মালদা, 1 জুন : গভীর রাতে লুকিয়ে অন্য মহিলার সঙ্গে ফোনে কথা বলত স্বামী৷ সেই ঘটনা চোখে পড়ে যায় স্ত্রীর৷ স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর পরকীয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি৷ স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করে সে ৷ প্রায়শই এই নিয়ে বচসা লেগে থাকত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ৷ রবিবার রাতেও তাঁদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি বাধে ৷ তখনই তাঁকে মারধর করে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা ৷ সেই আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবতির ৷ এমনটাই অভিযোগ তুলেছে মৃতার বাপের বাড়ির লোকেরা ৷ বৈষ্ণবনগর থানায় স্বামী সহ শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতার পরিবার৷ কালিয়াচকের তিন নম্বর ব্লকের শোভাপুর পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারদেওনাপুর গ্রামের ঘটনা৷ স্বামী ও শ্বশুরকে আটক করেছে পুলিশ৷
মৃতার নাম অঞ্জলি সরকার(৩০)৷ অঞ্জলি বাবার বাড়ি পারদেওনাপুর গ্রামেই ৷ প্রায় 11 বছর আগে ওই গ্রামেরই যুবক সঞ্জয় সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়৷ সঞ্জয় পেশায় শ্রমিক৷ মুলত ভিনরাজ্যে কাজে যায়৷ অঞ্জলি ও সঞ্জয়ের দুটি মেয়েও রয়েছে৷ বড় মেয়েটির বয়স নয় বছর৷ আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র 1 বছর ছয় মাস৷ অঞ্জলির বাবার বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ, দেড় বছর আগে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে যাওয়ার নাম করে সঞ্জয় উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় যায়৷ তারপর থেকে দীর্ঘদিন বাড়ি ফেরেনি সে৷ অঞ্জলি সঞ্জয়কে বাড়ি ফিরে আসতে বললেও সেকথায় কান দেয়নি সঞ্জয়৷ তারপরই স্বামীর মতিগতি দেখে সন্দেহ হয় অঞ্জলির৷ খোঁজখবর নিয়ে সে জানতে পারে, সঞ্জয় উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় রয়েছে৷ সেখানে সে একটি মহিলাকে বিয়েও করেছে৷
অঞ্জলির কাছ থেকে সেকথা শুনে অঞ্জলির বাবার বাড়ির লোকজন সঞ্জয়ের খোঁজে ডালখোলা যায়৷ তবে সেখানে সঞ্জয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ গোটা বিষয়টি তাঁরা সেখানকার এক ক্লাবের সদস্যদের জানায়৷ ওই ক্লাবের সদস্যরাই ডালখোলা পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানায়৷ তারপর লকডাউনের কিছুদিন আগে পুলিশ সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে ৷ কিন্তু লকডাউনের আগে আদালতে জামিন নিয়ে কালিয়াচকের বাড়িতে সঞ্জয়কে ফিরিয়ে নিয়ে আসে সঞ্জয়ের বাবা ধীরেন সরকার৷ বাড়ি ফেরার পরেও ওই মহিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সঞ্জয়ের ৷ এমনটাই অভিযোগ করেছেন অঞ্জলির দাদা উত্তম টিকাদার৷
তিনি বলেন, "বোনের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কিছুদিন পরেই ডালখোলায় সঞ্জয়ের সঙ্গে ওই মহিলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ সে ওই মহিলাকে বিয়েও করে৷ ডালখোলার ওই এলাকার একটি ক্লাবের ছেলেরা ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়৷ তারপরই সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ খবর পেয়ে সঞ্জয়ের বাবা ধীরেন সরকার ছেলের জামিন করায়৷ লকডাউনের আগে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে৷" উত্তমের সেই সঙ্গে দাবি, লকডাউনের মধ্যেও সঞ্জয় ডালখোলায় গিয়েছিল ৷
তিনি আরও জানান, "বাড়ি ফেরার পরও প্রতিদিন সে রাতে ওই মহিলার সঙ্গে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলত৷ একদিন ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সঞ্জয়কে ফোনে কথা বলতে দেখে ফেলে বোন৷ এনিয়ে সঞ্জয়ের সঙ্গে বোনের প্রায়শই ঝামেলা হত৷ মাঝেমধ্যেই বোনকে মারধর করত সঞ্জয়৷ গতকাল রাতে ফের ঝামেলা বাধে সঞ্জয়ের সঙ্গে বোনের ৷ তখনি স্বামীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় বোনকে বুকে লাঠি দিয়ে মেরে খুন করেছে সঞ্জয় ৷ গতকাল রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল৷ তারই মধ্যে সঞ্জয় ফোন করে আমাদের জানায়, অঞ্জলি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে৷ আমরা সেখানে গিয়ে দেখি, উঠোনের মধ্যে অঞ্জলির নিথর দেহ পড়ে রয়েছে৷ সঞ্জয়কে চেপে ধরতেই সে স্বীকার করে, বোনের বুকে লাঠির আঘাত করে সে খুন করেছে৷ তারপর রাতেই আমারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি৷ পুলিশ সঞ্জয় ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে৷"