ETV Bharat / state

Durga Puja Special : ইন্দো-বাংলা সীমান্তে জমিদারবাড়িতে একইসঙ্গে পুজো হয় সোনা ও মাটির দুর্গার

মালদা শহর থেকে 36 কিমি দূরে হবিবপুর ব্লকে অবস্থিত জমিদারবাড়ির পুজো এবার 221 বছরে পা দেবে ৷ সেখানে একইসঙ্গে পূজিত হন সোনার দুর্গা ও মাটির দুর্গা ৷ কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই পুজোর ? জমিদারবাড়ি ঘুরে সেই কাহিনী জানল ইটিভি ভারত ৷

author img

By

Published : Sep 28, 2021, 4:17 PM IST

পুজো
পুজো

মালদা, 28 সেপ্টেম্বর : দীর্ঘদিন আগের কথা । নদীমাতৃক বাংলায় তখন মূলত নৌপথেই যাতায়াত চলত । নদীতে বজরা ভাসিয়ে বাণিজ্যে বেরোতেন বণিকরা । সেভাবেই ডাল ভর্তি বজরা নিয়ে গঙ্গায় ভেসেছিলেন অধুনা উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলার সোনারি গ্রামের বাসিন্দা অবোধনারায়ণ রায় । বড় ব্যবসায়ী । গন্তব্য ছিল এখনকার কলকাতা সংলগ্ন কোনও এলাকা । গঙ্গা দিয়ে শুরু, বজরা ভেসে চলত বিভিন্ন নদী ধরে । যাত্রাপথে পড়ত পুনর্ভবা নদী । এই পথেই দীর্ঘদিন বাণিজ্য করেছেন তিনি । সতেরো শতাব্দীর শেষভাগে এভাবেই সোনারি থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে তিনি তৎকালীন দিনাজপুর দিয়ে পুনর্ভবায় ভেসে যাওয়ার সময় খবর পান দিনাজপুরের রাজার মৃত্যু হয়েছে । স্বামীর মৃত্যুর পর রানি ইংরেজদের খাজনা দিতে না পারায় দিনাজপুরের কিছু অংশ ইংরেজরা নিলাম করে দিচ্ছে । অনেক ভেবেচিন্তে নিলামে অংশ নেন অবোধনারায়ণ । তিন হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নেন রাজদৈল নামে একটি মৌজা । সেই রাজদৈল মৌজা থেকেই শুরু হয় রায়বংশের জমিদারি ।

আরও পড়ুন : Ganesh puja : গণেশ কোলে দেবী দুর্গা রূপী মমতা, কটাক্ষ বিজেপির

প্রায় 250 বছর আগে রাজদৈল মৌজা নিলামে কিনেছিলেন অবোধনারায়ণ । এরপর ধীরে ধীরে তিনি নিজের জমিদারি বৃদ্ধিতে মন দেন । যদিও তখন পুরোপুরি উত্তরপ্রদেশের সংশ্রব ত্যাগ করেননি তিনি । সেখানে বসেই নিজের জমিদারি চালাতেন । কখনও বা আসতেন রাজদৈলে । ধীরে ধীরে আরও কিছু মৌজা কিনে নেন অবোধনারায়ণ । এরপর তিনি স্থায়ীভাবে বঙ্গদেশে বসবাস শুরু করলে তাঁর ছেলে শিবপ্রসাদ রায়ও জমিদারি বৃদ্ধিতে মন দেন ।

তবে জমিদারি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় শিবপ্রসাদের ছেলে ভৈরবেন্দ্রনারায়ণ রায়ের আমলে । তাঁর চেষ্টায় রায়বংশের জমিদারিতে অন্তর্ভুক্ত হয় 52টি মৌজা । এই সময়কালের মধ্যে পুনর্ভবা দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক । স্বাধীন হয়েছে দেশ । ইংরেজরা এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে । তার আগে হয়েছে দেশ বিভাজন । রায়বংশের জমিদারির প্রায় 75 শতাংশ এলাকাই চলে গিয়েছে বাংলাদেশে । এই বাংলায় এখনও যেটুকু সম্পত্তি রয়েছে, তার সবই মালদা শহর থেকে 36 কিলোমিটার দূরে, হবিবপুর ব্লকের ধুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিলাশন গ্রামে ।

