কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: কলকাতা বইমেলায় হাজির হয়েই বাজিমাত সুলেখার ! সুলেখা, অর্থাৎ সুলেখা কালি ৷ এবারের কলকাতা বইমেলায় প্রথমবার স্টল দিয়েছে সুলেখা ইংক কর্তৃপক্ষ (Sulekha Ink Stall in Kolkata International Book Fair 2023) ৷ বইমেলা প্রাঙ্গনের 6 নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে সুলেখার স্টলে ৷ স্টল নম্বর 253 ৷
সুলেখার স্টলে ঢুঁ মেরেছিল ইটিভি ভারত ৷ আমাদের প্রতিনিধি মুখোমুখি হয়েছিলেন সুলেখা ইংকের ম্য়ানেজিং ডিরেক্টর কৌশিক মৈত্রের ৷ তাঁর আশা, সম্ভারের বৈচিত্র্য নজর কাড়বে ক্রেতাদের ৷ কী রয়েছে সুলেখার ভাঁড়ারে ? কৌশিক জানালেন, এবার 20 রকমের নতুন কালি এনেছেন তাঁরা ৷ লাল, কালো, বাদামি, সবুজ প্রভৃতি নানা রঙের কালি রয়েছে ৷ সেইসঙ্গে, প্রত্যেকটি কালির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস ৷ তা সে ভাষা আন্দোলন হোক, কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি ৷ কোনও কালির নেপথ্যে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের কোনও অমর সৃষ্টি ৷ প্রত্যেকটি কালির মানানসই নামও দেওয়া হয়েছে ৷
কৌশিক জানালেন, বইমেলা উপলক্ষে নতুন একটি কালি এনেছেন তাঁরা ৷ নাম 'সুকান্ত' ৷ দেশবাসীর ক্ষুধার জ্বালা যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ৷ তিনি লিখেছিলেন, "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি !" পোড়া, ঝলসানো রুটির রং হয় বাদামি ৷ তাই সুলেখার তৈরি 'সুকান্ত' কালিও বাদামি রঙের !
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শহিদ হয়েছিলেন 26 জন তরতাজা বাঙালি তরুণ ৷ তাঁদের সেই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে আজ সারাবিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ৷ সেই ইতিহাস স্মরণে সুলেখা তৈরি করেছে 'সেলাম' ! কালির রং রক্তের মতোই লাল ! বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির 50 বছর উপলক্ষে আনা হয়েছে 'গর্বের 50' ৷ কালির রং গাঢ় সবুজ ৷ বাংলার গর্ব, সারা পৃথিবীর গর্ব মাদার টেরেসাকেও সম্মান জানাতে ভোলেনি সুলেখা ৷ তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে 'মা' ! এছাড়াও 'স্বাধীন' সিরিজের অধীনে রয়েছে চারটি ভিন্ন রঙের কালি ৷
কালির পাশাপাশি রকমারি ফাউন্টেন পেন বা ঝরনা কলমেরও সম্ভার হাজির করেছে সুলেখা কর্তৃপক্ষ ৷ কৌশিক বললেন, "ঝরনা কলমের কোনও ব্যতিক্রম হতে পারে না ৷ আজকাল যেসব বলপেন বা ডটপেন ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশ ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয় ৷ এর ফলে প্লাস্টিক জমছে ৷ যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷" বিষয়টি নিয়ে ক্রেতাদের সচেতন করছেন স্টলের কর্মীরা ৷
অন্যদিকে, এমন আয়োজনে খুশি ক্রেতারা ৷ কম্পিউটার, স্মার্টফোনের যুগে হাতে লেখার অভ্যাস কার্যত বাতিল ! তারপরও সুলেখা নিয়ে বাঙালির আবেগ যে এতটুকুও কমেনি, তা বোঝা যাবে তাদের এই স্টলে এলে ৷ মেলা প্রাঙ্গন খুলতেই সুলেখার স্টলে ভিড় উপচে পড়ছে ৷ বিক্রিও মন্দ হচ্ছে না ৷
প্রসঙ্গত, সুলেখার পত্তন হয়েছিল 1934 সালে অবিভক্ত বাংলার রাজশাহীতে (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত) ৷ নেপথ্য়ের দুই নায়ক ছিলেন ননীগোপাল এবং শংকরাচার্য মৈত্র ৷ তাঁদের আশীর্বাদ করেছিলেন স্বয়ং মহাত্মা গান্ধি ৷ এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ ছিল না ৷ তা ছিল আদতে বাঙালি তথা আপামর ভারতীয়ের জাত্যভিমান ও আত্মমর্যাদার প্রতীক ৷ পরবর্তীকালে সুলেখার উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই সংস্থা ৷