ETV Bharat / state

বিদেশে রফতানির লক্ষ্যে মালদায় তৈরি হল অত্যাধুনিক মধু গবেষণাগার

Malda Honey Research Centre: বিশ্বখ্যাত আমের পর এবার মালদার মধু বিদেশযাত্রা করতে চলেছে ৷ সেই পথ সুগম করতেই মালদায় তৈরি হল অত্যাধুনিক মধু গবেষণাগার ৷ এর জন্য কী সুবিধা হবে মধুচাষিদের ? জানতে পড়ুন সমগ্র প্রতিবেদন ৷

Etv Bharat
মালদার মধুর বিদেশযাত্রার সম্ভাবনা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 26, 2023, 4:55 PM IST

মালদায় তৈরি হল অত্যাধুনিক মধু গবেষণাগার

মালদা, 26 নভেম্বর: মালদা জেলার মধুচাষিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল লখনউয়ের সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ফর সাবট্রপিক্যাল হর্টিকালচার (সিআইএসএইচ) ৷ এই সংস্থার সাহায্যে মালদা শাখায় তৈরি করা হল অত্যাধুনিক গবেষণাগার ৷ শনিবার সংস্থার মালদা শাখায় এই ল্যাবরেটরি ভবনের সূচনা করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের (আইসিএআর) ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ হিমাংশু পাঠক ৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মালদা শাখার ইনচার্জ-সহ দুই সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরা ৷ এদিন মধু ও আম-সহ বিভিন্ন ফলের চাষিদের নিয়ে একটি সম্মেলনও করা হয় ৷

সিআইএসএইচ-এর সিনিয়র বিজ্ঞানী তথা মালদা শাখার ইনচার্জ ড. দীপক নায়েক বলেন, "শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিআইএসএইচ-এর এমন বহুমুখী রিজিওনাল স্টেশন একমাত্র মালদা জেলায় রয়েছে ৷ আজ এখানে নতুন ফেসিলিটি ক্যাম্পাসের উদ্বোধন হল ৷ এতে আমরাও আরও বেশি রিসার্চের কাজ করতে পারব ৷ উন্নতমানের কৃষি, উন্নতমানের ফসল, তার গুণমান পরীক্ষা এবং বাজারজাত করা, এসব কাজ এখান থেকে করা হবে ৷ তার জন্য আমরা রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও সাহায্য নেব ৷ এখান থেকে হাজার হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য ৷ আম ও মধুচাষিরা কীভাবে চাষ করবেন, কীভাবে ভালো ফসল পাবেন, ফসল কীভাবে বাজারজাত করবেন, সবকিছুই তাঁদের শেখানো হবে ৷"

সিআইএসএইচ-এর ডিরেক্টর ডঃ দামোদরন টি বলেন, "মালদা এই অঞ্চলের মধুর হাব হিসাবে পরিচিত ৷ এখানে প্রায় 800 জন মধুচাষি রয়েছেন ৷ তাঁদের উৎপাদিত মধু যাতে ভালো দামে বাইরে বিক্রি করা যায়, তার জন্য অথরাইজড ল্যাবরেটরির অনুমোদন লাগে ৷ এখানে সেই ল্যাবরেটরির উদ্বোধন হল ৷ মধুচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত মধু এখানে পরীক্ষা করিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে পারবেন ৷ মধুচাষিদের জন্য ব্লক চেন টেকনোলজির ব্যবস্থাও করা হয়েছে ৷ এতে তাঁরা মধুর ভালো দাম পাবেন ৷"