আরও পড়ুন : Malda Priest : সরকারি ভাতা না পেলে দুর্গাপুজো করবেন না পুরোহিতরা, উদ্যোক্তাদের কপালে ভাঁজ

জমিদার শিবপ্রসাদ রায়ের আমলে রায় পরিবারে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় । এই বংশের কুলদেবী দুর্গা । স্বর্ণ নির্মিত কুলদেবী দুর্গাকে উত্তরপ্রদেশ থেকে এনে তাঁর প্রাসাদের মধ্যে তৈরি মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত করেন শিবপ্রসাদ । সেটা 1800 সাল । একইসঙ্গে জমিদারবাড়িতে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিরও পুজো শুরু হয় তখন থেকেই । একইসঙ্গে দুই দুর্গার পুজো হয় রায়বাড়িতে ।

একচালার প্রতিমায় শুরু হওয়া সেই পুজো এবার 221 বছরে পা দিচ্ছে । আদিবাসী অধ্যুষিত তিলাশন গ্রামের এই পুজো গ্রামবাসীদের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে । এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোয় মেতে ওঠেন ৷

সীমান্তের কাঁটাতার এই পুজোর প্রাচীন রীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বলে জানালেন রাকেশকুমার রায় । অবোধনারায়ণের নবম পুরুষ । তিনি বলেন, "এবার আমাদের পুজো 221 বছরে পা দিচ্ছে । করোনার জন্য গতবার কোনওরকমে পুজো হয়েছে । আশা করছি, এবার পরিস্থিতি অনেক ভাল থাকবে । মানুষও চাইছেন, এবার দুর্গাপুজো ভালভাবে হোক । এলাকাবাসী জমিদারবাড়ির পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন । অনেক দূর থেকেও এই পুজো দেখতে আসেন অনেকে । সপ্তমীর দিন পুনর্ভবা নদী থেকে জল ভরে মায়ের ঘট স্থাপন করা হয় । পরম্পরা মেনে ঘটে জল ভরার সময় শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়া হত । গত বছর পর্যন্ত সেই রীতি মানা হয়েছে । কিন্তু এখন পুনর্ভবা যেতে গেলে কাঁটাতারের ওপারে যেতে হয় । বেড়ার ওপারে বন্দুক নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সমস্যা হচ্ছে । তাই এবার হয়তো শূন্যে গুলি চালানো যাবে না । তবু আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ।"

আরও পড়ুন : Durga puja : এবছর দেবীর কোন বাহনে আগমন ও গমন? জেনে নিন কি প্রভাব পড়তে চলেছে মানব জীবনে

রাকেশবাবু বলেন, "প্রায় 250 বছর আগে আমাদের জমিদারির পত্তনের সময় বাড়ির ভিত তৈরি করে একটি মন্দিরের গর্ভগৃহে কুলদেবীকে স্থাপন করা হয়েছিল । সোনার তৈরি ছোট সেই মাতৃমূর্তিকে প্রতিদিন পুজো করা হয় । পরিবারের সদস্যরাই শুধু সেখানে যেতে পারেন । এমনকি পরিবারের বিবাহিত মেয়েরাও সেখানে ঢুকতে পারে না । কারণ, বিয়ের পর তারা আর আমাদের বংশের থাকে না, অন্য বংশের হয়ে যায় । কুলদেবীর পুজোর পর মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো হয় । পুজোয় এখানে প্রতিদিনই আদিবাসীদের সমাগম হয় । বিশেষ করে দশমীতে আমরা তাদের জন্য খিচুড়ি ভোগের ব্যবস্থা রাখি । কার্ড দিয়ে তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয় । অন্যান্যদেরও আমরা কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করি । অষ্টমী ও নবমী তিথিতে আমন্ত্রিতদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় । বিনা নিমন্ত্রিতদেরও অন্নভোগের আয়োজন রাখা হয় । দশমীতে বড় মেলা বসে । আগে পুনর্ভবাতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত । কিন্তু নদী কাঁটাতারের ওপারে থাকায় রাতে গেট খোলা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় । তাই বাড়ির পিছনে পুকুরে মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় ।"

