কলকাতা, 16 ডিসেম্বর : নতুন সংঘাতের সামনে রাজ্য ৷ ফের দুই মেরুতে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল ৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং তাকে ঘিরে বিক্ষোভ, প্রতিবাদের জেরে এবার মুখ্যমন্ত্রীকে তলব করলেন রাজ্যপাল ৷ অন্যদিকে, প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, কোনও ভাবেই মাথা নত করবেন না ৷ গত দু-তিনদিন ধরে চলা নাগরিকত্ব আইন ঘিরে ক্রমেই তপ্ত হয়েছে রাজ্য রাজনীতি ৷ কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলার নানা প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ ৷ ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে রাজ্য ৷ কিন্তু, এখনও পর্যন্ত লাভের লাভ কিছুই হয়নি ৷
পরিস্থিতি যখন উত্তেজিত, ঠিক তখনই ফের একবার নতুন সাংবিধানিক সংকটের সামনে রাজ্য ৷ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় গতকালই রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ও DGP বীরেন্দ্রকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, তাঁরা কেউই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেননি ৷ তাঁকে রিপোর্টও দেননি ৷ আর তারপরই আজ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে তলব করলেন রাজ্যপাল ৷ আগামীকাল রাজভবনে দেখা করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে ৷ একই সঙ্গে রাজ্যের সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টও চেয়েছেন ধনকড় ৷ সূত্রের খবর, আগামীকাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথায় এই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হতে পারে ৷ তারপর প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন রাজ্যপাল ৷
রাজ্যপাল ডেকে পাঠালেন, ঠিক তখনই তাঁর (রাজ্যপাল) ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ টুইট করে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন তিনি ৷ মমতার কটাক্ষ, শান্তিরক্ষায় সহযোগিতা করছেন না রাজ্যপাল ৷ রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ যে ভাবে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষও চেপে রাখেননি মমতা ৷ মমতার পত্রবোমা, আমি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে খুবই মর্মাহত ৷ রাজ্য সরকারকে সাহায্য করা উচিত ছিল রাজভবনের ৷
মমতার চিঠির পালটা উত্তর দেন রাজ্যপাল । চিঠিতে লেখেন, "আমি আপনার 16 ডিসেম্বরের চিঠি পেয়েছি । আপনার মনোভাব আমাকে ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও বিস্মিত করেছে । বাস্তবে (রাজ্যে) যা ঘটছে, তার সঙ্গে আপনার মত খাপ খায় না । অনুরোধ করব বাস্তবটা জানার জন্য আপনি অন্তরাত্মার সন্ধান করুন ।"
এর আগেও একাধিকবার রাজভবন-রাজ্যপাল সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে ৷ রাজ্যপাল রাজ্যে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা ৷ এবার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল-মমতা বিরোধ প্রকাশ্যে এল ৷ আজ পথে নেমে কেন্দ্রীয় আইনের প্রতিবাদে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি, শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ৷ কোনওরকম প্ররোচনায় পা না দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছেন ৷ তবে, কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন যে চলবে এবং তা হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, সে কথাও স্পষ্ট করেছেন তিনি ৷ রাজ্যপাল যদি গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করে, তা হলে নবান্নের ভূমিকা কী হবে, তাই এখন বাংলার রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