কলকাতা, 31 অগাস্ট : 10 অগাস্ট থেকে 25 অগাস্ট পর্যন্ত ISRO ও MyGov.in যৌথ উদ্যোগে একটি কুইজ় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল । যেখানে ক্লাস এইট থেকে ক্লাস টেনের পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করতে পারত । অনলাইন এই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত দু'জন পড়ুয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ISRO-র বেঙ্গালুরু সেন্টারে চন্দ্রযান 2-র চাঁদে নামা সরাসরি দেখার সুযোগ ছিল । কিন্তু সমগ্র শিক্ষা মিশনের পশ্চিমবঙ্গের স্টেট প্রোজেক্ট ডিরেক্টর এই বিষয়টি জানিয়ে ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসারদের চিঠি দিয়েছেন গত 27 অগাস্ট । অর্থাৎ সময়সীমার দু'দিন পর । কিন্তু প্রতিযোগিতার দিন পার হয়ে যাওয়ার পর প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানানোর অর্থ কী? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে । শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক ও নিন্দাজনক । সঠিক সময়ে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে না জানানোয় অনেক পড়ুয়াই বঞ্চিত হল বলে মনে করছেন তাঁরা ।
27 অগাস্টের ওই চিঠি সমগ্র শিক্ষা মিশনের ডিস্ট্রিক্ট এডুকেশন অফিসারদের উদ্দেশে পাঠিয়েছিলেন সমগ্র শিক্ষা মিশনের স্টেট প্রোজেক্ট ডিরেক্টর আর. বিমলা (IAS) । সেই চিঠিতে লেখা হয়েছে, "আপনারা সবাই জানেন 2019 সালের 22 জুলাই চন্দ্রযান-2 লঞ্চ করেছে ISRO । চন্দ্রযান-2-র বিক্রম ল্যান্ডার 7 সেপ্টেম্বর চাঁদে নামবে বলে মনে করা হচ্ছে । এপ্রসঙ্গে আমায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আপনাদের জানাতে যে ISRO 10 অগাস্ট থেকে একটি অনলাইন কুইজ় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে । এটি MyGov.in-এর সঙ্গে আমাদের যৌথ উদ্যোগ । এই কুইজ়ে অংশগ্রহণ করার জন্য পড়ুয়াদের https://quiz.mygov.in ওয়েবসাইটে ভিজ়িট করতে হবে ।" কিন্তু চিঠিটি পৌঁছানোর আগেই এই প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যায় । ফলে প্রতিযোগিতার বিষয় জানাতেই পারেনি স্কুলগুলি । এতে পড়ুয়ারা বঞ্চিত হল বলেই মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ ।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "ISRO এই কুইজ়টা কন্ডাক্ট করছে 10-25 অগাস্ট । অথচ নোটিফিকেশনটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমগ্র শিক্ষা মিশন থেকে এল 27 অগাস্ট । যেখানে বাংলার কোনও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীই অংশগ্রহণ করতে পারল না । এর একমাত্র কারণ হল প্রশাসনিক ব্যর্থতা । যদি আমি দেখতাম যে আগেই এই নোটিফিকেশন ইশু হয়েছে কিন্তু স্কুলের ছাত্ররা গেল না অথবা পারল না তখন সেটা স্কুলের দায়িত্ব । কিন্তু এখন এই চিঠি নিয়ে কী হবে? কোনও স্কুলের কোনও ছাত্র-ছাত্রী কি অংশগ্রহণ করতে পারবে? পারবে না । সুতরাং এই চিঠি পাঠানোর কোনও যুক্তি আছে বলেই আমার মনে হয় না । এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, লজ্জাজনক এবং নিন্দাজনক ।"
এপ্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, "যাতে কেউ অংশগ্রহণ করতে না পারে তার চেষ্টা করা হল অফিশিয়ালি । এটা বড় একটা সুযোগ ছিল । কত ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করতে পারত । ISRO-র অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে জানতে পারত । চন্দ্রযান কী করবে, কবে চাঁদে নামবে সেই সম্পর্কে পড়াশোনা হত । সচেতনতার মাত্রাবৃদ্ধি পেত এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচার হত । কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হল । সরকার যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই কাজগুলো করে তাহলে তো বুঝতে হবে সরকার চালানোর যে পদ্ধতি সেটার সঙ্গে তাঁরা সম্পৃক্ত নয় । মানুষের জন্য নয় তারা ধান্দাবাজির জন্য সরকার চালায় ।"
একইভাবে এই চিঠি আগে এলে ভালো হত বলেই মনে করছেন পূর্ব মেদিনীপুরের সাবাজপুট সম্বোধী শিক্ষাতীর্থের প্রধান শিক্ষক নন্দীশ নিয়োগী । তিনি বলেন, "ওঁরাও পরে জানতে পেরেছেন কি না জানি না । আমাদের যদি আগে জানানো হত, আমরা চেষ্টা করতাম । হয়তো কোনওভাবে কোথাও যোগাযোগের অভাব থেকে গেছে । সেটা হওয়াটাও বাঞ্ছনীয় ছিল না । ঠিক সময়ে চিঠি এলে বাচ্চারা অবশ্যই উৎসাহিত হত । একটু আগে জানালে ভালো হত ।" এপ্রসঙ্গে বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, "না, আমরা জানাতে পারিনি ছাত্রীদের । যখন দেখেছি, তখন শেষ হয়ে গেছে । যা হয়নি, তা হয়নি । সেটা ভেবে আর লাভ নেই ।"
কিন্তু, কেন 25 অগাস্ট প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর 27 অগাস্ট চিঠি পাঠানো হল? সেবিষয়ে জানতে আর. বিমলার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয় । কিন্তু তিনি ETV ভারতের প্রতিনিধির পরিচয় শোনামাত্র ফোন কেটে দেন ।