কলকাতা ও রায়গঞ্জ, 30 এপ্রিল : আতঙ্কটা ছড়িয়েছিল বালিগঞ্জের পণ্ডিতিয়া রোডের আবাসনে যুবকের শরীরে কোরোনা ভাইরাস মেলার পরেই । তারপরই সর্তক হতে শুরু করেছিলেন শহরের আবাসনগুলির অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা । জরুরি ভিত্তিতে প্রায় সবক'টি আবাসনে ডাকা হয় বৈঠক । তারপরই নেওয়া হয় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত । এক একটি আবাসনের সিদ্ধান্ত এক এক রকম হলেও শহরের প্রায় সবক'টি আবাসনে বহিরাগতদের ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বেশিরভাগ আবাসনে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিচারক-পরিচারিকাদের কাজে আসাও । অনেক আবাসনে আবার গাড়িচালকদেরও আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে ।
পণ্ডিতিয়া বহুতল আবাসনে যুবকের কোরোনা সংক্রমণের পরই তার বাবা-মা এবং পরিচারিকার শরীরেও পাওয়া যায় ভাইরাস । তারপরই ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ডাকা হয় জরুরি বৈঠক । সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাইরের কাউকেই আবাসনে ঢুকতে দেওয়া হবে না । শুধুমাত্র প্রবীণ এবং অসুস্থদের দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা মানুষদের ঢুকতে দেওয়া হবে আবাসনে । তবে তাঁদের ঠিকভাবে স্যানিটাইজ়েশন প্রক্রিয়া মানতে হবে । নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে রাখা স্যানিটাইজ়ার দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করে তবেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলবে তাদের ।
একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শহরের অন্যান্য আবাসনগুলির ক্ষেত্রেও ।
শহরের এক নামী আবাসনের সম্পাদক এম ভি বিজু জানিয়েছেন, "খুব প্রয়োজন ছাড়া আবাসনের ভিতরে কোনও গাড়িচালককে আসতে দেওয়া হচ্ছে না । জরুরি প্রয়োজনে কেউ বেরোতে চাইলে নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন । নব্বই শতাংশ পরিচারিকাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে । শুধুমাত্র অসুস্থ, একাকি প্রবীণদের দেখভালের জন্য পরিচারিকাদের আসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তবে তাঁদেরকে প্রথমে আবাসনের মূল প্রবেশপথে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে । একইসঙ্গে তিনি আরও জানান, আবাসনের বেশিরভাগ পরিচারিকা এবং গাড়িচালকদের সবেতন ছুটি দেওয়া হয়েছে । শহরের বেশ কিছু আবাসনের বাইরে আবার করা হয়েছে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা । সেখানে রাখা থাকছে সাবান । সেই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়ার পরেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে ।
টালিগঞ্জের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রোডের 1 টলি গার্ডেন্স আবাসনে সাফাইকর্মী ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । প্রতি দু'ঘণ্টা অন্তর ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীরা লিফট স্যানিটাইজ় করছেন । ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী রঞ্জিত পাল বললেন, "খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আবাসনের কেউ বাইরে বেরোচ্ছে না । বাজার ও জরুরি জিনিসপত্র আমরা এনে দিচ্ছি বাসিন্দাদের । শুধুমাত্র সাফাইকর্মীরা কাজে আসছে । তাও তাঁদের আবাসনের বাইরে রাখা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর ভেতরে ঢুকতে হচ্ছে ।"
এ তো গেল কলকাতার ছবি । জেলাতেও সচেতনতার ছবিটাও একইরকম ।
লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার এক আবাসনে পুরোপুরিভাবে বাইরের লোকদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । আত্মীয়-স্বজন হোক বা বন্ধু-বান্ধব, কাউকেই আবাসনের ঢুকতে দেওয়ার হচ্ছে না । যাঁরা অতি প্রয়োজনে বাইরে বেরোচ্ছেন, তাঁদেরও আবাসনে ঢোকার আগে নিতে হচ্ছে একাধিক ব্যবস্থা । স্যানিটাইজ়ার দিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে তবেই ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে আবাসনে সিকিউরিটি গার্ড ।
আবাসনে প্রায় 50টি পরিবারের বাস । বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত আবাসিকরা লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই পুরোপুরিভাবে নিজেদেরকে বাইরের পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন । সংবাদপত্র বিক্রেতা হোক বা বাড়ির পরিচারিকা, বর্তমানে কাউকেই এই আবাসনের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না । বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লিফটও । যাতে কোনওভাবেই লিফটের মাধ্যমে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা । আবাসনের ব্যালকনি থেকে নিচে ব্যাগ ফেলে সবজি বিক্রেতাদের থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছেন আবাসিকরা ।
তবে আবাসনে বাইরে রয়েছে কয়েকজন চিকিৎসকের চেম্বার । সেখানে কয়েকজন বাইরে থেকে আসছেন । দিনভর সেখানে থাকছেন এবং যত্রতত্র থুতু ফেলছেন । এই বিষয়টি বর্তমানে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আবাসিকদের । পৌরসভা যদি এই বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ করে, তবে তাঁদের সুরক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে । এমনই মনে করছেন আবাসিকরা ।
আবাসন কমিটির সভাপতি সুজিত বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমরা আবাসিকদের সুরক্ষার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, সব করছি । কারও অত্যন্ত প্রয়োজন হলে তবেই সে বাড়ির বাইরে যাচ্ছি, না হলে নিজেরা গৃহবন্দী রয়েছি । কোনওভাবেই বাইরের লোককে আবাসনের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ।"
আবাসন কমিটির সম্পাদক ধ্রুব পাল বলেন, "আমরা লকডাউনের শুরু থেকেই বাড়ির পরিচারিকা, খববের কাগজ বিক্রেতা থেকে শুরু করে সবাইকেই আবাসনে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দিয়েছি । সব ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।"
আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী বিজয় মুখোপাধ্যায়ের মুখেও একই কথা । বলেন, "আমাকে কমিটি থেকে বলা হয়েছে কোনওভাবেই যাতে বাইরের কেউ এই আবাসনে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে । আমি সেই মোতাবেক সব দিকে নজর রাখি । লিফট বন্ধ রয়েছে। তাই সিঁড়ি ব্যবহার করে উপরে নিজেদের ঘরে যেতে হয় সবাইকে ।"