কলকাতা, 3 এপ্রিল : আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (Aliah University Vice Chancellor) অকথ্য গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রনেতা গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলকে গ্রেফতার করল টেকনো থানার পুলিশ । জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ শনিবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো ৷ যেখানে দেখা গিয়েছে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহম্মদ আলিকে তাঁর অফিসের মধ্যে ঢুকে ঘিরে ধরে অকথ্য ভাষায় গালগাল করছে, হুমকি দিচ্ছে গিয়াসদ্দিন ও তার দলবল ৷ উপাচার্যকে চড় মারর কথাও শোনা গিয়েছে এই ছাত্রনেতার মুখে ৷ যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷
অভিযোগ, ওই ছাত্রনেতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য ৷ যদিও তৃণমূলের দাবি, ওই অভিযুক্তের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই ৷ গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলকে সম্প্রতি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করেছিল বলে জানা গিয়েছে ৷ ভাইরাল ভিডিয়োতে উপাচার্যকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করার পাশাপাশি চড় মারাও কথাও শোনা গিয়েছে গিয়াসউদ্দিনের মুখে ৷ "ওই গালে দুটো চড়িয়ে দেব । আমার চড়ে প্রচুর লাগে । তোর যে ক’টা ছেলে আছে জিজ্ঞাসা করে নিবি ।’’ উপাচার্যের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা গিয়েছে অভিযুক্ত ওই ছাত্রনেতাকে ৷ এই ঘটনায় শিউরে উঠছেন শিক্ষাবিদরা ৷ কোনও ছাত্র যে একজন উপাচার্যের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করতে পারে তা ভেবেই স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছে শিক্ষামহল ৷ ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক এবং মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর কুণাল ঘোষ বলেছেন, “এই ঘটনা নিন্দনীয় । দলের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই । এই ঘটনার নিন্দার ভাষা নেই । পুলিশ তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে । বিরোধীদের থেকেও বেশি প্রতিবাদ করছি । অভিযুক্তকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে । তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে অস্বস্তিতে ফেলতে এটা চক্রান্ত । রাজ্যের তিন বিরোধী দল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে ৷” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগাযোগ নেই । অতীতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে এসেছে । আর সে কারণেই তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ।
আরও পড়ুন : মৌনতা ভেঙে রাজ্যের হিংসায় সরব বিশিষ্টরা, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি অপর্ণা-শ্রীজাত-অনুপমদের
উপাচার্য হেনস্থার এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ বলছেন,“শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে । এই ঘটনায় আমার হৃদয় রক্তাক্ত । ” রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া ,“তৃণমূল ছাত্রনেতার এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না । এই বাঁদড়ামির সঙ্গে আমি পরিচিত । সহ্য করা যায় না । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভদ্র । উনি শান্ত ছিলেন । আমি হলে থাপ্পর মেরে দিতাম । ” সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন,“এই ঘটনার পরেও তা লঘু করে দেখানোর চেষ্টা হবে । আরাবুলকে নিয়েও অতীতে হয়েছে । এরা এই ঘটনার উত্তরসূরী । এদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা হয় ।” সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই'য়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যও কড়া সমালোচনা করেছেন । বলেছেন, “শিউড়ে ওঠার মত ঘটনা । তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত এক নেতা সাঙ্গপাঙ্গ জুটিয়ে যে অশ্রাব্য ভাষা এবং ভঙ্গিমায় উপাচার্যকে আক্রমণ করেছে তাতে একজন ছাত্র রাজনীতির কর্মী হিসেবে আমার লজ্জা করছে । এই ঘটনা প্রথম নয় । তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে হয়ে চলেছে । আমরা এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে কড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি । ”