে পুজো করা হত । পরবর্তীতে ধীরে ধীরে জহুরাচণ্ডীর মুখাপুজো শুরু হয় ।
আরও পড়ুন : Kali puja 2021: ছোলার ডালের খিচুড়ি দিয়ে পূজিত হন মালদার 'বুড়াকালী'
নীলো দেবীর প্রয়াণের পর এই পুজোর দায়িত্ব বর্তায় তাঁর বউমা ঝাঁপানি ঘোষের উপর । তাঁর মৃত্যুর পর পুজো সামলানোর দায়িত্ব পান তাঁর পূত্রবধূ বছর পঁচাশির রানিবালা ঘোষ । বাড়িতেই রয়েছে মন্দির ৷ সেখানে একটি মনসা মূর্তির সঙ্গে দেবী জহুরাচণ্ডীর 11টি মুখা রয়েছে ৷ এই মন্দিরেই একসঙ্গে দেবীর 52 বোন পুজিতা হন । বৈশাখ মাসের প্রতি মঙ্গল ও শনিবার এই পুজোর আয়োজন করা হয় । মানুষের ভিড় উপচে পড়ে মন্দির চত্বর ও বাড়িতে । বৈশাখের শেষ পুজোর দিন খিচুড়ি, সবজি-সহ বিভিন্ন ধরনের ভাজা, লুচি আর পায়েসের ভোগ দেওয়া হয় । আগত ভক্তরা সকলেই ভোগের প্রসাদ গ্রহণ করেন ৷ পাত পড়ে বহু লোকের ৷
মূর্তি তৈরি থেকে শুরু করে পুজোর বাজনা ৷ সবেতেই ছিল বংশ পরম্পরার ছোঁয়া ৷ প্রথম থেকেই পুজোতে ঢাক বাজিয়ে আসছেন রবিদাস পরিবারের সদস্যরা । এই পরিবারের বসবাস ইংরেজবাজার ব্লকের কোতোয়ালি গ্রামে । বর্তমানে ঢাক বাজান ওই পরিবারের সদস্য আনন্দ রবিদাস । বংশ পরম্পরায় দেবীর মুখ তৈরি করে আসছেন পুরাতন বাঁশবাড়ি এলাকার পাল পরিবার । এখন সেই দায়িত্ব পালন করছেন সুকুমার পাল ।
আরও পড়ুন : Tetultala Jagadhatri Puja : শাড়ি পরে পুরুষদের বরণ, 229 বছরের তেঁতুলতলার পুজোয় উপচে পড়ছে ভিড়
53 বছর ধরে দেবী জহুরাচণ্ডীর পুজোয় আসেন কাজল ভট্টাচার্য ৷ তিনিই শোনালেন তাঁর মনোস্কামনা পূর্ণ হওয়ার কাহিনী ৷ সালটা 1969 ৷ তখনকার দিনে স্ত্রীর সন্তান হলে স্বামীর ফের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হত ৷ তেমনই পরিস্থিতির সম্মুখীন হন কাজল দেবী ৷ বিয়ের কয়েক বছর পরেও নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁর স্বামীর অন্য জায়গায় বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় ৷ এমতাবস্থায় দেবী জহুরাচণ্ডীর মাহাত্ম্যের কথা শুনে মন্দিরে এসে সন্তান চেয়ে মানত করেন ৷ এর তিনমাসের মধ্যে সন্তানসম্ভবা হন তিনি এবং স্বামীর বিয়ে আটকান ৷
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে আগত এক ভক্ত অনুপ ঘোষ বলেন, "দেবী মাহাত্ম্য শোনার পর থেকেই পরিবার নিয়ে পুজো দিতে আসি ৷ কোনওরকম চাঁদা নেওয়া হয় না এই পুজোয় ৷ তবুও এত ভক্তের মধ্যে কী করে যে ভোগের খাবার কুলিয়ে যায় তা বুঝতে পারি না ৷"
এই পুজোয় সবকিছু চলে বংশ পরম্পরায়। প্রথম থেকেই পুজোতে ঢাক বাজিয়ে আসছেন রবিদাস পরিবারের সদস্যরা। এই পরিবারের বসবাস ইংরেজবাজার ব্লকের কোতওয়ালি গ্রামে। বর্তমানে ঢাক বাজান ওই পরিবারের সদস্য আনন্দ রবিদাস। বংশ পরম্পরায় দেবীর মুখা তৈরি করে আসছেন পুরাতন বাঁশবাড়ি এলাকার পাল পরিবার। এখন সেই দায়িত্ব পালন করছেন সুকুমার পাল।
আরও পড়ুন : Kali Puja 2021: বিদ্যা ও সুন্দরকে জ্যান্ত বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হয় কালী মন্দিরে, তারপর...