ETV Bharat / state

কোরোনা আতঙ্কে স্বাদ হারাচ্ছে বাংলার মিষ্টি !

বাংলা মানেই দূর্গাপুজো ও মিষ্টি ৷ এখানকার মিষ্টির সুনাম বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে ৷ কিন্তু কোরোনা আবহে ধাক্কা খেয়েছে চেনা সেই ছবি ৷ ক্ষতির মুখে বাংলার মিষ্টি শিল্প ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Aug 11, 2020, 12:31 PM IST

Updated : Aug 11, 2020, 1:55 PM IST

কলকাতা, 11 অগাস্ট : বাংলা তথা কলকাতার মিষ্টির স্বাদ জগৎজোড়া ৷ বিশ্ব দরবারে বাংলার মিষ্টি নিজের জায়গা করে নিয়েছে । কিন্তু বর্তমানে এই ছবি বদলেছে ৷ কোরোনা সংক্রমণ আর লকডাউনের জেরে সংকটের মুখে বাংলার মিষ্টান্ন ব্য়বসায়ীরা ।

কলকাতায় প্রায় কুড়ি হাজার মিষ্টির দোকান রয়েছে । গোটা রাজ্যে 1 লাখ 5 হাজার মিষ্টির দোকান আছে । শুধু কলকাতাতে মিষ্টির মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে সংখ্যাটা আড়াই লাখের বেশি । প্রায় কুড়ি লাখের বেশি মানুষ জড়িয়ে আছেন এই শিল্পের সঙ্গে । যা বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম সংকটের মুখে ।

এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবীন্দ্রকুমার পাল বলেন, " কোরোনা পরিস্থিতিতে মিষ্টান্ন ব্য়বসায়ীরা খুবই সংকটে রয়েছেন । শুধু মাত্র কলকাতাতেই ছোটো মিষ্টির দোকান প্রায় 30 শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে । কারিগরের অভাবেই ছোটো মিষ্টির দোকানগুলি বন্ধ হয়ে গেছে । তার উপর চলছে লকডাউন ৷ যে ভাবে ক্রমাগত রোগ ছড়াচ্ছে তার কারণে মানুষ কিন্তু রাস্তায় বেশি বের হচ্ছেন না ৷ এবার তাঁরা রাস্তায় না বেরোলে আমরা কী করে মিষ্টি বিক্রি করব ? লকডাউনের এই তিন মাস ব্যবসার চরম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । এই সময় বিক্রি নেই বললেই চলে। উৎপাদন কমিয়ে দিয়েও লাভের দেখা মিলছে না । বিক্রির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র কুড়ি শতাংশ । এইভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে আরও বড় ক্ষতির মুখে দাঁড়াতে হবে । পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিষ্টির দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।"

লকডাউনে জেরে ক্ষতির মুখে বাংলার মিষ্টি শিল্প

কলকাতার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মিষ্টি দোকান নলিন চন্দ্র দাস । শহরে যাদের 5 টি শাখা রয়েছে । সেই প্রতিষ্ঠানে 85 জন কারিগরকে নিয়ে কারখানায় চলত ৷ বর্তমানে কোরোনার সংক্রমণ ও লকডাউন এর ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতা থেকে কারিগর সকলেই । ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তপন দাস জানিয়েছেন, বিক্রি-বাট্টা কমে দাঁড়িয়েছে 30% । এখন যদিও অনলাইনে চাহিদা রয়েছে যার কারণে দোকান খোলা রয়েছে । তবে বিয়ে বাড়ি বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মুহূর্তে বন্ধ থাকায় মিষ্টি চাহিদা কমেছে অনেক । ক্রেতাদেরও আনাগোনা কমেছে । যার কারণে বিক্রি কমেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা সামাল দিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে । তিনি আরও জানিয়েছেন, নিয়মিত দোকান স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। মিষ্টির উৎপাদন কমানো হয়েছে । কিছু স্পেশাল মিষ্টি তৈরি আপাতত বন্ধ রয়েছে ।

