কলকাতা, 10 জানুয়ারি: আইএস জঙ্গি সন্দেহে (Suspected ISIS Militant) গ্রেফতার হয়েছে সাদ্দাম ৷ এই ঘটনায় তদন্তে নেমে সাদ্দামের জ্ঞানের পরিধি জানতে পেরে চমকে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) গোয়েন্দারা ৷ লালবাজার সূত্রের খবর, অস্ত্র থেকে নাশকতামূলক কাজ বাস্তবে রূপ দিতে সাদ্দামের লেখাপড়া অনেক বেশি ৷ অনেকটা রিসার্চ স্কলারদের মতো ৷ এই বিষয়ে রিসার্চ স্কলাররাও হার মানবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা ৷
সম্প্রতি সাদ্দাম ও তার সঙ্গী সঈদ মোহাম্মদ নামে দু’জনকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ (Kolkata Police STF) ৷ আপাতত তারা এসটিএফের হেফাজতেই রয়েছে । লালবাজার (Lalbazar) সূত্রে খবর, এছাড়া সাদ্দামের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ডায়েরিতে মিলেছে বিপুল পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য । সাদ্দামের ডায়েরি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে অন্যতম হল বিদেশি অস্ত্র নিয়ে বরাবর রিসার্চ করত সাদ্দাম ।
লালবাজারের ওই সূত্র জানাচ্ছে যে ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশি অস্ত্র কীভাবে কোথা থেকে সংগ্রহ করা যায়, কোন দেশে কোন অস্ত্রের বেশি চাহিদা রয়েছে, বাইরের দেশের একাধিক জঙ্গি নাশকতায় জঙ্গিরা মূলত কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেছে সাদ্দাম ।
তবে কি এরাজ্যে কিংবা দেশে কোনও জঙ্গি নাশকতামূলক অভিযানের দায়িত্বে ছিল এই সাদ্দাম ?
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের মতে, এই সাদ্দামকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখার বিষয় সাহায্য করত সদ্য মধ্যপ্রদেশ থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে গ্রেফতার হওয়া আইএস জঙ্গি কুরেশি । ফলে সাদ্দাম এবং কুরেশিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় কলকাতা পুলিশ ।
গত শনিবার কলকাতা থেকে আইএস জঙ্গি সন্দেহে হাওড়ার দুই যুবককে গ্রেফতার করেছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা । পুলিশের অনুমান, ধৃত 2 যুবকের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষনেতৃত্বের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ।
লালবাজার সূত্রের খবর, ধৃত দুই জঙ্গির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ এবং একাধিক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রথম সারির নেতার নাম পেয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা । তবে তাদের মধ্যে কথোপকথনের যে সংলাপ উঠে এসেছে, তা বেশিরভাগ এখনও জেনে উঠতে পারেননি গোয়েন্দারা । এর কারণ বেশিরভাগ কথাবার্তাগুলোই রয়েছে সাংকেতিক ভাবে । ফলে তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা ।
তাদের প্রাথমিকভাবে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, আইএস-এর একটি গোষ্ঠী ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমারের একাংশ নিয়ে ইসলামিক স্টেট (Islamic State) গঠন করতে চায় । কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভারত । যে কারণে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ও মণিপুরের একটি অংশে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের মাস্টারমাইন্ডরা ।
সম্প্রতি কলকাতা পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ-সহ অসম পুলিশের (Assam Police) গোয়েন্দা বিভাগ ও এনআইএ-এর মতো সংস্থা একযোগ তল্লাশি চালিয়ে অসমে গজিয়ে ওঠা একাধিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালায় ।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ (NIA)-সহ অসম পুলিশ এবং একাধিক রাজ্যের পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে । কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে যে ইতিমধ্যেই এনআইএ খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন । প্রয়োজন পড়লে কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত এই দুই যুবককে নিজেদের হেফাজতেও নিতে পারে এনআইএ-সহ ভিন রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ।
আরও পড়ুন: সাদ্দামদের গুরু ? আইএস জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার আব্দুল রাকিব কুরেশি