মালদা, 30 জুলাই : 100 দিনের কাজ প্রকল্পে শ্রমিকের তালিকায় পঞ্চায়েত প্রধানের নাম ৷ শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের কাজের টাকা ঢুকেছে তাঁর অ্যাকাউন্টেও । প্রধান শুভলক্ষ্মী গায়েন স্বীকার করেছেন ঘটনার কথা । তাঁর বক্তব্য, যান্ত্রিক গোলযোগে এমন ঘটনা ঘটেছে । এনিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও খাড়া করেছেন তিনি । গোটা ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী থেকে শুরু করে জেলাশাসকও । ঘটনাটি পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ।
মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় 100 দিনের কাজ প্রকল্প নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের । অভিযোগ, তারা চেয়েও কাজ পায় না । এনিয়ে কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত দপ্তরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল স্থানীয়রা । সেবারও BJP প্রধান শুভলক্ষ্মী গায়েন গোটা বিষয়টিকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন । এবার তাঁর বিরুদ্ধে নিজের অ্যাকাউন্টে 100 দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা জমা করার অভিযোগ এনেছেন পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য চিত্তরঞ্জন মৃধা । তিনি জেলাশাসক সহ প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় নিজের অভিযোগ জমা দিয়েছেন । চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, "মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু গরিব মানুষ 100 দিনের কাজ পাচ্ছে না । অথচ আমরা তদন্ত করে দেখেছি, পঞ্চায়েত প্রধান নিজের জব কার্ড অ্যাকাউন্টে সেই প্রকল্পের টাকা ঢোকাচ্ছেন । তাঁর স্বামী ও নিকটাত্মীয়দের অ্যাকাউন্টেও 100 দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা ঢুকেছে । প্রধান এটা করতে পারেন না । আমরা চাই এই দুর্নীতি বন্ধ হোক । কারও নামে জব কার্ড থাকতেই পারে । কিন্তু যখন তিনি প্রধানের চেয়ারে আসীন, তখন তিনি জব কার্ড হোল্ডার হতে পারেন না । আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি এই কাজ করছেন । আমি এর বিরুদ্ধে BDO, জেলাশাসক সহ অনেক জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছি । আমি চাই, মুচিয়া পঞ্চায়েতকে দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করুক ।"
বিষয়টি জানতে যাওয়া হয় প্রধান শুভলক্ষ্মী গায়েনের বাড়ি । জানানো হয়, তিনি বাড়িতে নেই । অবশেষে পঞ্চায়েত দপ্তরে পাওয়া যায় তাঁকে ৷ শুভলক্ষ্মীদেবীকে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "যখন আমি ব্যাঙ্কে আমার পাসবই আপডেট করাই, তখনই জানতে পারি আমার অ্যাকাউন্টে 100 দিন কাজ প্রকল্পের দেড়শো টাকা ঢুকেছে । যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা অন্য কোনও কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে চিঠি মারফত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব ঘটনা জানাই ৷ এবং ওই দেড়শো টাকা ফেরত দিয়ে দিই । আমি একজন জব কার্ড হোল্ডার । বিয়ের পর থেকেই আমি 100 দিনের কাজ করতাম । কিন্তু যেহেতু আমি এখন প্রধানের চেয়ারে রয়েছি , তাই সেই কাজ আমি আর করতে পারি না । যাই হোক, কোনও কারণে এই ঘটনা ঘটে গেছে । তবে এই ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ি, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । আমার মনে হয়, কোনও রাজনৈতিক দলের লোকজন ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে । এই মুহূর্তে এনিয়ে এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই । তবে একটা কথা বলতে পারি, 2018 সালের 4 সেপ্টেম্বর আমি প্রধানের চেয়ারে বসি । তারপর আমি নতুন কোনও কাজে হাত দিতে পারিনি । পুরোনো কাজই করে যাচ্ছি । নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেলে নতুন জব কার্ড হোল্ডারদের কাজ দেওয়া হবে ।"
এপ্রসঙ্গে পুরাতন মালদার পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন । গরিব মানুষের জব কার্ডের টাকা প্রধানের অ্যাকাউন্টে ঢোকা ভীষণ অন্যায় । পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে । যদি তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তবে তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন । একই আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যও । তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তিনি পুরাতন মালদার BDO-কে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।