কলকাতা, 21 জুন: ‘সুচেতন’ হতে চান সুচেতনা । বুধবার সকালে বুদ্ধদেব কন্যার এহেন সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে ৷ যৌনতার প্রশ্নে সুচেতনা যে স্পষ্টবাদী, তা ঘনিষ্টবৃত্ত বরাবরাই জানে ৷ প্রান্তিকদের হয়ে তাঁর লড়াইয়ের কথাও কারও অজানা নয় ৷ কিন্তু এই লড়াইয়ে তিনি যে শুধু শরিকই হবেন না, যাপনও করবেন তা জেনেই অবাক একাংশ ৷
সমাজের মূলধারা বরাবর যা শিখিয়ে এসেছে, তার থেকে যারা খানিক আলাদা, আপাত ধারণার উল্টোস্রোতে গা ভাসিয়েছেন, তাঁদের নিয়েই একটি আলোচনা সভায় অংশ নিয়েছিলেন সুচেতনা ভট্টাচার্য ৷ সেখানেই বুদ্ধ-কন্যা স্পষ্ট করে দেন, তিনি তাঁর যৌন চাহিদা নিয়ে সচেতন ৷ লিঙ্গপরিচয়েও বদল আনতে চান তিনি ৷ সেই মর্মে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তিনি ৷ চান, সুচেতনা নয়, সুচেতন নামেই তাঁকে ডাকুক সমাজ ৷
সুচেতনার কথায়, পারিবারিক পরিচয় বড় নয় । ট্রান্সম্যান হিসেবে রোজ যে সামাজিক হেনস্থা হতে হয়, সেটা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছি । একইসঙ্গে নিজের পারিবারিক পরিচয় সম্পর্কেও তিনি চিন্তিত ৷ বাবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ । মা মীরা ভট্টাচার্যের পেসমেকার বসেছে, সদ্য ফিরেছেন হাসপাতাল থেকে । সংবাদমাধ্যমকে বুদ্ধ-কন্যা বলেন, ''দয়া করে আমার বাবা-মাকে এর মধ্যে টেনে আনবেন না । আমি নিজেকে মানসিকভাবে পুরুষ বলেই মনে করি । সেটা শারীরিক ভাবেও হতে চাই ।''
যৌনতার নিরিখে প্রান্তিকদের যে লড়াই, তা যারপরনাই কঠিন, অসহনীয় ৷ সমাজের বৃহদাংশের চেতনার অভাব তাদের আরও কোনঠাসা করে দেয় প্রতিমুহূর্তে ৷ সেখানে সুচেতনার মাথার ওপরে রয়েছেন তাঁর বাবা, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা হওয়ায় সুচেতনার লড়াইটা কি আরও খানিক কঠিন ? যাত্রাপথ আরও বন্ধুর ? এই প্রশ্নে অবশ্য দ্বিমত রয়েছেন বিদ্বজনদের ৷
যৌনেচ্ছা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা মানুষের এখনও নেই ৷ যাদের রয়েছে, যারা সামাজিক ধ্যানধারণার অচলায়তনে আটকে নেই, তাদের পক্ষে প্রাচীর ভাঙা খুব কঠিন ৷ সামাজিক কটাক্ষকে গায়ে না মেখে নিজের কথা শুনেছেন অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, "সুচেতনার পারিবারিক পরিচয় বা ওঁর নিজস্ব পরিচিতি, বেড়ে ওঠা হয়তো লড়াইটা খানিক সহজ করবে ৷ ওঁর চারপাশে যারা, তাঁরা বেশিরভাগই এই বিষয়ে সাবলীল ৷ ওঁর বেড়ে ওঠা শহরে, যেখানে এই বিষয়ে স্বচ্ছন্দ লোকের সংখ্যা খানিক বেশি ৷ তবে চাইব, সুচেতনার বিষয়টা যেনই রাজনৈতিক রঙ না মাখে ৷"
অনেকেরই আবার ধারণা, ক্ষমতার অলিন্দ কাছ থেকে দেখেছেন সুচেতনা ৷ ফলে সেখানে দাঁড়িয়ে সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে লড়াই আরও কঠিন ৷ যদিও সুচেতনা বরাবরই দৃঢ়চেতা, স্পষ্টবাদী ৷ ফলে নিজের পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করে অন্যের হাত ধরবেন তিনি ৷ ভরসা যোগাবেন প্রান্তিকদের ৷ এমনটাই আশা করছেন বাকিরা ৷
আরও পড়ুন: হাততালির আতঙ্ক তৈরি করার দায় তাঁদের...