কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি: অতীতে কাশ্মীর নিয়ে গণভোটের দাবি শোনা গিয়েছে । যদিও কেন্দ্রীয় সরকার সেই দাবিকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি । সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব (Motion against Separate State) নিয়ে আলোচনায় গোর্খাল্যান্ড (Gorkhaland) নিয়ে গণভোটের দাবি উঠল । কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে গণভোট (Mass Voting on Gorkhaland) করানোর দাবি তুলেছেন ।
একথাও জানালেন, গোর্খাল্যান্ড অর্থাৎ আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি এটা রাজ্যের বিষয় নয় । কেন্দ্রের বিষয় । সেখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্র এই গণভোট ইস্যুতে সম্মত হবে কি ! জাতীয় প্রেক্ষাপটে দেখলে গণভোটের দাবি যথেষ্টই স্পর্শকাতর । শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেবে কি তাঁর দল বিজেপি (BJP) !
উল্লেখ্য, এদিন বিধানসভায় বলতে গিয়ে বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা বলেছেন, ‘‘এটা তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) বা বিজেপির বিষয় নয় । গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর জন্য মানুষ আমাকে সমর্থন করেছেন । আর সে কারণেই বিধানসভার ভিতরে বা বাইরে আমি যখন যে কথা বলেছি, সেটা আমার বক্তব্য নয় । জনগণের আওয়াজ ৷ যে উদ্দেশ্যে নিয়ে তাঁরা আমাকে পাঠিয়েছেন, ওটা ছিল তারই প্রতিফলন । পাহাড়ের মানুষ কী চাইছেন, কেন চাইছেন, তা জানার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হোক । কেন্দ্র ও দেশের নির্বাচন কমিশনের সাহায্য নিয়ে রাজ্য সরকার মানুষের মত জানার চেষ্টা করুক ।’’
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বিজেপির কী অবস্থান বা তৃণমূলের কী অবস্থান সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । বরং এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ কী চায়, তা জানার চেষ্টা করা। রাজ্য সরকার যদি সত্যিই পাহাড়ের মানুষের কথা ভাবেন, তাহলে বিধানসভায় এসব বিল না এনে পাহাড়ের মানুষ কী চায়, তা জানার জন্য গণভোট করুন । এটাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি । এই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের দাবি কী জানার চেষ্টা করুন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই এলাকায় থাকা বিভিন্ন সাম্প্রদায়ের ভাষা সংস্কৃতি বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে । ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য এই সম্পূর্ণ ক্ষেত্র রাজনৈতিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে আছে । এই এলাকায় আলাদা রাজ্যের দাবি হাওয়া থেকে আসেনি । এখানকার মানুষের নিজের ভাগ্য নিজের লেখার অধিকার রয়েছে । সরকার কি কখনও এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছে ?’’ এর পর তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনারা গণভোট করুন ৷ তাহলেই জানতে পারবেন ওখানকার মানুষ কী চায় ।’’
এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন অবশ্য বিজেপিকে গোর্খাল্যান্ড বা অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্য বিজেপির দ্বিচারিতাকে দায়ী করেছেন । তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির ইন্ধনেই এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন প্রশ্রয় পাচ্ছে । এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা যখনই ভাগিরথী নদীর ওপারে যান, তখন বাংলা ভেঙে পৃথক রাজ্যের দাবি সমর্থন করেন । আবার দক্ষিণবঙ্গে এলেই অখণ্ড বাংলার কথা বলেন । এটাই ওঁদের দ্বিচারিতার রাজনীতি ।’’ অধিবেশনের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বপ্রশাদ শর্মা এই দিন যে দাবি করেছেন, সেই দাবি কি তাঁর দল বিজেপি সমর্থন করে ? সেটাই আগে জানার চেষ্টা করুন তিনি ।’’
আরও পড়ুন: সারি ও সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দিয়ে বেসরকারি প্রস্তাব পাস বিধানসভায়