মালদা, 8 সেপ্টেম্বর: সাতসকালে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের (Civic Volunteer Body Recovered) ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চাঁচলে ৷ এই ঘটনার পিছনে অবৈধ প্রেমের যোগ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের ৷ একই ইঙ্গিত মিলেছে মৃত সিভিককর্মীর পরিবারের সদস্যদের গলাতেও ৷
খবর পেয়ে দেহটি উদ্ধার করেছে চাঁচল থানার পুলিশ ৷ এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ তবে যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই যুবতীকে আটক করেছে পুলিশ ৷ ওই যুবতীও সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কর্মরত ৷
মৃত যুবকের নাম মনজির ঔরাঙ্গজেব ৷ বয়স 34 বছর ৷ বাড়ি চাঁচল-1 ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গোপালপুর গ্রামে ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে মনজির সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পান ৷ খরবা ফাঁড়ির অধীনেই তিনি কাজ করতেন ৷
মনজির বিবাহিত ৷ ছয় ও চার বছরের দুটি ছেলেও রয়েছে তাঁর ৷ স্ত্রী ও সন্তান ছাড়া বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই ৷ তিনি বাড়ির বড় ছেলে ৷ তাঁর উপার্জনেই সংসার চলছিল ৷ আজ সকালে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি আমবাগানে মনজিরের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান সেই সময় মাঠে যাওয়া কয়েকজন কৃষক ৷ তাঁরা এই ঘটনার কথা গ্রামে জানান ৷ এরপরেই গ্রাম জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরি সূত্রে মনজিরের সঙ্গে খরবা ফাঁড়ির অধীনেই কর্মরত ফিরদৌসি খাতুন ওরফে লিলির সঙ্গে পরিচয় হয় ৷ তাঁরা দু'জন প্রায় একই সঙ্গে চাকরি পেয়েছিলেন ৷ 30 বছর বয়সি লিলির বাড়ি ওই এলাকারই কালীগঞ্জ গ্রামে ৷ তিনিও বিবাহিত, সন্তান রয়েছে ৷ তবে কিছুদিন আগে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় ৷ এদিকে চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই মনজিরের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ৷ বিবাহিত মনজির একসময় লিলির প্রেমে পড়ে যান ৷ কিন্তু কিছুদিন ধরে তিনি লিলিকে এড়িয়ে চলছিলেন ৷ সম্ভবত নিজের পরিবারের কথা ভেবে তিনি লিলির থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছিলেন ৷
অভিযোগ, গতকাল সন্ধেয় 4-5 জনকে সঙ্গে নিয়ে লিলি মনজিরের বাড়িতে চড়াও হন ৷ তিনি মনজিরের মা ও স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে আসেন, মনজির তাঁর ফোন ধরছেন না ৷ ফোন রিসিভ না করলে তিনি মনজিরকে প্রাণে মেরে ফেলবেন ৷ কিছুটা সময় ধরে এমন হুমকি দেওয়ার পর দলবল নিয়ে চলে যান লিলি ৷ তারপর থেকেই মনজিরের আর খোঁজ পাচ্ছিলেন না পরিবারের সদস্যরা ৷ রাতে বাড়ি ফেরেননি মনজির ৷ শেষ পর্যন্ত আজ সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷
মনজিরের কাকা মুশারফ হোসেন বলেন, "এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয় ৷ আমার ভাইপোকে খুন করা হয়েছে ৷ এর পিছনে লিলি খাতুন নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার জড়িত ৷ তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ৷ তবে তাঁরা প্রেম করত কি না জানি না ৷ গতকাল রাতে লিলি লোকজন নিয়ে ভাইপোকে খুঁজতে এসেছিল ৷ তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে লিলি হুমকিও দেয় ৷ আজ সকালে ভাইপোর দেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ আমরা পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করব ৷"
আরও পড়ুন: পুলিশি সহায়তায় মুক্তিপণ না-দিয়ে উদ্ধার অপহৃত যুবক, গ্রেফতার 3 অপহরণকারী
একই বক্তব্য মনজিরের আরেক কাকা বাঁটুল হকেরও ৷ তিনিও সাফ জানিয়েছেন, লিলি খাতুনই লোকজন নিয়ে তাঁর ভাইপোকে খুন করেছে ৷ তাঁরা এই ঘটনার যথাযথ পুলিশি তদন্ত দাবি করছেন ৷ এ নিয়ে চাঁচল থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া না দিলেও, ইতিমধ্যে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার ফিরদৌসি খাতুন ওরফে লিলিকে আটক করা হয়েছে ৷