মালদা, 18 এপ্রিল: কোরোনা আতঙ্কের এই সময়ে যে কোনও মৃত্যুকেই সন্দেহের চোখে দেখছে সমাজ৷ উঠছে হাজারও প্রশ্ন। শনিবার মালদার জেলার এক কিশোরীর মৃ্ত্যু নিয়েও রহস্য দানা বাঁধল। আজ যখন মহানন্দা নদীর ধারে ওই কিশোরীর মৃতদেহ কবর দিচ্ছিল পরিবারের সদস্যরা৷ এমনকী কবর দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল ৷ তার আগে জানাজানি হয় যে, ওই কিশোরী জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল৷ এমনকী, সে গত কয়েকদিন মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি ছিল বলেও জানা যায়। এরপরেই গ্রামবাসীরা ওই কিশোরীর বাড়ির লোকজনকে আটকে রেখে স্থানীয় থানায় খবর দেয়৷ ঘটনাস্থানে আসে পুলিশ। পুলিশই মৃতদেহটি কবর থেকে তুলে সৎকারের জন্য নিয়ে যায় সাদুল্লাপুর শ্মশানে৷ সেখানেই শেষকার্য সম্পন্ন হয়।
মৃতা কিশোরীর নাম মিলি মণ্ডল৷ বয়স 11 বছর৷ বাড়ি ইংরেজবাজার পৌরসভার 23 নম্বর ওয়ার্ডের নরসিংহ কুপ্পা এলাকায়৷ বাবা সঞ্জিত মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতে কিশোরীর কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলেও গত রবিবার বিকেলে সে খেলতে খেলতে বাড়ি চলে আসে ৷ সন্ধে থেকেই জ্বর হয় তার৷ এইসঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট৷ এরপরই তাকে মালদা মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চেকাআপের পর তাকে ভরতি করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু, দিনের পর দিন শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে কিশোরীর৷ অবশেষে আজ ভোর সাড়ে 4টে নাগাদ মারা যায় সে৷ এদিকে, মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে দেওয়া ওই কিশোরীর ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দিন সাতেক মালদা মেডিকেলে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভরতি থাকার পরও কেন কিশোরীর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা হল না? এদিকে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মালদা মেডিকেলের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে মৃগীরোগ ৷ যদিও, পরিবারের দাবি, মৃত কিশোরীর কোনওদিন মৃগী রোগ ছিল না৷
মৃতার আত্মীয় ছেদন মণ্ডল বলেন, "এগারো বছরের মেয়ে বলেই পরিবারের রীতি অনুযায়ী মৃতদেহ কবর দিই নিমাসরাই এলাকায় মহানন্দার ধারে৷ কিন্তু সেখানকার লোকজন আমাদের বাধা দেয়৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে কবর থেকে মৃতদেহ তুলে সাদুল্লাপুর শ্মশানে সৎকারের ব্যবস্থা করে৷”
এই বিষয়ে নিমাসরাইয়ের বাসিন্দা গোবিন্দ হালদার বলেন, “রাজ্যে কোরোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে৷ লোক মরছে ৷ আমরা ভয়ে রয়েছি ৷ এরই মধ্যে দুপুরে শুনতে পাই, মহানন্দার ধারে রেলব্রিজের পাশে এক কিশোরীর দেহ কবর দেওয়া হচ্ছে ৷ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যাই৷ কবরে বাধা দিই। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে কবর খুঁড়ে দেহ তুলে নিয়ে যায়৷“
এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