তিনি আরও বলেন, "মালদা আর মুর্শিদাবাদের আম বিশ্বখ্যাত ৷ কিন্তু আমচাষিদের বড় সমস্যা বিদেশের বাজার ধরা ৷ তাঁরা এখানে পাঁচ থেকে 10 টাকা কিলো দরে আম বিক্রি করেন ৷ আমরা চাই, তাঁদের আম অন্তত 50 টাকা কিলো দরে বিক্রি হোক ৷ আমরা সংস্থার তরফে তাঁদের মার্কেটিং চেন তৈরির চেষ্টা করছি ৷ আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখানকার 50 জন বড় আমচাষিকে আমরা দত্তক নেব ৷ অ্যাফেডাতে তাঁদের নাম রেজিস্ট্রেশন করানো হবে ৷ চাষের শুরু থেকে ফসলের প্যাকিং পর্যন্ত তাঁদের সহায়তা করে তাঁদের উৎপাদিত আম বিভিন্ন দেশে রফতানি করানো হবে ৷ এই কাজে আর্থিক-সহ সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আইসিএআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল ৷

আমের রফতানির ক্ষেত্রে একেকটি দেশের একেক নিয়ম ৷ ইউরোপের দেশগুলি হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ছাড়া অন্য দেশের আম আমদানি করে না ৷ আমে কত পরিমাণ কীটনাশক রয়েছে, তার ল্যাবরেটরি রিপোর্ট প্রয়োজন ৷ সমস্যা হল, যেখানে দু'বার কীটনাশক প্রয়োগ করলেই কাজ হয় সেখানে কৃষকরা পাঁচবার তা প্রয়োগ করে থাকেন ৷ সেই আম ইউরোপের কোনও দেশ নেবে না ৷ আমরা এসব নিয়ে চাষিদের বারবার সতর্ক করি ৷ আমরা মালদা আর মুর্শিদাবাদের আম বিদেশে পাঠাতে উৎসুক ৷ তার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে চিহ্নিত করেছি ৷ বিমানযোগে নয়, সমুদ্রে আম পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে ৷ 17 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আম বিদেশে পাঠাতে হবে ৷ প্রাথমিকভাবে আমরা আগামী মরশুমে 10 টন আম রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছি ৷ সফল হলে আগামী 3-4 বছরের মধ্যে এখান থেকে অন্তত 100 টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে ৷"

আরও পড়ুন :

1 সরকারি উদ্যোগে মৌমাছি চাষ, মুখে হাসি ফুটছে সুন্দরবনের মউলেদের

2 কোরোনা-লকডাউনে জেরবার মালদার মধু চাষিরা, ক্ষতি 6 কোটি টাকার বেশি

3 জাপানের মিয়াজাকি থেকে থাইল্যান্ডের পালমার, এখন এরাজ্যেও ফলছে বহুমূল্যের আম

মালদায় তৈরি হল অত্যাধুনিক মধু গবেষণাগার

মালদা, 26 নভেম্বর: মালদা জেলার মধুচাষিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল লখনউয়ের সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট ফর সাবট্রপিক্যাল হর্টিকালচার (সিআইএসএইচ) ৷ এই সংস্থার সাহায্যে মালদা শাখায় তৈরি করা হল অত্যাধুনিক গবেষণাগার ৷ শনিবার সংস্থার মালদা শাখায় এই ল্যাবরেটরি ভবনের সূচনা করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের (আইসিএআর) ডিরেক্টর জেনারেল ডঃ হিমাংশু পাঠক ৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মালদা শাখার ইনচার্জ-সহ দুই সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরা ৷ এদিন মধু ও আম-সহ বিভিন্ন ফলের চাষিদের নিয়ে একটি সম্মেলনও করা হয় ৷

সিআইএসএইচ-এর সিনিয়র বিজ্ঞানী তথা মালদা শাখার ইনচার্জ ড. দীপক নায়েক বলেন, "শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলে সিআইএসএইচ-এর এমন বহুমুখী রিজিওনাল স্টেশন একমাত্র মালদা জেলায় রয়েছে ৷ আজ এখানে নতুন ফেসিলিটি ক্যাম্পাসের উদ্বোধন হল ৷ এতে আমরাও আরও বেশি রিসার্চের কাজ করতে পারব ৷ উন্নতমানের কৃষি, উন্নতমানের ফসল, তার গুণমান পরীক্ষা এবং বাজারজাত করা, এসব কাজ এখান থেকে করা হবে ৷ তার জন্য আমরা রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও সাহায্য নেব ৷ এখান থেকে হাজার হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য ৷ আম ও মধুচাষিরা কীভাবে চাষ করবেন, কীভাবে ভালো ফসল পাবেন, ফসল কীভাবে বাজারজাত করবেন, সবকিছুই তাঁদের শেখানো হবে ৷"

