কলকাতা, 2 ডিসেম্বর: কলকাতাজুড়ে এখন শুধুই আকাশচুম্বী বহুতল। আর তার মাঝে প্রতি অলিগলিতে রয়েছে হাজারো স্মৃতির পসরা নিয়ে শতবর্ষ প্রাচীন অট্টালিকা। সময়ের সঙ্গে ভাঙা পড়ছে সেসব জরাজীর্ণ বাড়ি। বিলীন হচ্ছে ইতিহাস। তবে সেই শহরেই এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল। এমনই এক শতবর্ষ প্রাচীন বাড়ি ভাঙার আগে আবাসিকরা সেই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিচারণা করার সঙ্গেই পুরনো বাড়ির 'ফেয়ারওয়েল' দিলেন (House Farewell in Kolkata)।
ঘটনাটি দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটের ঘটনা। তৎকালীন রেঙ্গুন থেকে কলকাতায় আসেন ভূপেশ চন্দ্র দেওয়ানজী। পরিবার নিয়ে 1966 থেকে বসবাস শুরু করেন তিনি। ভাড়া থাকতে শুরু করেন নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট এলাকার একটি বাড়িতে। উলটো দিকে 9/5 বি নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট বিক্রি হবে জানতে পারেন। তখনই এই বাড়ি কেনেন তাঁরা। তিনতলা বাড়ি। নীচে দুই পরিবারের বসবাস। উপরের দু'টি তলায় দুই পরিবার থাকেন। বাড়িটি কত পুরনোটা নিয়ে লোকমুখে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন 1930 তৈরি হয়। কেউ আবার বলেন একটা ফলক ছিল তাতে 1903 লেখা ছিল।
বাড়ির ছেলে রোহণ দেওয়ানজী যার মস্তিষ্কপ্রসূত এই কর্মকাণ্ড তিনি বলেন, "ইচ্ছা ছিল না এই বাড়ি বিক্রি করার। আমাদের তিন পুরুষের বাড়ি। মৃত্যুঞ্জয় মিত্র আসল মালিক ছিলেন। এই বাড়ির নাম জগৎ নিবাস। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বাবার নামে হয়েছিল এই বাড়ি। তিন তলায় যারা থাকতেন তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। ফলে ভাঙতে শুরু করে। তিনতলা ঠিক করতে সে খরচ কেউ দিতে পারেননি। তাই বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত। কত স্মৃতি এই বাড়ি ঘিরে। সামনে ধর্মদাস স্কুলে বিদেশি লোকজন আসতেন। আমাদের বাড়ির ছবি তুলতেন। বাইরে থেকে লোকজন ছবি তুলছেন তা আমরা দেখতাম।"
আরও পড়ুন: মনের জানালা খুলতে চান ! আপনার জন্য অপেক্ষা করছে 'স্ট্রেঞ্জার লাইব্রেরি'
তিনি আরও বলেন, "প্রতিবার দুর্গাপুজোয় এই বাড়ি সাজানো হয় স্থানীয় ক্লাবের পক্ষে। এত বছরের স্মৃতি । দাদু, ঠাকুমা মারা যাওয়া থেকে চার ভাই-বোন এই বাড়িতেই জন্ম। বাবা, কাকাদের তিন ভাইয়ের বিয়ে এই বাড়িতেই। বাইরে যারা থাকেন সকলেই এখানে প্রতি পুজোয় চলে আসতেন। পুজোর মজা এখানেই। একটা তথ্যচিত্র বানাব ভাবলাম। এই বাড়ি নিয়ে কিছু গল্প লোকজনকে জানানোর ইচ্ছা ছিল আমার। মাসখানেক ধরে প্ল্যান করি। সেইমতো এই বাড়ির তিনটি ঘর তিনটি থিমে সাজানো হয়।"