আরও পড়ুন : Durga Puja Special : রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত পুজো এবার 351 বছরে পা দিল

জমিদারবাড়িতে বংশানুক্রমে পুজো করে আসছেন মিশ্র পরিবারের সদস্যরা । বর্তমান পুরোহিত পূর্ণেন্দুশেখর মিশ্র বলেন, "আমার ঠাকুরদাও এই পরিবারের পুজো করতেন । দরিদ্রসেবা এই পরিবারের দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য । এখানে একইসঙ্গে দুটি পুজো হয় । তার জন্য ছ’জন ব্রাহ্মণ রয়েছেন । সঙ্গে তাঁদের সহযোগীরাও আছেন । এই পরিবারের কুলদেবতা দেবী দুর্গা । তাঁর সোনার মূর্তি গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত । তাঁর নিত্যসেবা করা হয় । এই দুর্গাপুজোর সময় একসঙ্গেই দুই মূর্তির পুজো হয় ।"

একসময় শুধু তিলাশন নয়, আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে একমাত্র দুর্গাপুজো হত জমিদারবাড়িতেই । কিন্তু কালের নিয়মে এলাকায় পুজো বেড়েছে । তিলাশন গ্রামেই এখন পাঁচটি দুর্গাপুজো হয় । এই বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস দেবনাথ বলেন, "এই গ্রামে পাঁচটি পুজো হলেও জমিদারবাড়ির পুজোই সবচেয়ে পুরোনো । গ্রামের সবাই এই পুজোয় অংশ নেন । আমরাও পুজোর চারদিন এখানে আসি । সবাই আনন্দ করি । আনন্দে সামিল হয় আদিবাসীরাও । পুজোর প্রতিটি দিন আমরা এখানেই অন্নভোগ খাই ।"

আরও পড়ুন : Durga Puja : পীরের মাজারে ধ্বজা উড়িয়ে শুরু হয় চূড়ামণ রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা

মালদা, 28 সেপ্টেম্বর : দীর্ঘদিন আগের কথা । নদীমাতৃক বাংলায় তখন মূলত নৌপথেই যাতায়াত চলত । নদীতে বজরা ভাসিয়ে বাণিজ্যে বেরোতেন বণিকরা । সেভাবেই ডাল ভর্তি বজরা নিয়ে গঙ্গায় ভেসেছিলেন অধুনা উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলার সোনারি গ্রামের বাসিন্দা অবোধনারায়ণ রায় । বড় ব্যবসায়ী । গন্তব্য ছিল এখনকার কলকাতা সংলগ্ন কোনও এলাকা । গঙ্গা দিয়ে শুরু, বজরা ভেসে চলত বিভিন্ন নদী ধরে । যাত্রাপথে পড়ত পুনর্ভবা নদী । এই পথেই দীর্ঘদিন বাণিজ্য করেছেন তিনি । সতেরো শতাব্দীর শেষভাগে এভাবেই সোনারি থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে তিনি তৎকালীন দিনাজপুর দিয়ে পুনর্ভবায় ভেসে যাওয়ার সময় খবর পান দিনাজপুরের রাজার মৃত্যু হয়েছে । স্বামীর মৃত্যুর পর রানি ইংরেজদের খাজনা দিতে না পারায় দিনাজপুরের কিছু অংশ ইংরেজরা নিলাম করে দিচ্ছে । অনেক ভেবেচিন্তে নিলামে অংশ নেন অবোধনারায়ণ । তিন হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নেন রাজদৈল নামে একটি মৌজা । সেই রাজদৈল মৌজা থেকেই শুরু হয় রায়বংশের জমিদারি ।

