মালদা, 7 জানুয়ারি : ছেলেমেয়ে নেই ৷ লকডাউনে মারা গিয়েছেন স্বামী ৷ গরিব স্বামী বিষয় সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি ৷ সম্বল বলতে একটি নড়বড়ে গোয়ালঘর আর দুটো গোরু ৷ আমফানে সেই গোয়ালঘর আরও নড়বড়ে হয়েছে ৷ প্রতিদিন ভাত জোটে না ৷ পড়শিরা খেতে দিলে পেটে কিছু পড়ে ৷ তবু, সরকারি সহায্য পাননি অসহায় বৃদ্ধা ৷ "দুয়ারে সরকার" কী জিনিস জানেন না চাঁচল 1 ব্লকের ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কালীগঞ্জ গ্রামের সত্তরোধর্ব চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য অবশ্য দাবি করছেন, চিত্রাদেবী সরকারি প্রকল্পে ঘর পাবেন ৷ অন্য সরকারি সাহায্যও পাবেন ৷ স্বামীর মৃত্যুতে দাহকাজের জন্য "সমব্যথী" প্রকল্পের দু’হাজার টাকা আজও যিনি পাননি, তিনি আগামীতে সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুবিধে কীভাবে, কবে পাবেন বুঝতে পারছেন না চিত্রাদেবী ৷ তাঁর প্রশ্ন, ততদিন বেঁচে থাকব তো?
আরও পড়ুন: রাতের অন্ধকারে বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেল ছেলেরা
চিত্রাদেবীর স্বামী প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসক ৷ আয় ছিল সামান্যই ৷ সন্তানহীন দম্পতির নিকট আত্মীয়স্বজনও নেই ৷ লকডাউনের মধ্যে হঠাৎই একদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রবীরবাবুর ৷ জমানো সামান্য টাকা দিয়ে দুটো গোরু, দুটো ছাগল কেনেন চিত্রাদেবী ৷ গোরুর দুধ বিক্রি করে পেট চালাতে শুরু করেন ৷ কিছুদিন পর গোরু দুধ দেওয়া বন্ধ করে ৷ উপার্জন বন্ধ হয় ৷ এরপর থেকেই প্রতিবেশীদের ভরসায় বেঁচে আছেন ৷ মাঝেমধ্যেই আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে, চোখ ভরা জল নিয়ে জানান চিত্রাদেবী ৷ বৃদ্ধার জন্য সরকারি সাহায্যের দাবি জানাচ্ছেন সবিতা মণ্ডল, প্রভা মণ্ডলের মতো পড়শিরাও ৷
চিত্রাদেবী বলেন, "খুব কষ্টে বেঁচে আছি ৷ কোনওদিন খাবার জোটে, কোনওদিন জোটে না ৷ গ্রামবাসী দয়া করে খাবার দিলে খাই ৷ নয়ত উপোস ৷ তারাও তো রোজ সাহায্য করতে পারে না ৷ আমিও প্রতিদিন লজ্জায় খাবার চাইতে পারি না ৷ তখন না খেয়েই থাকি ৷"
আরও পড়ুন: 30 বছর পান-চা খেয়েই রয়েছেন বৃদ্ধা
চিত্রাদেবী আরও বলেন, "প্রশাসনের কাছ থেকে কিছুই পাইনি ৷ স্বামী মারা যাওয়ার পর 'সমব্যাথী' প্রকল্পের দু’হাজার টাকাও পাইনি ৷ ছেলেমেয়ে নেই ৷ সরকারি ঘরের তালিকায় নাম উঠেছে খবর পেয়েছি ৷ কিন্তু, কেউ খোঁজ নিতে আসেনি ৷ দুয়ারে সরকার কী জিনিস জানি না ৷ পেট ভরে খাবার খেতে পাই না, ঘর ঠিক করার টাকা পাব কোথায় ?"
তবে তিনি যে দেশের নাগরিক, তাঁর অধিকারের কথা জানেন চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বলেন, "সামনের নির্বাচনে ভোট দেব ৷ যদি বেঁচে থাকি ৷ "
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নাজিমুল হক বলছেন, "সমব্যথী প্রকল্পের টাকা এখনও পঞ্চায়েতে আসেনি ৷ টাকা এলেই চিত্রাদেবীকে দেওয়া হবে ৷ তাঁর নাম সরকারি ঘরের তালিকাতেও রয়েছে ৷ তবে, সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী ঘর দেওয়া হবে ৷ ওঁর বিধবা ভাতার জন্যও ইতিমধ্যে নথি জমা নেওয়া হয়েছে ৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করছি ৷"