মালদা, 31 জানুয়ারি : মালদা জেলার প্রধান অর্থকরী ফল আম ৷ তারপরই নাম আসে রেশমের ৷ আম ও রেশম নিয়ে বিভিন্ন ছোটোখাটো শিল্পও জেলায় গড়ে উঠেছে ৷ বিভিন্ন সময় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে একাধিক দাবিদাওয়া উঠেছে ৷ দুই ফসলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে দেখা গিয়েছে কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সংগঠন, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিদ্বজ্জনদেরও ৷ কিন্তু, সবার কাছে অবহেলিত থেকে যায় জেলার বিড়ি শিল্প ৷ যে শিল্পের উপর বেঁচে রয়েছে এই জেলার প্রায় চার লাখ পরিবার ৷
রাত পোহালেই সংসদে দেশের সাধারণ বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ তার আগে নিজেদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানালেন জেলার বিড়ি শ্রমিকরা ৷ আজ ইংরেজবাজারের সুস্থানি ফুলবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিড়ি বাঁধতে ব্যস্ত মহিলা শ্রমিকরা ৷ বিড়ি শ্রমিকদের মধ্যে সিংহভাগই মহিলা ৷ পরিবারের কাজ করার পাশাপাশি বিড়ি বাঁধেন তাঁরা ৷ এই কাজে নেমে পড়তে বয়স কোনও বাধা নয় ৷ ছোটো থেকেই মেয়েরা বিড়ি বাঁধতে শিখে যায় ৷ এর ফল হয় মারাত্মক ৷ এই মহিলা শ্রমিকদের বেশিরভাগই ফুসফুস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৷ অনেক সময় তাঁদের সন্তানরাও এসব রোগে আক্রান্ত হয় ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের এই কাজ করে যেতে হয় ৷ অভিযোগ, তাঁদের এই অসহায়তার সুযোগ নেয় বিড়ি কম্পানির মালিকরা ৷ সরকারি নির্ধারিত মজুরির থেকে অনেক কম মজুরি দেওয়া হয় তাঁদের ৷ মেলে না কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধাও ৷
ফুলবাড়ি গ্রামের বিড়ি শ্রমিক জাহানারা খাতুন বলেন, "বিড়ি বাঁধার সরকারি মজুরি নির্ধারিত রয়েছে প্রতি হাজারে 206 টাকা ৷ এর আগে বিড়ি কম্পানিগুলি হাজার বিড়ি প্রতি 145 টাকা মজুরি দিচ্ছিল ৷ কিন্তু, পরে তা কমিয়ে প্রথমে 140 টাকা, পরে 137 টাকা করা হয় ৷ এখন আমরা হাজার বিড়ি বেঁধে 137 টাকা পাই ৷ এভাবেই আমাদের প্রতারিত করা হচ্ছে ৷ শুধুমাত্র মজুরি ছাড়া এই কাজে আমরা কিছুই পাই না ৷ আমাদের কোনও প্রভিডেন্ড ফান্ডের ব্যবস্থা নেই, মেডিকেল ইনসুরেন্স নেই, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্যও কোনও সরকারি সুবিধা নেই ৷ এই কাজে শরীরের ভীষণ ক্ষতি হয় ৷ তামাক নিয়ে আমরা কাজ করি ৷ অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা আমাদের অনেক বেশি ৷ তাই আমরা চাই, এবার কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের এই বিষয়গুলি নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নিক ৷"
একই বক্তব্য গ্রামের আর এক বিড়ি শ্রমিক, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শামিমা খাতুনেরও ৷ বলেন, "এই কাজ করতে করতে আমরা ফুসফুস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হই ৷ সরকার নির্ধারিত হারে আমাদের মজুরিও দেওয়া হয় না ৷ অনেক কম মজুরি দেওয়া হয় ৷ কিন্তু অভাবের সংসারে এই কাজ না করে আমাদের কোনও উপায় থাকে না ৷ আমি এই কাজ করেই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি ৷ এই গ্রামের প্রচুর মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৷ আমাদের কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা নেই ৷"
প্রতিবার বাজেটের আগে আশায় বুক বাঁধে জেলার বিড়ি শ্রমিকরা ৷ আশায় থাকে, এবার তাদের জন্য ভালো কিছু ঘোষণা করা হবে ৷ প্রতিবারই আশাহত হতে হয় তাদের ৷ এবার কি তাদের আশা পূরণ হবে?