photo
কোরোনা আবহে কমেছে মিষ্টি দোকানে ক্রেতার সংখ্যা

অন্য আর এক প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি দোকান গিরীশ চন্দ্র দে ও নকুর চন্দ্র দে-র কর্ণধার রানা নন্দী জানিয়েছেন, সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা চলছে । আগে দোকানে 40 থেকে 45 রকমের মিষ্টি থাকতো কিন্তু কোরোনা সংক্রমণের জেরে মিষ্টির উৎপাদন কমানো হয়েছে । কারিগর এর অভাব একটা বড় সমস্যা । কারিগর না থাকার ফলে অল্প লোকবল নিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে । বেশকিছু প্রসিদ্ধ মিষ্টি উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে সমস্যার মুখে পড়ে । এদিকে স্যানিটাইজ়েশন এর জন্য খরচ বেড়েছে । কিন্তু মিষ্টির দাম বাড়ানো হয়নি । যেহেতু এই পরিস্থিতিতে ক্রেতারা রাস্তায় কম বের হচ্ছেন, তাই বিক্রি-বাট্টাও অনেকটাই কমে গেছে । কোরোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসার বিপুল ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু পারিবারিক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই যতটা সম্ভব বিধিনিষেধ মেনে দোকান খোলা হচ্ছে । সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় কোনও অর্ডার নেই । সবমিলিয়ে সমস্যা রয়েছে অনেক । কলকাতার অপর একটি মিষ্টির দোকান লকডাউনের কারণে তিন মাসের বেশি বন্ধ ছিল । সরকারি অনুমতি নেওয়ার পর মিষ্টির দোকান খোলা হয়েছে যদিও বিক্রি-বাট্টা অনেকটাই কমে গেছে আগের তুলনায় । সেখানকার বর্তমান কর্ণধার গৌতম নাগ জানিয়েছেন, আগের থেকে প্রায় 50 শতাংশ বিক্রি কমে গেছে । এবং লকডাউন থাকার সময় বিপুল অঙ্কের টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে । সরকারি নির্দেশ মেনে সকাল আটটা থেকে সন্ধেয় 8টা অবধি দোকান খোলা থাকছে । দোকানে কারিগররা সামাজিক দূরত্ব মেনে ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে মিষ্টি তৈরি করছে । দোকানের বাইরে ক্রেতারা লাইন দিয়ে মিষ্টি কিনতে হচ্ছে । নিয়মিতভাবে দোকান স্যানিটাইজ় করতে হচ্ছে । লোকবল অনেকটাই কমে গেছে প্রায় অর্ধেক কারিগর নিয়ে কোনওমতে দোকান চালাতে হচ্ছে । কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতার দেখা মিলছে না । এই বড়সড় যক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মিষ্টি ব্য়বসা ।

তবে ছোটো দোকান হোক বা বড় দোকান ৷ এই পরিস্থিতিতে সকলেই রয়েছে চরম সমস্যায় । বিপন্ন হচ্ছে মিষ্টি ব্যবসা । তবে সকলকে আশাবাদী কোরোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে ফের আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলার মিষ্টি শিল্প ।

কলকাতা, 11 অগাস্ট : বাংলা তথা কলকাতার মিষ্টির স্বাদ জগৎজোড়া ৷ বিশ্ব দরবারে বাংলার মিষ্টি নিজের জায়গা করে নিয়েছে । কিন্তু বর্তমানে এই ছবি বদলেছে ৷ কোরোনা সংক্রমণ আর লকডাউনের জেরে সংকটের মুখে বাংলার মিষ্টান্ন ব্য়বসায়ীরা ।

কলকাতায় প্রায় কুড়ি হাজার মিষ্টির দোকান রয়েছে । গোটা রাজ্যে 1 লাখ 5 হাজার মিষ্টির দোকান আছে । শুধু কলকাতাতে মিষ্টির মালিক ও কর্মচারী মিলিয়ে সংখ্যাটা আড়াই লাখের বেশি । প্রায় কুড়ি লাখের বেশি মানুষ জড়িয়ে আছেন এই শিল্পের সঙ্গে । যা বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম সংকটের মুখে ।

এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রবীন্দ্রকুমার পাল বলেন, " কোরোনা পরিস্থিতিতে মিষ্টান্ন ব্য়বসায়ীরা খুবই সংকটে রয়েছেন । শুধু মাত্র কলকাতাতেই ছোটো মিষ্টির দোকান প্রায় 30 শতাংশ বন্ধ হয়ে গেছে । কারিগরের অভাবেই ছোটো মিষ্টির দোকানগুলি বন্ধ হয়ে গেছে । তার উপর চলছে লকডাউন ৷ যে ভাবে ক্রমাগত রোগ ছড়াচ্ছে তার কারণে মানুষ কিন্তু রাস্তায় বেশি বের হচ্ছেন না ৷ এবার তাঁরা রাস্তায় না বেরোলে আমরা কী করে মিষ্টি বিক্রি করব ? লকডাউনের এই তিন মাস ব্যবসার চরম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । এই সময় বিক্রি নেই বললেই চলে। উৎপাদন কমিয়ে দিয়েও লাভের দেখা মিলছে না । বিক্রির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র কুড়ি শতাংশ । এইভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে আরও বড় ক্ষতির মুখে দাঁড়াতে হবে । পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মিষ্টির দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।"

