কলকাতা, 20 জুলাই: আজ 21 জুলাই শুক্রবার তৃণমূলের শহিদ তর্পনের দিন। যদিও এবার তা শ্রদ্ধা দিবস হিসাবে পালন করবে বাংলার শাসক শিবির ৷ 21 জুলাই শহর কলকাতার সব পথ এসে ধর্মতলায় মিশবে এমনটাই দাবি তৃণমূলের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কয়াক লক্ষ মানুষের জমায়েত হবে এই সমাবেশে ৷ এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে অভাবনীয় জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল। এরপর তাদের লক্ষ্য অর্থাৎ পাখির চোখ অবশ্যই লোকসভা নির্বাচন। বছর ঘুরলেই ভোট ৷ তাই কার্যত এদিনের শহিদ সমাবেশ তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য যে রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট।
এদিনের 21-এর মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন সেদিকে শুধু তৃণমূল নয়, বিরোধীরাও উৎসুকভাবে চেয়ে আছে ৷ যদিও কোন অভিমুখে তিনি বিরোধীদের আক্রমণের সুর বাঁধবেন তা বৃহস্পতিবার রাতেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ বিজেপির সঙ্গে বাম এবং কংগ্রেসও যে তাঁর নিশানায় থাকবেন তা এক রকম স্পষ্ট ৷ তবে বিরোধী বৈঠক শেষে এবং মণিপুর ইস্যুতে যেভাবে পদ্মের বিরুদ্ধে ঝাঁঝ সপ্তমে চড়িয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে তৃণমূলের একাংশের দাবি, 21-এর মঞ্চ থেকে সেই বার্তাই আরও জোড়ালভাবে দেবেন তিনি ৷ এবং এদিনের মঞ্চ থেকেই কার্যত লোকসভা ভওটের প্রচারও শুরু করবে তৃণমূল ৷
মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলা থেকে কলকাতামুখী হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সেন্ট্রাল পার্ক, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ-সহ বিভিন্ন প্রান্তে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে দল ৷ নিকটবর্তী জেলাগুলি থেকে অবশ্য সরাসরি কলকাতায় এসে পৌঁছবে নেতা-কর্মীরা এমনটাই তৃণমূল সূত্রে খবর। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমান এবার জমায়েত অতীতের সব রেকর্ডকে ভেঙে দেবে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রত্যেক বছর 21 তার আগের বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। এবার রাজপথে কার্যত জনজোয়ার দেখবে কলকাতা এমনটাই দাবি তাঁর।
এবার একুশের কর্মসূচির কথা মাথায় রেখে মূলমঞ্চকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যার প্রথম ভাগে থাকবেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফিরহাদ হাকিম-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। থাকবেন টেলি ইন্ডাস্ট্রি, চলচ্চিত্র জগতের কলা-কুশলীরাও। দ্বিতীয় ভাগ নির্দিষ্ট করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের জন্য। তৃতীয় ভাগে উপস্থিত থাকবেন বিধায়ক এবং কাউন্সিলররা। দলীয় সূত্রে খবর, মূলমঞ্চ তিন ভাগে বিভক্ত।
প্রথম ভাগের দৈর্ঘ 52 ফুট, প্রস্ত 28 ফুট, উচ্চতা 10 ফুট। দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ শহিদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ মঞ্চের দৈর্ঘ্য 40 ফুট, প্রস্থ 28 ফুট এবং উচ্চতা উচ্চতা 11 ফুট। আর যে অংশে পৌরপিতা ও বিধায়কেরা বসবেন সেই অংশের দৈর্ঘ্য 48 ফুট, প্রস্থ 28 ফুট এবং উচ্চতা 12 ফুট। এছাড়া বক্তব্য রাখার জন্য পৃথক একটি পোডিয়ামও তৈরি করা হয়েছে ৷ মাটি থেকে সেটির উচ্চতা 14 ফুট ৷ দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ আট ফুট। থাকছে সাংবাদিকদের জন্য দুটি আলাদা মঞ্চ। এবার সভাস্থল এবং মূল মঞ্চকে কেন্দ্র করে সাড়ে 500টি সিসিটিভি লাগানো হয়েছে। এছাড়া থাকবে ড্রোনে নজরদারির ব্যবস্থাও।
তৃণমূল সূত্র জানা গিয়েছে, সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল আসতে শুরু করবে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের অভিমুখে। যারা হাওড়া স্টেশন হয়ে আসবেন তাদের রুট হল যথাক্রমে হাওড়া স্টেশন থেকে ব্র্যাবর্ন রোড, ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস ও পোদ্দার কোর্ট হয়ে সোজা ধর্মতলা। উত্তর কলকাতা থেকে জেলায় বাসগুলি ধর্মতলা অভিমুখে আসবে সেগুলি আটকে দেওয়া হবে গিরিশ পার্কের আগেই ৷ এরপর সেই মিছিলগুলিকে ভূপেন বসু অ্যাভিনিউ থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে, বিধান সরণি হয়ে কলেজ স্ট্রিট ও গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলা মূল মঞ্চে দিকে পাঠানো হবে। একইভাবে শিয়ালদা স্টেশন থেকে যে মিছিল গুলি আসবে সেগুলি এজিসি বোস রোড, মৌলালির এসএন ব্যানার্জি রোড ও জহরলাল নেহেরু রোড হয়ে ভিক্টোরিয়া হাউস এর সামনে ঢুকবে ঢুকবে।
আরও পড়ুন: 21 জুলাইয়ে কোনও অশান্তি নয়, রাজনৈতিক দলগুলিকেও বার্তা মমতার
দক্ষিণ কলকাতার মিছিল হাজরা মোড় থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড হয়ে, আশুতোষ মুখার্জি রোড ও জহরলাল নেহেরু রোড হয়ে ধর্মতলা আসার কথা। কলকাতা স্টেশন হয়ে যারা আসবেন তারা রায়চরণ সাধুখাঁ রোড আরজি কর রোড, শ্যামবাজার, বিধান সরণি, কলেজ স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট গনেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউ চিত্ররঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে কলকাতায় পৌঁছবেন। মোটের উপর এটা পরিষ্কার সকাল আটটা থেকেই ধর্মতলায় মূল সভামঞ্চের কাছে ভিড় বাড়তে শুরু করবে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলায় আসবেন বারোটা নাগাদ। তার আগে এই ভিড়ের লেজ কোথায় থাকে সেটাই এখন দেখার।