কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর: রাজভবনে পুলিশি নজরদারির অভিযোগ। এই ঘটনাকে সামনে রেখে চড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। বিশেষ করে যে রাজ্যের সরকার চলে রাজ্যপালের নামে, সেখানে পুলিশি নজরদারির অভিযোগ আসলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে পুলিশ ব্যবস্থার উপর রাজভবনের অনাস্থা। আর এই নিয়েই সরব শাসক থেকে বিরোধী দু'পক্ষই। এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কংগ্রেস যেমন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অবিশ্বাসের পরম্পরা এসেছে বিজেপি থেকে। সেখান থেকেই এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে ।
- সিপিএম বলছে, রাজভবনের এই অভিযোগ আসলে পুলিশের উপর অনাস্থা।
- বিজেপির মত, যে রাজ্যে মন্ত্রী বলেন, রাজ্যপাল ভ্যাম্পায়ার সেখানে এমন ঘটনা স্বাভাবিক।
- তৃণমূল বলছে, বিজেপিকে খুশি করতে সরকারকে বিব্রত করতে চাইছে রাজভবন।
এদিন এই বিষয়টি পর্যালোচনা করতে গিয়ে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করেছিল শাসকদলের সঙ্গে ৷ এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, "মহামহিম রাজ্যপাল বিজেপির নির্দেশে চলছেন। সাংবিধানিক প্রধান হয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান এবং নির্বাচিত সরকারকে অবমাননা করে একটি সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করছেন।" তিনি দেখেছেন বিজেপিকে খুশি করতে পারলে সরাসরি রাজ্যপাল থেকে উপরাষ্ট্রপতি হওয়া যায়। আগামিদিনে যাতে বড় কিছু পাওয়া যায় সেজন্য তিনি সবরকমভাবে রাজ্যকে অসহযোগিতা করছেন এবং সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছেন।"
বিষয়টি নিয়ে ইটিভি ভারত বিজেপিরও প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম। বিজেপি নেতা তথা দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূলের এক মন্ত্রী রাজ্যপাল সম্পর্কে ভ্যাম্পায়ার বা সাদা হাতির মতো শব্দ ব্যবহার করেন। সেদিক থেকে নজরদাররির বিষয়টি কোনওভাবেই অস্বাভাবিক নয়।"
এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী রিজু ঘোষাল। তিনি বলছেন, সবটাই পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকে হচ্ছে। তিনি বলেন, "পারস্পরিক সমন্বয়ে যখন নষ্ট হলে অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। এই অবিশ্বাস থেকেই পরবর্তীকালে নজরদারির মতো এ ধরনের অভিযোগ পালটা অভিযোগ ওঠে। ভারতবর্ষে সমন্বয়ের যে পরিমণ্ডল তাকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নষ্ট করেছে বিজেপি। আর এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমানে এমন একটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরি হয়েছে রাজ্যপাল সাংবিধানিক পদ। তিনি সেই পদে বসেও রাজনীতিকের মত বিবৃতি দিচ্ছেন, সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা করছেন। আবার সরকারপক্ষ রাজ্যপালকে বলছে বিজেপির এজেন্ট। জায়গা থেকে এই ধরনের ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।"
অন্যদিকে, এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্যপাল এবং সরকারের মধ্যে এই সংঘাত মোটেই ভালো বার্তা দিচ্ছে না। রাজ্যের সরকার চলে রাজ্যপালের নামে। এই রাজ্যপাল তাঁর পুলিশের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না। রাজভবনের এই অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক মনোভাব থেকে পুলিশ প্রশাসনকেও বিভাজিত করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা মোটেই ভালো হচ্ছে না। এটা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। যা চলছে তাকে অসভ্যতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।"
আরও পড়ুন: রাজভবনে পুলিশি নজরদারির অভিযোগ, চড়ছে উত্তাপ