কলকাতা, 14 এপ্রিল : করোনা পরিস্থিতির জেরে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা সাময়িকভাবে পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এই খবরের জেরে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের কপালে। এই ঘোষণার জেরে উদ্বেগ বেড়েছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও। যদিও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের মতে দেশের ছাত্রছাত্রীদেরও বুঝতে হবে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা সংগঠিত করতে হলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠবে। এমনিতেই করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের জোয়ারে গোটা দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ প্রত্যেকদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই কঠিন সময়ে এই ধরনের বড় পরীক্ষা সংঘটিত হলে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেইসঙ্গে সংক্রমণ আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠতে পারে। তাই শিক্ষক মহল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও দ্বিমতও রয়েছে।
চিরশ্রী দাশগুপ্ত ভেঙ্কটেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দেশ ও ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের কথা ভেবে। এবং পড়ুয়াদের বুঝতে হবে তারাও দেশের নাগরিক তাই দেশের নাগরিক হিসাবে তাদেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে। এই ধরনের বড় পরীক্ষা সংগঠিত করতে গেলে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন 2014 সালে সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষার ক্ষেত্রে ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট করা হতো। সারা বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের ধাপে ধাপে মূল্যায়ন করা হতো। সেই সময়ে ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট উন্নতি করেছে এবং তাদের পড়াশোনার মান যথেষ্ট ভাল ছিল। এরপর 2018 সাল থেকে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নিলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক তৈরি হবে। যা ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে ভালো হবে না। তাই এই সিদ্ধান্ত উপযুক্ত বলে মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন- ঘরে ফেরার তাড়া, মুম্বইয়ের লোকমান্য তিলক টার্মিনাসের বাইরে ভিড় পরিযায়ীদের
কনসালটেন্ট একাডেমিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সুচিস্মিতা বাকচি সেন, জানিয়েছেন গতবছর পরিস্থিতি অনেক বেশি জটিল ছিল। সেই সব জটিলতা কাটিয়ে ও অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। এখন শহর গুলির সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে এখন মোবাইলে অনলাইনে ক্লাস করছে। ছাত্রীদের খাতায়-কলমে মুখস্ত করে পরীক্ষা না দিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে। নানা পদ্ধতিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু সেটা না করে পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হল। অবশ্য দশম শ্রেণির পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই তার কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দশম শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পঠন-পাঠন শুরু করে দেয় ছাত্রছাত্রীরা। সেই দিক থেকে ভালোই হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের এই কোভিদ পরিচিতির মধ্যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ না দিয়ে। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেকটাই আলাদা। দ্বাদশ শ্রেণীর ক্ষেত্রে পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়া তে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আরও বেশি বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাকে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নিয়ে পছন্দমত কলেজে ভর্তি হওয়ার। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী সেই জীবনের প্রথম চরণে এই ধরনের অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়বে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ জীবনে ।