বর্ধমান, 3 জানুয়ারি: 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের প্রথম থেকেই দল গোছাতে শুরু করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে টাকা পয়সার বিনিময়ে যে কেউ কোন পদ পাবে না, সেই বিষয়ে নেতাদের সতর্ক করেছে জেলা নেতৃত্ব।
তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর, বছরের প্রথম থেকেই শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলা নয়, দক্ষিণবঙ্গজুড়ে বিভিন্ন জেলায় দলীয় নেতা কর্মীদের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে তাদের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিধায়ক থেকে অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের কাজকর্মের গতিবিধির দিকেও নজর রয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের।
জেলায় সাংগঠনিক পদে বেশ কিছু রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিধায়কদের কাজকর্ম থেকে শুরু করে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের দিকেও নজর রাখা হচ্ছে । এমনকি প্রয়োজন হলে বিধায়কদের মধ্যে দু-একজন টিকিট নাও পেতে পারেন। তবে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের উচ্চ নেতৃত্ব। তবে দলে পদ পাওয়ার জন্য কোন 'দাদা' কে ধরে কিংবা টাকার বিনিময়ে কাজ হবে না ৷ পরিষ্কার সেই বার্তাও দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। যারা শুধুমাত্র দলের স্বার্থে কাজ করে অর্থাৎ অনুগত সৈনিকদেরই দল গুরুত্ব দেবে।
গত ডিসেম্বর মাসে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস ও ভোটকুশলী একটা সংস্থার নাম করে কালনার পুরপ্রধানের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা চাওয়ার অভিযোগে কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণি থানার পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে জুনেইদুল হক ও শুভদীপ মল্লিক হুগলির বাসিন্দা এবং শেখ তসলিম পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। তারা জানতে পারে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও এই ধরনের একটা প্রতারণা চক্র শহরের একটা হোটেলে ডেরা বেঁধে ছিল। সেখানে নাকি বেশ কিছু নেতাও দেখা-সাক্ষাৎ করে আসেন। টাকার পরিমাণের উপর পদ কী হবে, সেটা নির্ভর করবে বলে জানানো হয়। কিন্তু কলকাতার ঘটনার পরে পুলিশের ভয়ে তারা পালিয়ে যায়।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় সূত্রে খবর, যেহেতু কারও নামে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ জমা পড়েনি সেই কারণে প্রতারকেরা কিন্তু গা ঢাকা দেয়নি। ফলে তাদের ফাঁদে কেউ পা দিলে তারা নিজেরাই ভুগবে। তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস একটা শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। এখানে টাকার বিনিময়ে কোন পদ কিংবা কোন কাজ হয় না। দলে থাকতে হলে নিজের এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। হঠাৎ করে এখানে কেউ স্বঘোষিত নেতা হতে পারেন না। নিয়মশৃঙ্খলা না মানলে দলে তার ঠাঁই নেই। যেখানে কোন দাদাকে ধরে কিংবা টাকার বিনিময়ে কাজ হবে না সেখানে যারা এই বিষয়ে সচেতন তারা কোনভাবেই প্রতারকদের ফাঁদে পা দেবে না।"
যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দফতরের নাম করে যারা ধরা পড়ল বা যেসব অভিযোগ উঠছে তার মানে বোঝা যাচ্ছে আসলে আইপ্যাকের নাম করে এই কাজ হয়েছে। অভিষেকের দফতর ক্যামাক স্টিট বা বিভিন্ন এমএলএ, এমপি মন্ত্রী তৃণমূলের নেতাদের দফতরগুলো থেকে এই ধরনের কাজ হচ্ছে । তার মানে তৃণমূল তৃণমূলকে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলাবাজি করছে ৷"
সেলিমের আরও অভিযোগ, তৃণমূল দল রাজ্য প্রশাসনে এই ব্যবস্থা করেছে। একটা নবান্ন থেকে, একটা কালীঘাট থেকে আর একটা ক্যামাক স্ট্রিট থেকে চলছে। আর আইএএস, আইপিএস অফিসারেরা চোর ধরার বদলে এদের সেবা দাসে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ তো ভুক্তভোগী ছিলই।সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তো তোলাবাজি চলছিলই। এখন দেখা যাচ্ছে এমএলএ, এমপি, চেয়ারম্যান, ব্লকের দায়িত্বে কে থাকবে, সেটা নির্ভর করছে কে কত টাকা দিতে পারছে তার উপরে। টাকা পয়সার বিনিময়ে যখন রাজনীতি পরিচালনা হয় তখন এই রকমই হবে।