বেজিং, 18 ডিসেম্বর: পূর্ব লাদাখের গালওয়ান প্রদেশের স্মৃতি এখনও টাটকা ৷ অবশ্য, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা টহলদারি ও মুখোমুখি সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সম্প্রতি মধ্যস্থতায় এসেছে ভারত ও চিন ৷ এই আবহে পাঁচ বছরের বিরতির পর দু'দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে বুধবার চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ৷
গালওয়ান প্রদেশে দু'দেশের সেনা সংঘর্ষে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর বড় প্রভাব পড়ে ৷ দু'দেশের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল বড় আকার নেয় ৷ দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে এই টানাপোড়েনের কারণে দীর্ঘ 5 বছর ধরে বন্ধ ছিল 'স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ' বৈঠক ৷ সেই বৈঠকে 2019-এর পর যোগ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার বেজিং পৌঁছন অজিত দোভালের নেতৃত্বাধীন একটি দল ৷ শেষ 2019 সালে দিল্লিতে হয়েছিল এই বৈঠক ৷ চিনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল 10টা থেকে শুরু হয়েছে এই বৈঠক ৷ বেজিং-এ 23তম 'স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ' বৈঠকে মূলত দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে ৷
উল্লেখ্য, বৈঠকের আগে মঙ্গলবার এই নিয়ে সদর্থক মতামত প্রকাশ করে চিন ৷ সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, "পারস্পরিক আস্থা আরও মজবুত করতে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চিন।" তিনি আরও জানান, দুই দেশের মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দ্রুত স্থিতিশীল করতে আগ্রহী বেজিং ৷
প্রসঙ্গত, পূর্ব লাদাখে 'লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল' বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর 2020 সালের মে মাস থেকে ভারত-চিন সেনার মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ৷ সেই বছরের জুন মাসে রীতিমতো হাতাহাতি জড়িয়ে পড়ে দুই দেশের সেনা জওয়ানরা ৷ সেই ঘটনার পর ভারত-চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চরমে পৌঁছয় ৷
এই আবহে 24 অক্টোবর ব্রিকস্-এর সম্মেলন চলাকালীন পার্শ্ব বৈঠক সারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৷ বৈঠকের পর পরিস্থিতিতে খানিক পরিবর্তন আসে ৷ এরপর ব্রাজিলে আয়োজিত জি-20 সম্মেলনের সময় পার্শ্ব বৈঠক করেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ৷ সেই বৈঠকের পর দুই দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সমস্যা প্রসঙ্গে সমঝোতায় এসেছে নয়াদিল্লি ও বেজিং ৷
উল্লেখ্য়, 'স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ' বৈঠকে এই প্রথম সীমান্ত সমস্যা নিয়ে বিশ্লেষক আলোচনায় বসেছে ভারত ও চিন ৷ ফলে, এবারের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে বিশেষজ্ঞ মহলের ৷ দুই দেশের 3 হাজার 488 কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্তের একাধিক সমস্যা প্রসঙ্গে আলোচনার জন্য 2003 সালে এই বৈঠকের সূচনা ৷ এখনও পর্যন্ত মোট 22বার বৈঠক হয়েছে ৷ সীমান্ত সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এই বৈঠকই বিশ্লেষণ ভিত্তিক আলোচনার একমাত্র ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয় দুই দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে ৷