কলকাতা, 6 এপ্রিল: গরু, কয়লা, টেট বা এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে সরগরম রাজ্য। সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাপে কার্যত নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ৷ তদন্তকারী সংস্থার লাগাতার গ্রেফতারিতে সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকী খোদ কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরাও ভাবছেন, রাজ্য়ে জেল কী কম পড়তে পারে? অন্য়দিকে, জেল যাত্রা ঠেকাতে অভিযুক্তরাও কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না। বিপুল খরচে দাঁড় করাচ্ছেন নামজাদা আইনজীবীদের। বিরোধীরাও পালটা 'চোর ধরো, জেল ভরো'র স্লোগান তুলেছে ৷ এই আবহে এবার সর্বসাধারণের জন্য় জেলের দরজা খুলে দিচ্ছে রাজ্য় সরকার ৷ অর্থাৎ আপনি চাইলেও এবার 'অন্ধকার কুঠুরি'র আস্বাদ নিতে পারেন ৷
রাজ্য়ে ইতিহাসে এই প্রথম ৷ এবার অপরাধ না-করেও যে কেউ ঘুরে আসতে পারবেন জেল থেকে ৷ তার জন্য কোনও আইনি ঝামেলা বা বিচারকের রায়ের প্রয়োজন হবে না। তার বদলে এর জন্য় আপনার বেশ কিছু অর্থ খরচ হবে ৷ গাঁটের কড়ি খরচ করলেই সুযোগ পেয়ে যাবেন জেলে রাত্রিবাস করার। এমনকী পেটে পড়বে জেলের ভাতও। অবাক হলেন? এবার থেকে আলিপুর মিউজিয়াম যা কিনা আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার ছিল, তার কুঠুরিগুলোই কটেজ হিসেবে ভাড়া দেওয়া হবে সর্বসাধারণের জন্য। এমনি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পৌরনিগম ৷
দেশে এই ঘটনা অবশ্য় নতুন নয় ৷ এর আগে উত্তরাখণ্ড সরকারও এই পথে হেঁটেছে ৷ দেরহাদুনের একাধিক জেলে 500 টাকার বিনিময়ে যে কেউ থাকতে পারেন ৷ এবার সেই প্রথা এল বাংলাতেও ৷ এমনিতেই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু জেল মিউজিয়াম। আর সেইখানেই এবার জেলখানাগুলিকে এক একটি কটেজে রূপান্তরিত করা হবে। থাকবে দিনযাপনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাও। এক অন্য পরিবেশে আপন জনের সঙ্গে একান্তই সময় কাটানোর অন্যতম ডেস্টিনেশন হতে চলেছে এটি। বুধবার কলকাতা পৌরনিগমের মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কলকাতা পৌরনিগমের হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটির নোট অনুমোদন হয়েছে এদিনের বৈঠকে। এ বিষয়ে কলকাতা পৌরনিগমের হেরিটেজ বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, "আলিপুর জেল মিউজিয়াম নিয়ে সেই অর্থে আমাদের করণীয় কিছু নেই। যেহেতু কলকাতা পৌরনিগম এলাকায় এটি একটি হেরিটেজ বিল্ডিং তাই পৌর আইন মাফিক হেরিটেজ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন: নাগরিকদের জন্য দুঃসংবাদ, বকেয়া করে ছাড় দেওয়া বন্ধ করছে কলকাতা কর্পোরেশন
গত বছর চালু হয়েছে আলিপুর জেল মিউজিয়াম। ঐতিহ্যবাহী ভবনের বেশ কিছুটা অংশে সংগ্রহশালা করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন দাস থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সহ বিভিন্ন সময়ে বহু বিপ্লবীর এক সময় এই জেলেই ঠাঁই হয়েছিল। জেল মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে টিকিট 30 টাকা। ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো’যের ব্য়বস্থাও আছে। সেটি দেখতে খরচ 100 টাকা।
আলিপুর জেল মিউজিয়ামের পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব সামলায় হাউজিং ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন বা হিডকো। জানা গিয়েছে, হিডকোর তরফেই এই কটেজ তৈরি করা হবে। মোট 43 টি গেস্ট রুম তৈরি হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে নতুন করে কোনও স্থায়ী নির্মাণ হবে না। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে রেস্তোরাঁ। প্রতিটি গেস্ট রুমে বিছানা, সোফা, ফ্যান, বাতানুকূল যন্ত্র, এলইডি টেলিভিশন, ফ্রিজ, আধুনিক শৌচালয় থাকবে বলেও খবর। চাইলেই এবার যে কেউ জেল যাত্রার রাজকীয় আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।