ETV Bharat / state

প্রাণের উপর হামলা, দিলীপ কুমার-কবিগুরুর স্মৃতি; শতবর্ষের আলোকে ধুঁকছে মহানগরীর হেরিটেজ টুং অন

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 23, 2023, 2:41 PM IST

Updated : Nov 23, 2023, 3:15 PM IST

Century old Tung on Church: শতবর্ষের আলোকে ধুঁকছে মধ্য কলকাতার গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ টুং অন চার্চ ৷ একসময়ে এর ভেতরেই ছিল কলকাতার প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ নানকিং । সেখানে আসা যাওয়া ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দিলীপ কুমার, প্রাণ-সহ আরও অনেকের ৷

Century old Tung on Church
মহানগরীর হেরিটেজ টুং অন

কলকাতা, 23 নভেম্বর: সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে দু'পা এগোলেই বিরাট বিরাট কংক্রিটের বহুতলের ফাঁকেই অমলিন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে লাল ইটের তৈরি দোতলা টুং অন চার্চ । এটি চাইনিজ স্থাপত্যের একটি প্রাচীন নিদর্শন । এর ভিতরেই নিচের অংশে ছিল কলকাতার প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ নানকিং । যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চলল । সেই রেস্তোরাঁয় বহুবার পা পড়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বলিউডের অভিনেতা দিলীপ কুমার-সহ আরও অনেকের ৷ ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে অভ্যস্ত প্রাণকে এখানে হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ টুং অনের 100 বছরের প্রাপ্তি শুধু এমনই নানা স্মৃতি ও গ্রেড 1 হেরিটেজ তকমা । শতবর্ষের আলোকেও অবহেলার অন্ধকারে ধুঁকছে 1924 সালে তৈরি টুং অন ।

ভবনের সামনে এখন পার্কিং করে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি । পা ফেলার জায়গা নেই । সামনে কলকাতা পৌরনিগমের কম্প্যাক্টর স্টেশন । উপচে পড়ছে আবর্জনা । টুং অন চার্চের গেটে এখন দিনভর ঝোলে তালা । পাশেই বসবাসকারী এক চিনা ব্যক্তি ওয়াই হো শোনালেন, 100 বছরের বৃদ্ধ এই ভবনের কিছু স্মৃতির কথা । তাঁর বয়সও নয় নয় করে প্রায় 85 বছর । কলকাতার প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ নানকিং খোলার পর থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । এখানে মাঝে মধ্যেই আসতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

ওয়াই হো বলেন, "এই নানকিং রেস্তোরাঁয় খেতে এসে এক সময় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন হিন্দি ফিল্মের বিখ্যাত ভিলেন প্রাণ । তাঁর অভিনয় এতটাই ভালো ছিল যে, মানুষের মনে তিনি প্রকৃত ভিলেন হিসেবেই গেঁথে ছিলেন । তাই তিনি যখন এখানে খেতে এসেছিলেন, তখন আশপাশের ছেলেরা তাঁকে দেখে রাস্তায় পড়ে থাকা ইট তুলে মারতে শুরু করেন । তখন রেস্তোরাঁর কর্মীরা ক্যাশবাক্স থেকে টাকা বের করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । সেগুলো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লোকজন । সেই সুযোগে প্রাণকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় । তবে প্রাণ ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খুবই ভালো মানুষ । এখানে আসতেন দিলীপ কুমারও । তখন তিনি গোটা ভারতে বিখ্যাত । হিন্দি সিনেমার পরিচিত মুখ । এসেছেন বাংলার বেশকিছু নায়ক নায়িকা ।
শুধু প্রাণ দিলীপ কুমার বা নার্গিস নন, এখানে একসময় আসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তবে ভারত-চিন যুদ্ধের পর ধীরে ধীরে এই রেস্তোরাঁয় লোকজনের আনাগোনা কম হয়ে যায় ।"

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে চিনা পরিবার এই রেস্তোরাঁর মালিক ছিল, তারা উপরে থাকা মন্দিরটিতে কারওকে যেতে দিত না । এক সময় গোটা টুং অন বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল তারা । সেই সময় আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তা আটকানো হয় । আদালতে মামলা চলাকালীন নানকিং রেস্তোরাঁর মালিকের মৃত্যু হয় । ফলে সেখানেই মামলা থেমে যায় । পরে একটি ট্রাস্ট এর দেখভাল করত । তবে বিভিন্ন সময় এই ভবন প্রোমোটারের নজরে এসেছে । শেষে এই ভবন ও আশপাশের আরও কয়েকটি চিনা স্থাপত্যকে হেরিটেজ গ্রেড 1 হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এমন নানা ভালো-মন্দ ঘটনার স্মৃতির ভার নিয়েই 100 বছরের আলোকে দাঁড়িয়ে এই টুং অন ।

বাইরের দেওয়ালে চিনা অক্ষর আর মাথার উপর ইংরেজিতে লেখা টুং অন । এটা দেখেই চিনতে হয় । ভিতরে এখন কারওকে ঢুকতে দেওয়া হয় না । বাইরে থেকে ভিতরের অংশ ধুলোয় ঢেকেছে । রাস্তার দিক থেকে যে ক'টা জানালা দেখা যায়, সেগুলোর কাচ ভাঙা । সাত কূলে কেউ না থাকা একজন বৃদ্ধের যেমন অবস্থা হয়, শেষ বয়সে ঠিক তেমনই হাল শতবর্ষে পা দিতে চলা মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার এলাকার এই চিনা স্থাপত্যের ৷

