কলকাতা, 12 অক্টোবর : আদি গঙ্গার গোপাল ঘাটের ধারে শশী শেখর বোস রোড ৷ বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের জল নেওয়ার লাইনে ঝামেলা বাধে রোজই ৷ কিন্তু সেখানে একটি মেয়েকে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সঞ্জয় প্রসাদ ৷ তারপরই খোঁজ শুরু হয় মেয়েটির ৷ সঞ্জয় নিজে একসময় বক্সিং করতেন ৷ রিং থেকে সরে এলেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ৷ অফিস শেষ হতেই বাড়ি না গিয়ে পাড়ায় খোঁজ শুরু করেন তিনি ৷ সমস্যা হয়নি ৷ সামান্য জিজ্ঞাসার পরই মেয়েটির বাড়ি খুঁজে পেয়ে যান সঞ্জয় ৷
কোনও ভনিতা না করেই মেয়েটিকে নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন ৷ হতবাক হয়ে ঘুম থেকে উঠে এসেছিলেন সুরেশ মল্লিক ৷ কর্পোরেশনের সাফাই কর্মীর কাজ ছাড়াও বিভিন্ন আবাসনে সাফাই করার কাজ করেন ৷ সাতজনের পেটের ভাত যোগাতে বাড়তি পরিশ্রম করতেই হয় ৷ প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও উটকো ব্যক্তি এসে খোঁজ করছে ৷ কিন্তু সঞ্জয়ের আন্তরিক ব্যবহার ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মেয়ে মনিকা মল্লিককে বক্সিং শেখার অনুমতি দেন ৷
শশী শেখর বোস রোডের বস্তিতে বক্সিং বা পড়াশোনার হাত ধরে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা হয়তো দিবাস্বপ্ন । একটা উঠানে সঞ্জয়ের বক্সিং স্কুল । আবার সকালে ভবানীপুরের গোরস্থানে এখানকার 120 জন বক্সিং শিক্ষার্থী অনুশীলন করেন । বিকেলে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চলে বক্সিং অনুশীলন । এভাবেই বাংলার মহিলা বক্সিংয়ে আলো দেখাচ্ছেন মনিকা মল্লিকরা ।
আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের ছাত্রী মনিকা জানান, বক্সিং করতে ভয় লাগে না । বক্সিং রিংয়ে জীবন খুঁজে পান । সারা বাংলা বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে 48 কেজি বিভাগে রুপো পাওয়া ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতা জেলা স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে 52 কেজি বিভাগে সোনা জিতেছেন মনিকা । রাজ্য বক্সিং ও দক্ষিণ কলকাতা জেলা বক্সিংয়ের জুনিয়র বিভাগে পরপর দু'বছর সোনা জয় তাকে ঘিরে বড় সাফল্যের আশা জাগাচ্ছে । জাতীয় পর্যায়ে পদকের দৌড়ে জায়গা না করতে পারলেও মনিকা যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা মানছেন সকলেই । জাতীয় স্কুল ও চ্যাম্পিয়নশিপে অল্পের জন্যে শেষ চারে জায়গা হয়নি ।
প্রশিক্ষক সঞ্জয় প্রসাদ জানান, পরিকাঠামো, সচেতনার অভাব তাঁর বক্সিং স্কুলের শিক্ষার্থীদের বড় সমস্যা । মনিকাকে তিনি আগলে রাখছেন । কিন্তু লড়াইটা বেশ কঠিন । মেরি কমের সাফল্য ওদের কাছে প্রেরণা । মনিকা মনে করেন, মেরি কম পারলে তাঁরাও পারবেন । পড়াশোনা আলো দেবে । বক্সিং তাদের স্বচ্ছলতা আনবে । তাই বক্সিং রিংয়ে সাফল্যকে পাখির চোখ করতে চান । এক কামরার ঝুপড়িতে গাদাগাদি করে দিন যাপন । অভাবের জোরালো হাতছানিতে দিকভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । তা সত্ত্বেও মেরি কমের অদৃশ্য উপস্থিতি লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা দেয় ।