আরও পড়ুন : Ganesh puja : গণেশ কোলে দেবী দুর্গা রূপী মমতা, কটাক্ষ বিজেপির

প্রায় 250 বছর আগে রাজদৈল মৌজা নিলামে কিনেছিলেন অবোধনারায়ণ । এরপর ধীরে ধীরে তিনি নিজের জমিদারি বৃদ্ধিতে মন দেন । যদিও তখন পুরোপুরি উত্তরপ্রদেশের সংশ্রব ত্যাগ করেননি তিনি । সেখানে বসেই নিজের জমিদারি চালাতেন । কখনও বা আসতেন রাজদৈলে । ধীরে ধীরে আরও কিছু মৌজা কিনে নেন অবোধনারায়ণ । এরপর তিনি স্থায়ীভাবে বঙ্গদেশে বসবাস শুরু করলে তাঁর ছেলে শিবপ্রসাদ রায়ও জমিদারি বৃদ্ধিতে মন দেন ।

তবে জমিদারি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় শিবপ্রসাদের ছেলে ভৈরবেন্দ্রনারায়ণ রায়ের আমলে । তাঁর চেষ্টায় রায়বংশের জমিদারিতে অন্তর্ভুক্ত হয় 52টি মৌজা । এই সময়কালের মধ্যে পুনর্ভবা দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক । স্বাধীন হয়েছে দেশ । ইংরেজরা এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছে । তার আগে হয়েছে দেশ বিভাজন । রায়বংশের জমিদারির প্রায় 75 শতাংশ এলাকাই চলে গিয়েছে বাংলাদেশে । এই বাংলায় এখনও যেটুকু সম্পত্তি রয়েছে, তার সবই মালদা শহর থেকে 36 কিলোমিটার দূরে, হবিবপুর ব্লকের ধুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিলাশন গ্রামে ।

আরও পড়ুন : Malda Priest : সরকারি ভাতা না পেলে দুর্গাপুজো করবেন না পুরোহিতরা, উদ্যোক্তাদের কপালে ভাঁজ

জমিদার শিবপ্রসাদ রায়ের আমলে রায় পরিবারে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় । এই বংশের কুলদেবী দুর্গা । স্বর্ণ নির্মিত কুলদেবী দুর্গাকে উত্তরপ্রদেশ থেকে এনে তাঁর প্রাসাদের মধ্যে তৈরি মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত করেন শিবপ্রসাদ । সেটা 1800 সাল । একইসঙ্গে জমিদারবাড়িতে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিরও পুজো শুরু হয় তখন থেকেই । একইসঙ্গে দুই দুর্গার পুজো হয় রায়বাড়িতে ।

একচালার প্রতিমায় শুরু হওয়া সেই পুজো এবার 221 বছরে পা দিচ্ছে । আদিবাসী অধ্যুষিত তিলাশন গ্রামের এই পুজো গ্রামবাসীদের কাছে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে । এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এই পুজোয় মেতে ওঠেন ৷

সীমান্তের কাঁটাতার এই পুজোর প্রাচীন রীতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বলে জানালেন রাকেশকুমার রায় । অবোধনারায়ণের নবম পুরুষ । তিনি বলেন, "এবার আমাদের পুজো 221 বছরে পা দিচ্ছে । করোনার জন্য গতবার কোনওরকমে পুজো হয়েছে । আশা করছি, এবার পরিস্থিতি অনেক ভাল থাকবে । মানুষও চাইছেন, এবার দুর্গাপুজো ভালভাবে হোক । এলাকাবাসী জমিদারবাড়ির পুজোকে নিজেদের পুজো বলেই মনে করেন । অনেক দূর থেকেও এই পুজো দেখতে আসেন অনেকে । সপ্তমীর দিন পুনর্ভবা নদী থেকে জল ভরে মায়ের ঘট স্থাপন করা হয় । পরম্পরা মেনে ঘটে জল ভরার সময় শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়া হত । গত বছর পর্যন্ত সেই রীতি মানা হয়েছে । কিন্তু এখন পুনর্ভবা যেতে গেলে কাঁটাতারের ওপারে যেতে হয় । বেড়ার ওপারে বন্দুক নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কিছু সমস্যা হচ্ছে । তাই এবার হয়তো শূন্যে গুলি চালানো যাবে না । তবু আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি ।"