সিআইএসএইচ-এর ডিরেক্টর ডঃ দামোদরন টি বলেন, "মালদা এই অঞ্চলের মধুর হাব হিসাবে পরিচিত ৷ এখানে প্রায় 800 জন মধুচাষি রয়েছেন ৷ তাঁদের উৎপাদিত মধু যাতে ভালো দামে বাইরে বিক্রি করা যায়, তার জন্য অথরাইজড ল্যাবরেটরির অনুমোদন লাগে ৷ এখানে সেই ল্যাবরেটরির উদ্বোধন হল ৷ মধুচাষিরা তাঁদের উৎপাদিত মধু এখানে পরীক্ষা করিয়ে বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে পারবেন ৷ মধুচাষিদের জন্য ব্লক চেন টেকনোলজির ব্যবস্থাও করা হয়েছে ৷ এতে তাঁরা মধুর ভালো দাম পাবেন ৷"

তিনি আরও বলেন, "মালদা আর মুর্শিদাবাদের আম বিশ্বখ্যাত ৷ কিন্তু আমচাষিদের বড় সমস্যা বিদেশের বাজার ধরা ৷ তাঁরা এখানে পাঁচ থেকে 10 টাকা কিলো দরে আম বিক্রি করেন ৷ আমরা চাই, তাঁদের আম অন্তত 50 টাকা কিলো দরে বিক্রি হোক ৷ আমরা সংস্থার তরফে তাঁদের মার্কেটিং চেন তৈরির চেষ্টা করছি ৷ আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখানকার 50 জন বড় আমচাষিকে আমরা দত্তক নেব ৷ অ্যাফেডাতে তাঁদের নাম রেজিস্ট্রেশন করানো হবে ৷ চাষের শুরু থেকে ফসলের প্যাকিং পর্যন্ত তাঁদের সহায়তা করে তাঁদের উৎপাদিত আম বিভিন্ন দেশে রফতানি করানো হবে ৷ এই কাজে আর্থিক-সহ সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন আইসিএআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল ৷

আমের রফতানির ক্ষেত্রে একেকটি দেশের একেক নিয়ম ৷ ইউরোপের দেশগুলি হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ছাড়া অন্য দেশের আম আমদানি করে না ৷ আমে কত পরিমাণ কীটনাশক রয়েছে, তার ল্যাবরেটরি রিপোর্ট প্রয়োজন ৷ সমস্যা হল, যেখানে দু'বার কীটনাশক প্রয়োগ করলেই কাজ হয় সেখানে কৃষকরা পাঁচবার তা প্রয়োগ করে থাকেন ৷ সেই আম ইউরোপের কোনও দেশ নেবে না ৷ আমরা এসব নিয়ে চাষিদের বারবার সতর্ক করি ৷ আমরা মালদা আর মুর্শিদাবাদের আম বিদেশে পাঠাতে উৎসুক ৷ তার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে চিহ্নিত করেছি ৷ বিমানযোগে নয়, সমুদ্রে আম পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে ৷ 17 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আম বিদেশে পাঠাতে হবে ৷ প্রাথমিকভাবে আমরা আগামী মরশুমে 10 টন আম রফতানি করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছি ৷ সফল হলে আগামী 3-4 বছরের মধ্যে এখান থেকে অন্তত 100 টন আম বিদেশে রফতানি করা হবে ৷"

আরও পড়ুন :

1 সরকারি উদ্যোগে মৌমাছি চাষ, মুখে হাসি ফুটছে সুন্দরবনের মউলেদের

2 কোরোনা-লকডাউনে জেরবার মালদার মধু চাষিরা, ক্ষতি 6 কোটি টাকার বেশি

3 জাপানের মিয়াজাকি থেকে থাইল্যান্ডের পালমার, এখন এরাজ্যেও ফলছে বহুমূল্যের আম

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.