বেঙ্গালুরু, 15 ফেব্রুয়ারি: ফের চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে অবতরণ করবে ভারতের চন্দ্রযান ৷ অর্থাৎ চতুর্থ চন্দ্রযান মিশন হবে ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি অনুভা জৈনকে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন জানিয়েছেন 2027 সালে চতুর্থ চন্দ্রযান মিশন হবে ৷ এছাড়া 2026 সালে গগনযান এবং সমুদ্রযান মিশন পরিচালনার কথা রয়েছে ৷
তৃতীয় মিশনের তুলনায় চতুর্থ চন্দ্রযান মিশনের গুরুত্ব কিছুটা আলাদা ৷ সেই বিষয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চেয়ারম্যান বলেন, "তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনে চন্দ্রপৃষ্ঠে সফ্ট ল্যান্ডিং হয়েছে ৷ চাঁদের মাটিতে খনিজ, ইলেক্ট্রন ক্লাউড, থার্মাল উপাদানের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে ৷ চন্দ্রপৃষ্ঠে কম্পন কেমন হয়, সেই বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে এই মিশন ৷ চতুর্থ চন্দ্রাভিযান একটা বড়সড় পদক্ষেপ ৷ এই মিশনে চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে নামবে চন্দ্রযান ৷ শুধু তাই নয়, সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে এবং ফের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে ৷"
চতুর্থ চন্দ্রযানে যে উপগ্রহটি পাঠানো হবে তার ওজন 9 হাজার 200 কেজি ৷ তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনে উপগ্রহের ওজন ছিল 4 হাজার কেজি ৷ ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন বলেন, "এই বিপুল আকৃতির জন্য দু'টি মার্ক-3 রকেটের মাধ্যমে চতুর্থ চন্দ্রযান মিশনের উপগ্রহটিকে উৎক্ষেপণ করা হবে ৷ পাঁচটি মডিউলের সঙ্গে দু'টি স্ট্যাক থাকবে ৷ এই মডিউলগুলি পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরবে ৷ সেই সময় প্রোপালশন সিস্টমটি পৃথক হবে ৷"
তিনি আরও জানান, চারটি মডিউল চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে ৷ এরপর দু'টি মডিউল চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে ৷ ইসরোর চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন ব্যাখ্যা করেন, শুধুমাত্র একটি মডিউল চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে আসবে ৷ একটি মডিউলকে চাঁদের পৃষ্ঠেই রেখে দেবে ইসরো ৷
ইসরোর শীর্ষ কর্তা নিশ্চিত করেন, আগামী দিনে বেশ কয়েকটি মিশনে ছাড়পত্র পেয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ৷ তার মধ্যে রয়েছে শুক্রে অভিযান এবং মঙ্গলের কক্ষপথে অভিযান ৷ এই সবকিছুর মাঝেও প্রধান লক্ষ্য তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনেরই উল্লেখযোগ্য পরিবর্ধিত 'লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন মিশন' (এলইউপিইএক্স) ৷
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার উচ্চাধিকারিক ভি নারায়ণন বলেন, "তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনে 25 কেজির রোভার ছিল ৷ এই লুপেক্স মিশনে 250 কেজির একটি রোভার থাকবে ৷" এই মিশনে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবে জাপানের এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জেএএক্সএ) ৷
ইসরোর চন্দ্রযান মিশন
প্রথম দু'টি চন্দ্রযান মিশনে চন্দ্রপৃষ্ঠ, তার নীচের স্তরের সাব-সারফেস বা উপ-পৃষ্ঠ, কক্ষপথের প্ল্যাটফর্মের বাইরে এক্সোসস্ফিয়ার নিয়ে গবেষণা হয়েছে ৷ দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনের অপটিক্যাল পেলোডসগুলিকে বিশ্বের সেরা বলে উল্লেখ করেন ইসরোর চেয়ারম্যান ৷ তিনি বলেন, "দ্বিতীয় চন্দ্রযানে উচ্চ-রেজোলিউশন সম্পন্ন অরবিটাল ক্যামেরা ছিল, যা ইসরোর দক্ষতা এবং উন্নত মানের কাজের পরিচায়ক ৷"
তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনে 2023 সালের 23 অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে সফল সফ্ট ল্যান্ডিং করেছে চন্দ্রযান-3 ৷ সেখানে চন্দ্রপৃষ্ঠের নমুনা নিয়ে নানাবিধ গবেষণা করেছে ৷ দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে মাটির কম্পন রেকর্ড করেছিল চন্দ্রযান-3 ৷
চন্দ্রযান-4 আরও একধাপ এগিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের নমুনা অতি সযত্নে সুরক্ষিত করে নিয়ে আসবে পৃথিবীতে ৷ সেই নমুনা বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সংগ্রহ করা হবে ৷ এই নমুনা থেকে চাঁদের তাপমাত্রা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা ৷ জানা যাবে, চাঁদের মাটির অজানা রহস্য ৷
উল্লেখ্য, চিনের চ্যাং'ই-5 চন্দ্রাভিযানে চন্দ্রপৃষ্ঠের যে জায়গা থেকে নমুনা নিয়ে এসেছে, তা তুলনায় নবীন ৷ আমেরিকার ইউ অ্যাপোলে এবং রাশিয়ার লুনা মিশনে একই ধরনের ভৌগোলিক প্রকৃতির নমুনা আনা হয়েছে ৷ এতে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভিন্ন জায়গার নমুনা পাওয়া যায়নি ৷ চতুর্থ চন্দ্রযান মিশনেই ইসরো থামছে না ৷ আগামী দশকে ইসরোর লক্ষ্য প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান জানান, তালিকায় পঞ্চম চন্দ্রযান মিশনও আছে ৷