কলকাতা, 28 এপ্রিল: তিন কোটি টাকা ফিক্সডিপোজিট ছিল অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের নামে। কিন্তু বাকি তিন কোটি টাকা গেল কোথায় ? এবার সেই টাকার হিসাব পেতেই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ইডি'র তদন্তকারী আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী মারফৎ দফায় দফায় অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলতেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ শেষ ছয় কোটি টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল ৷ এই ছয় কোটি টাকার উৎসেরও খোঁজ চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷
বাবা গ্রেফতার হওয়ার আট মাসের মাথায় গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন মেয়ে সুকন্য়া মণ্ডল ৷ আর এরপরই একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে ইডি আধিকারিকদের সামনে ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, অনুব্রত মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট দেখভাল করতেন যে ব্যক্তি তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ৷ তাঁকেও একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। জানা গিয়েছে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ইডি'র তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, 2016 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মোট কুড়ি কোটি কোটি টাকা জমা পড়েছিল। এছাড়াও এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই কর্মী মাঝেমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার কাজও করেছেন।
ইডির তদন্তকারীদের দাবি, শেষবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই আধিকারিক অনুব্রত মণ্ডলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট 6 কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন ৷ যার মধ্যে তিন কোটি টাকা তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের নামে একটি এফডি করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা ৷ বাকি তিন কোটি টাকা কোথায় গেল সেই বিষয়ে অবশ্য এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশাতেই রয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে নেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, 26টি সম্পত্তি রয়েছে শুধুমাত্র অনুব্রত কন্যা সুকন্যার নামে। তদন্তকারীদের অনুমান, মূলত গরুপাচারের যে কোটি কোটি কালো টাকা এসেছিল, তা বিশেষভাবে সুকন্যা মণ্ডলের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় প্রথমে ৷ এরপর সেই টাকা বিভিন্ন নকল সংস্থায় খাটিয়ে সাদা টাকায় পরিণত করত অনুব্রত মণ্ডল ৷ আর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন বিভিন্ন ব্যাংক কর্মচারীরা।
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারের বছর ঘুরতে না-ঘুরতে তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ইডি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রে খবর, অনুব্রত সংক্রান্ত মামলায় এখনও পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার কোনও হিসাব পাওয়া যায়নি। এমনকী অনুব্রতর হিসাব রক্ষক মণীশ কোঠারিকে গ্রেফতারের পরও একাধিক প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসীতই থেকে গিয়েছে। তবে এই বিষয়ে তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিত যে বোলপুর-সহ বিভিন্ন জায়গার ব্যাংক আধিকারিকদের সঙ্গে গরুপাচারের টাকার হাত বদলের একটা যোগসূত্র রয়েছে। আর সেই উত্তরই খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা ৷
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দু'টি মামলা হাতছাড়া বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের