কলকাতা, 9 মে : সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠে এসেছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে । দু'টি লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টসের কাছে । দু'টি অভিযোগই উঠেছে প্রেসিডেন্সির এক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে । দ্রুত অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া ও অভিযুক্তকে ক্যাম্পাস থেকে সাসপেন্ড করার দাবিতে একাধিকবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ামক ও ডিন অফ স্টুডেন্টসকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা । কিন্তু আইনগত কারণে তাঁদের দাবি মেনে অভিযুক্ত পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা যাবে না বলে জানান ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণকুমার মাইতি । তবে, সাম্প্রতিককালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পড়ুয়াদের সেফটি এবং সিকিউরিটির সব দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের, এই মর্মে লিখিত দিয়েছেন তিনি । তাঁর আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে রাত সাড়ে 9টায় ঘেরাও তুলে নেন বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা ।
কয়েকদিন আগে প্রেসিডেন্সির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন প্রেসিডেন্সিরই এক ছাত্রী । বিশ্ববিদ্যালয় ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণকুমার মাইতিকে ই-মেইলে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী । তারপরে ওই একই ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন আরও তিনজন ছাত্রী । গত সোমবার এই বিষয়ে ডিন অফ স্টুডেন্টসের কাছে ডেপুটেশন দেন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারা । অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, "প্রথমে আমরা গেছিলাম অভিযুক্ত ছাত্রের সাসপেনশনের দাবি নিয়ে । পরে আরেকটা দাবি নিয়ে যাই তা হল PUCASH (প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি সেল এগেইনস্ট সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট) রিফরমেশন । আমাদের কী কী ডিমান্ড ফুলফিল করতে হবে সেটা নোট ডাউন করেছিলাম । লিখিতভাবে জমাও দিয়েছিলাম । কিন্তু সেদিন ডিন অফ স্টুডেন্টস বলেন, উনি সাসপেন্ড করতে পারবেন না । কারণ, আইনগতভাবে যতক্ষণ না ওকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ সাসপেন্ড করা যায় না । তাতে সবাই আবেদন করে যে, ওকে ডিবারড করার চেষ্টা করা হোক যাতে ওকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়া হয় । তাতে উনি বলেছিলেন টাইম চাই । যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল কনসালটেন্টের সঙ্গে কথা বলে উনি জানাতে পারেন । শেষ পর্যন্ত ওইদিনই PUCASH-এ ছাত্র প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।
সোমবার বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা ডিন অফ স্টুডেন্টসকে উত্তর দেওয়ার জন্য সময় দিয়েছিল । কিন্তু সেই সময় পার হয়ে গেলে গতকাল আবার ডিন অফ স্টুডেন্টসের সঙ্গে কথা বলতে যান পড়ুয়ারা । কিন্তু উনি জানান, লিগ্যালিভাবে এটা করা সম্ভব নয় । আমরা হিয়ারিং ডেট এগিয়ে আনতে বললেও তাও তিনি UGC নিয়ম অনুযায়ী সম্ভব নয় বলেন । কারণ, মিনিমাম 10 দিনের একটা নোটিশ দিতে হয় দু'পক্ষকেই । সেটা মেনেই নোটিশটা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিন অফ স্টুডেন্টস । কিন্তু, বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা অভিযুক্তকে ডিবারড না করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি । তারা রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনারের সঙ্গে দেখা করতে যায় । "
অভিযোগকারী ছাত্রী আরও বলেন, "আমরা তখনও চাইছিলাম ওকে ডিবারড করা হোক । তাই আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলব । কিন্তু রেজিস্ট্রার বলেন, তিনি এগুলো নিয়ে কোনও কথা বলতে পারবেন না । এগুলো গোটাটাই ডিন করেন । তাই ডিন যা বলবেন তাই হবে । তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করা হবে । কিন্তু আমরা ঘেরাও করতে গিয়ে দেখি অফিস বন্ধ করে দিয়েছে । তখন আমরা বুঝতে পারি ওঁরা বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন । তাই রেজিস্ট্রার বেরোনোর চেষ্টা করলে প্রায় 25 জন স্টাফ তাঁকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন । তখন তাঁকে আটকে দেওয়া হয় ।
সেই সময় একটা ধস্তাধস্তির পরিস্থিতি তৈরি হলে রেজিস্ট্রার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন । তারপরে রেজিস্ট্রার এসে কিছু কথা বলেন । মূলত বলেন, ওঁরা আইনত এটা করতে পারেন না । এটা করলে আইনি সমস্যা হবে। তাতে আমরা বলি যে, তাহলে আমাদের সেফটি, সিকিউরিটির দায়টা আপনারা নিন যে কারোর কিছু হবে না । ডিন সেটা লিখিত দেন । যে রিসেন্ট ডেভলপমেন্ট হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা মাথায় রেখে পড়ুয়াদের সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের । তারপরে আমরা রাত 9টা নাগাদ ঘেরাও তুলে নিই ।"
তবে, এখানেই শেষ নয় বলে জানাচ্ছেন ওই ছাত্রী । তিনি জানান, PUCASH-এর রিফরমেশন নিয়ে তাঁরা যে দাবিগুলো তুলেছেন সেগুলো নিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে যাবেন ।