কলকাতা, 25 অক্টোবর: এবার বইয়ের পাতায় রাজনৈতিক বিভেদ। ইন্ডিয়া নয়, লেখা হবে ভারত ৷ নতুন সুপারিশ এনসিইআরটি’র। শিক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা রাষ্ট্রীয় শিক্ষা অনুসন্ধান এবং প্রশিক্ষণ পরিষদ) অনুমোদিত সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে 'ইন্ডিয়া'র পরিবর্তে 'ভারত' লেখার নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে। তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যা অনৈতিক বলেই মনে করছে শিক্ষামহল।
এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, "জুজুর ভয় মনে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার জুজু দেখছে ইন্ডিয়া-তে। এটা অপরিনামদর্শিতা। হিন্দুস্থান শব্দের ইংরেজি হতে পারে ইন্ডিয়া, এটাই নিকটে। ভারত সেখান থেকে অনেক দূরে। আসলে কেন্দ্র ইন্ডিয়া ও তার অন্যতম মধ্যমণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছে। এটা পুস্তক পর্যন্ত নামিয়ে আনার কোনও দরকার ছিল বলে মনে করি না।’’
'ভারত' বনাম 'ইন্ডিয়া' করা মানে সংবিধানের অবজ্ঞা। কারণ সংবিধানে লেখা রয়েছে ভারত যা ইন্ডিয়াও তাই বলেই মত প্রকাশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের। তিনি বলেন, "এই পুরো বিষয়টাই অপ্রয়োজনীয়। এটার মধ্য দিয়ে আমার মনে হয় রাজনৈতিক কোনও স্বার্থ থাকতে পারে। তবে এই রাজনীতি একদমই ভুল ও বাজে।" একই নিন্দার সুর শোনা গেল শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের গলাতেও। তিনি বলেন, "রাজনীতি দু'রকমের হয়। একটি সদর্থক এবং অন্যটি অনর্থক। শিক্ষায় রাজনীতির মাধ্যমে দেশপ্রেম শেখাবে। কিন্তু রাজনীতি বলে জাতিবিদ্বেষ, হিংসামূলক কাজ উচিত নয়। আমার মনে হয়, এটা চূড়ান্ত ছেলেমানুষি ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া হয়েছে বলে সব জায়গায় সেই নাম উৎখাত করতে হবে এটা দেখে সারা পৃথিবীর লোক হাসছে।"
কলকাতার বেসরকারি নামী স্কুলের শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা সাহা বলেন, "পরের বছর থেকে জাতীয় শিক্ষানীতি লাগু হবে। তার জন্য নতুন সিলেবাস এবং নতুন বই তৈরি হচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে যদি সত্যি এনসিইআরটি এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে এর একটা প্রভাব পড়বে অধ্যাপক অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে । আমার মনে হয় এটা কখনওই কাম্য নয়।"
আরও পড়ুন: স্কুলের পাঠ্য বইয়ে এবার থেকে ‘ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে ‘ভারত’, সুপারিশ এনসিইআরটির
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কলকাতার আরও এক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা পূজা সেনগুপ্ত বলেন, "এখনই এই বিষয়টায় কী প্রভাব পড়বে তা বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা ইন্ডিয়ার নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছি। ভারত নামটা বহু পুরনো, ইতিহাস জড়িয়ে আছে। কিন্তু ইন্ডিয়া নামটা আমরা ছোট থেকে পড়ে আসছি তাই একটা প্রভাব অবশ্যই পড়বে কিন্তু সেটা কতটা ভালো না খারাপ তা বলা মুশকিল।" তেমনই শিক্ষাবিদ ব্রততী ভট্টাচার্য এই বদলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, "ভারত বললে সমস্যা কিছু হবে না। যদি আমরা বিশ্ব বাংলা বলতে পারি তাহলে কেন ভারতবর্ষ নয়!"