লকডাউনে জেরে ক্ষতির মুখে বাংলার মিষ্টি শিল্প

কলকাতার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মিষ্টি দোকান নলিন চন্দ্র দাস । শহরে যাদের 5 টি শাখা রয়েছে । সেই প্রতিষ্ঠানে 85 জন কারিগরকে নিয়ে কারখানায় চলত ৷ বর্তমানে কোরোনার সংক্রমণ ও লকডাউন এর ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্রেতা থেকে কারিগর সকলেই । ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তপন দাস জানিয়েছেন, বিক্রি-বাট্টা কমে দাঁড়িয়েছে 30% । এখন যদিও অনলাইনে চাহিদা রয়েছে যার কারণে দোকান খোলা রয়েছে । তবে বিয়ে বাড়ি বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মুহূর্তে বন্ধ থাকায় মিষ্টি চাহিদা কমেছে অনেক । ক্রেতাদেরও আনাগোনা কমেছে । যার কারণে বিক্রি কমেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা সামাল দিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে । তিনি আরও জানিয়েছেন, নিয়মিত দোকান স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। মিষ্টির উৎপাদন কমানো হয়েছে । কিছু স্পেশাল মিষ্টি তৈরি আপাতত বন্ধ রয়েছে ।

photo
কোরোনা আবহে কমেছে মিষ্টি দোকানে ক্রেতার সংখ্যা

অন্য আর এক প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি দোকান গিরীশ চন্দ্র দে ও নকুর চন্দ্র দে-র কর্ণধার রানা নন্দী জানিয়েছেন, সরকারি বিধিনিষেধ মেনে ব্যবসা চলছে । আগে দোকানে 40 থেকে 45 রকমের মিষ্টি থাকতো কিন্তু কোরোনা সংক্রমণের জেরে মিষ্টির উৎপাদন কমানো হয়েছে । কারিগর এর অভাব একটা বড় সমস্যা । কারিগর না থাকার ফলে অল্প লোকবল নিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে । বেশকিছু প্রসিদ্ধ মিষ্টি উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে সমস্যার মুখে পড়ে । এদিকে স্যানিটাইজ়েশন এর জন্য খরচ বেড়েছে । কিন্তু মিষ্টির দাম বাড়ানো হয়নি । যেহেতু এই পরিস্থিতিতে ক্রেতারা রাস্তায় কম বের হচ্ছেন, তাই বিক্রি-বাট্টাও অনেকটাই কমে গেছে । কোরোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসার বিপুল ক্ষতি হচ্ছে । কিন্তু পারিবারিক ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব নয় তাই যতটা সম্ভব বিধিনিষেধ মেনে দোকান খোলা হচ্ছে । সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় কোনও অর্ডার নেই । সবমিলিয়ে সমস্যা রয়েছে অনেক । কলকাতার অপর একটি মিষ্টির দোকান লকডাউনের কারণে তিন মাসের বেশি বন্ধ ছিল । সরকারি অনুমতি নেওয়ার পর মিষ্টির দোকান খোলা হয়েছে যদিও বিক্রি-বাট্টা অনেকটাই কমে গেছে আগের তুলনায় । সেখানকার বর্তমান কর্ণধার গৌতম নাগ জানিয়েছেন, আগের থেকে প্রায় 50 শতাংশ বিক্রি কমে গেছে । এবং লকডাউন থাকার সময় বিপুল অঙ্কের টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে । সরকারি নির্দেশ মেনে সকাল আটটা থেকে সন্ধেয় 8টা অবধি দোকান খোলা থাকছে । দোকানে কারিগররা সামাজিক দূরত্ব মেনে ও সরকারি বিধিনিষেধ মেনে মিষ্টি তৈরি করছে । দোকানের বাইরে ক্রেতারা লাইন দিয়ে মিষ্টি কিনতে হচ্ছে । নিয়মিতভাবে দোকান স্যানিটাইজ় করতে হচ্ছে । লোকবল অনেকটাই কমে গেছে প্রায় অর্ধেক কারিগর নিয়ে কোনওমতে দোকান চালাতে হচ্ছে । কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতার দেখা মিলছে না । এই বড়সড় যক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে মিষ্টি ব্য়বসা ।

তবে ছোটো দোকান হোক বা বড় দোকান ৷ এই পরিস্থিতিতে সকলেই রয়েছে চরম সমস্যায় । বিপন্ন হচ্ছে মিষ্টি ব্যবসা । তবে সকলকে আশাবাদী কোরোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে ফের আবার ঘুরে দাঁড়াবে বাংলার মিষ্টি শিল্প ।

Last Updated : Aug 11, 2020, 1:55 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.