আরও পড়ুন:

  1. চলমান ট্রাম যেন দুর্গাপুজোর ক্যানভাস, নস্ট্যালজিয়ার হাতছানি
  2. কবিগুরুর শান্তিনিকেতন পেল 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা, অভিনন্দন মোদি-মমতার

কলকাতা, 23 নভেম্বর: সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে দু'পা এগোলেই বিরাট বিরাট কংক্রিটের বহুতলের ফাঁকেই অমলিন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে লাল ইটের তৈরি দোতলা টুং অন চার্চ । এটি চাইনিজ স্থাপত্যের একটি প্রাচীন নিদর্শন । এর ভিতরেই নিচের অংশে ছিল কলকাতার প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ নানকিং । যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চলল । সেই রেস্তোরাঁয় বহুবার পা পড়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বলিউডের অভিনেতা দিলীপ কুমার-সহ আরও অনেকের ৷ ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করে অভ্যস্ত প্রাণকে এখানে হামলার মুখে পড়তে হয়েছিল ৷ টুং অনের 100 বছরের প্রাপ্তি শুধু এমনই নানা স্মৃতি ও গ্রেড 1 হেরিটেজ তকমা । শতবর্ষের আলোকেও অবহেলার অন্ধকারে ধুঁকছে 1924 সালে তৈরি টুং অন ।

ভবনের সামনে এখন পার্কিং করে দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি । পা ফেলার জায়গা নেই । সামনে কলকাতা পৌরনিগমের কম্প্যাক্টর স্টেশন । উপচে পড়ছে আবর্জনা । টুং অন চার্চের গেটে এখন দিনভর ঝোলে তালা । পাশেই বসবাসকারী এক চিনা ব্যক্তি ওয়াই হো শোনালেন, 100 বছরের বৃদ্ধ এই ভবনের কিছু স্মৃতির কথা । তাঁর বয়সও নয় নয় করে প্রায় 85 বছর । কলকাতার প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁ নানকিং খোলার পর থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । এখানে মাঝে মধ্যেই আসতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।

ওয়াই হো বলেন, "এই নানকিং রেস্তোরাঁয় খেতে এসে এক সময় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন হিন্দি ফিল্মের বিখ্যাত ভিলেন প্রাণ । তাঁর অভিনয় এতটাই ভালো ছিল যে, মানুষের মনে তিনি প্রকৃত ভিলেন হিসেবেই গেঁথে ছিলেন । তাই তিনি যখন এখানে খেতে এসেছিলেন, তখন আশপাশের ছেলেরা তাঁকে দেখে রাস্তায় পড়ে থাকা ইট তুলে মারতে শুরু করেন । তখন রেস্তোরাঁর কর্মীরা ক্যাশবাক্স থেকে টাকা বের করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । সেগুলো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লোকজন । সেই সুযোগে প্রাণকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় । তবে প্রাণ ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খুবই ভালো মানুষ । এখানে আসতেন দিলীপ কুমারও । তখন তিনি গোটা ভারতে বিখ্যাত । হিন্দি সিনেমার পরিচিত মুখ । এসেছেন বাংলার বেশকিছু নায়ক নায়িকা ।
শুধু প্রাণ দিলীপ কুমার বা নার্গিস নন, এখানে একসময় আসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । তবে ভারত-চিন যুদ্ধের পর ধীরে ধীরে এই রেস্তোরাঁয় লোকজনের আনাগোনা কম হয়ে যায় ।"

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে চিনা পরিবার এই রেস্তোরাঁর মালিক ছিল, তারা উপরে থাকা মন্দিরটিতে কারওকে যেতে দিত না । এক সময় গোটা টুং অন বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল তারা । সেই সময় আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তা আটকানো হয় । আদালতে মামলা চলাকালীন নানকিং রেস্তোরাঁর মালিকের মৃত্যু হয় । ফলে সেখানেই মামলা থেমে যায় । পরে একটি ট্রাস্ট এর দেখভাল করত । তবে বিভিন্ন সময় এই ভবন প্রোমোটারের নজরে এসেছে । শেষে এই ভবন ও আশপাশের আরও কয়েকটি চিনা স্থাপত্যকে হেরিটেজ গ্রেড 1 হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এমন নানা ভালো-মন্দ ঘটনার স্মৃতির ভার নিয়েই 100 বছরের আলোকে দাঁড়িয়ে এই টুং অন ।

বাইরের দেওয়ালে চিনা অক্ষর আর মাথার উপর ইংরেজিতে লেখা টুং অন । এটা দেখেই চিনতে হয় । ভিতরে এখন কারওকে ঢুকতে দেওয়া হয় না । বাইরে থেকে ভিতরের অংশ ধুলোয় ঢেকেছে । রাস্তার দিক থেকে যে ক'টা জানালা দেখা যায়, সেগুলোর কাচ ভাঙা । সাত কূলে কেউ না থাকা একজন বৃদ্ধের যেমন অবস্থা হয়, শেষ বয়সে ঠিক তেমনই হাল শতবর্ষে পা দিতে চলা মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার এলাকার এই চিনা স্থাপত্যের ৷

আরও পড়ুন:

  1. চলমান ট্রাম যেন দুর্গাপুজোর ক্যানভাস, নস্ট্যালজিয়ার হাতছানি
  2. কবিগুরুর শান্তিনিকেতন পেল 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' তকমা, অভিনন্দন মোদি-মমতার
Last Updated : Nov 23, 2023, 3:15 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.