আরও পড়ুন : Durga puja : এবছর দেবীর কোন বাহনে আগমন ও গমন? জেনে নিন কি প্রভাব পড়তে চলেছে মানব জীবনে

রাকেশবাবু বলেন, "প্রায় 250 বছর আগে আমাদের জমিদারির পত্তনের সময় বাড়ির ভিত তৈরি করে একটি মন্দিরের গর্ভগৃহে কুলদেবীকে স্থাপন করা হয়েছিল । সোনার তৈরি ছোট সেই মাতৃমূর্তিকে প্রতিদিন পুজো করা হয় । পরিবারের সদস্যরাই শুধু সেখানে যেতে পারেন । এমনকি পরিবারের বিবাহিত মেয়েরাও সেখানে ঢুকতে পারে না । কারণ, বিয়ের পর তারা আর আমাদের বংশের থাকে না, অন্য বংশের হয়ে যায় । কুলদেবীর পুজোর পর মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির পুজো হয় । পুজোয় এখানে প্রতিদিনই আদিবাসীদের সমাগম হয় । বিশেষ করে দশমীতে আমরা তাদের জন্য খিচুড়ি ভোগের ব্যবস্থা রাখি । কার্ড দিয়ে তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয় । অন্যান্যদেরও আমরা কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করি । অষ্টমী ও নবমী তিথিতে আমন্ত্রিতদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় । বিনা নিমন্ত্রিতদেরও অন্নভোগের আয়োজন রাখা হয় । দশমীতে বড় মেলা বসে । আগে পুনর্ভবাতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত । কিন্তু নদী কাঁটাতারের ওপারে থাকায় রাতে গেট খোলা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় । তাই বাড়ির পিছনে পুকুরে মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় ।"

আরও পড়ুন : Durga Puja Special : রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত পুজো এবার 351 বছরে পা দিল

জমিদারবাড়িতে বংশানুক্রমে পুজো করে আসছেন মিশ্র পরিবারের সদস্যরা । বর্তমান পুরোহিত পূর্ণেন্দুশেখর মিশ্র বলেন, "আমার ঠাকুরদাও এই পরিবারের পুজো করতেন । দরিদ্রসেবা এই পরিবারের দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য । এখানে একইসঙ্গে দুটি পুজো হয় । তার জন্য ছ’জন ব্রাহ্মণ রয়েছেন । সঙ্গে তাঁদের সহযোগীরাও আছেন । এই পরিবারের কুলদেবতা দেবী দুর্গা । তাঁর সোনার মূর্তি গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত । তাঁর নিত্যসেবা করা হয় । এই দুর্গাপুজোর সময় একসঙ্গেই দুই মূর্তির পুজো হয় ।"

একসময় শুধু তিলাশন নয়, আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে একমাত্র দুর্গাপুজো হত জমিদারবাড়িতেই । কিন্তু কালের নিয়মে এলাকায় পুজো বেড়েছে । তিলাশন গ্রামেই এখন পাঁচটি দুর্গাপুজো হয় । এই বিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস দেবনাথ বলেন, "এই গ্রামে পাঁচটি পুজো হলেও জমিদারবাড়ির পুজোই সবচেয়ে পুরোনো । গ্রামের সবাই এই পুজোয় অংশ নেন । আমরাও পুজোর চারদিন এখানে আসি । সবাই আনন্দ করি । আনন্দে সামিল হয় আদিবাসীরাও । পুজোর প্রতিটি দিন আমরা এখানেই অন্নভোগ খাই ।"

আরও পড়ুন : Durga Puja : পীরের মাজারে ধ্বজা উড়িয়ে শুরু হয় চূড়ামণ রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.