কলকাতা, 22 জুলাই : গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে সপ্তাহে দু'দিন সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য । কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ । তাঁদের প্রশ্ন, এভাবে কি সংক্রমণের হার কমিয়ে দেওয়া যাবে ? না কি এটা শুধু প্রশাসনিক একটা সিদ্ধান্ত ? তাঁদের মতে, এটা প্রহসন । এই ঘোষণা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ।
অগাস্টের শেষ পর্যন্ত সপ্তাহে দু'দিন সম্পূর্ণ লকডাউন চলবে রাজ্যে । এভাবে কি কোরোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখা সম্ভব ? সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "কোরোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য সরকার । এর জন্য যা যা করণীয়, আমরা আশা করব তার মধ্যে যেন আর কোনও লুকোচুরি বা অন্য কিছু না থাকে । গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ICMR (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ)-এর নির্দেশিকা রয়েছে । তবে সপ্তাহে দু'দিনের লকডাউনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমরা এখনও পাইনি । এধরনের রেফারেন্স কোন দেশ থেকে এল, এটা কোন সংস্থার রেফারেন্স, এভাবে গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকানো যায় কি না, এই সব বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই ।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা একটা প্রহসন । যা মনে করা, তাই বলা, এটা তেমন ধরনের একটা পরিকল্পনা । অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রথম থেকেই কোনও পরামর্শ নেওয়া হল না । বিভিন্ন কমিটিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির পরামর্শ নেওয়া হল না । প্রথম থেকে একই কাজ করে যাচ্ছে সরকার । মানুষের জীবন নিয়ে এখনও ছিনিমিনি খেলছে । গোষ্ঠী সংক্রমণে কোটি কোটি মানুষ সংক্রমিত হবে । এর জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করা হয়নি । পরিকাঠামো তৈরি করার কোনও পরিকল্পনাও নেই । সপ্তাহে দু'দিন সম্পূর্ণ লকডাউন, এটা লোক দেখানো । এই লকডাউন কোন বিজ্ঞানে বলেছে বা কোথায় কোন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এটা তো আমরা জানি না ।"
সজলবাবু আরও বলেন, "বিজ্ঞানটাকে হাতে নিয়েছে প্রশাসন । মানুষের মৃত্যু হচ্ছে । যদি এভাবে প্রশাসনিক স্তরে সব কিছু সমাধানের চেষ্টা করা হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তা হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে । এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক । এক মাস আগে বৈঠকে আমরা এই বিষয়ে জানিয়েছিলাম । অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করেছিলাম । অথচ এক মাস পর চিন্তাভাবনা করল সরকার ।
ICMR-এর সেরো-সার্ভের রিপোর্টেও গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল । ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনও আশঙ্কাপ্রকাশ করেছে । যেটা বাস্তব পরিস্থিতি সেটাকে লুকিয়ে রেখে কোনও লাভ নেই । বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী যা যা করণীয় তার মধ্যেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণের পথ রয়েছে বলে জানান মানস গুমটা । তিনি বলেন, "আমরা প্রথম থেকেই বলছিলাম গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে । প্রতিটি মহল্লা, পাড়ায় আরও জোরদার সমীক্ষায় করতে হবে । প্রত্যেকের পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে । গোষ্ঠী সংক্রমণ হলেই যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিতে হবে ।"