কলকাতা, 20 সেপ্টেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে দফতরের কাজ সামলাচ্ছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা ৷ আর তাঁর সঙ্গেই রাজ্যের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দেখা করতে চেয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্দেশে গোপালিকা দফতর ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি তিনি শহিদ মিনারে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের বাড়তি টাকা সাহায্য করলেন ৷
যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এই মুহূর্তে বিদেশ সফরে রয়েছেন, তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে রাজ্যের ভার দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকাকে ৷ আর সেকারণে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য এদিন বিকাল চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে বিরোধী দলনেতার তরফে সময় নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি ৷ কিন্তু বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, সময়ের কিছু আগেই বিপি গোপালিকা পালিয়ে গিয়েছেন। একই সঙ্গে, শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, বিদেশ থেকে গোপালিকার কাছে নির্দেশ এসেছে যে, উনি যেন তাড়াতাড়ি নবান্ন ছেড়ে চলে যান। এবং তাঁকে চুপ থাকতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধী দলনেতার।
শুভেন্দু অধিকারী এদিন জানান, গত সাতদিন তিনি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ চিত্র দেখেছেন। সেই বিষয়ে গোপালিকাকে জানাতে চেয়েছিলেন । কারণ জেলা থেকে শহর সমস্ত হাসপাতালে রোগী উপচে পড়ছে । টেস্ট কিটও নেই বলে অভিযোগ । বিশেষ করে বাচ্চারা খুব কষ্টে আছে। শুভেন্দুর কথায়, "মানুষ এখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর সরকার মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় ফুটবল খেলছে ।"
এর পাশাপাশি সারা রাজ্যের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা, রাজ্য সড়কের অবস্থা খুব খারাপ বলেও অভিযোগ করেন তিনি ৷ পৌরসভা এলাকাতে এবং গ্রামীন এলাকাতে 80 শতাংশ রাস্তার কোনও অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি তাঁর । তিনি বলেন, "আমি গোপালিকাকে বলতাম যে, পুজোর আগে দয়া করে রাস্তাগুলো সারান। সব রাস্তায় মরণ ফাঁদ। উনি আমাকে দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে বা চা খাইয়ে কথা শুনতে পারতেন ৷ প্রয়োজনে নিজে থেকে যদি মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকে যাই এমন কোনও আশঙ্কা ওনার থেকে থাকত, তাহলে তিনি লিফটের সামনে দাঁড়িয়েও এই দু’টো বিষয়ে শুনে নিয়ে আমাকে বলতে পারতেন সরকার স্পেনে বার্সেলোনা বা দুবাইতে জানাব ৷ এইটুকু বললেই আমি সন্তুষ্ট হতাম। রাজ্যের বিরোধী দলনেতার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে রাজ্যের অন্যান্য বিধায়ক বা সংসদ বা মিডিয়ার প্রতিনিধি অবস্থা কী তা সহজে অনুমেয়।"
অন্যদিকে, এদিন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক বৈঠকের কিছু পরই একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত সচিব প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা। সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে যে, এদিন যে সময় শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, সেই সময় আগে থেকেই কিছু নির্দিষ্ট কাজ ছিল তাঁর ৷ তাই তিনি সময় দিতে পারেননি। সেই সঙ্গে, আগামী 23 তারিখ বেলা 11টা থেকে বেলা 1টার মধ্যে যেকোনও সময়ে নবান্নে এসে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন গোপালিকা।
আরও পড়ুন: ট্রেজারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ! ফিন্যান্স অফিসারদের বৈঠকে প্রস্তাব নবান্নের
এরপরই শহিদ মিনারে ডিএ বঞ্চিত আন্দোলনরত সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতিবাদ মঞ্চে গিয়ে নিজের বাড়তি বেতন চেকের মাধ্যমে প্রদান করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "আমাকে পূর্ণমন্ত্রীর মতোই ভাতা এবং বেতন দেওয়া হয় ৷ আমি আমার বাড়তি যে অর্থ তা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং তার সঙ্গে থাকা বিভিন্ন অনুমোদিত সংগঠনের যে আইনি লড়াইয়ের জন্য আমার এই অর্থ চেকের মাধ্যমে তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রদান করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। এরা প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।" তিনি আরও বলেন, "এটা দেখে মুখ্যমন্ত্রী একটু হলেও লজ্জা পাবেন ৷ নিজে এসে সরকারি কর্মচারীদের তাঁদের কেন্দ্রীয় হারেই ভাতা ঘোষণা করবেন ৷ এরিয়ার এর অর্থের জন্য তিনি এক বছরের সময় চেয়ে নেবেন।"