কলকাতা, 7 নভেম্বর : 'প্রণাম'-র মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি ছিলই । ছিল কলকাতায় বসবাসকারী প্রবীনদের নিয়মিত হাল-হকিকত জানার চেষ্টা । এবার কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে শহরের প্রবীনদের সাহায্যের জন্য আরও কিছুটা এগিয়ে এল কলকাতা পুলিশ । সঙ্গে এগিয়ে এসেছে হেল্প এজ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন । পাওয়া যাবে সুনিশ্চিত বিচার । করতে হবে শুধু একটি আবেদন । ফাউন্ডেশন এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের যৌথ উদ্যোগে হবে বাকি কাজটা । আজ এমন প্রকল্পেরই সূচনা হল ।
29 জুলাই । রাত 10-11 টার মধ্যে খুন হন বৃদ্ধ দম্পতি ৷ দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায় । টাকা পয়সা লুটের জন্য এই খুন বলে প্রাথমিক অনুমান ছিল পুলিশের ৷ অনেকের সন্দেহ ছিল, প্রোমোটিংয়ের জন্য বাড়ি না দেওয়ার জেরেই এই খুন । সন্দেহ গতি পায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর । ইঙ্গিতপূর্ণভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না । যদি কেউ মনে করে থাকে, একাকী বৃদ্ধ দম্পতি খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে তাহলে তারা ভুল করছে ।" পরে দেখা যায় টাকা পয়সা লুটের উদ্দেশ্যেই এই খুন । শুধু তাই নয়, বৃদ্ধার ওপর চালানো হয় পাশবিক অত্যাচার । মারধরে বৃদ্ধা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে ধর্ষণ করে আততায়ী । তারপর তাঁর গোপনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রং করার রোলার ! আর একটি রোলার ঢোকানো হয় মুখে । পরে বিহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় খুন এবং ধর্ষণে অভিযুক্তকে । কলকাতা পুলিশ আদালতে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ধর্ষনের কথা ।
অন্যদিকে, গতকাল ভোরে প্রাক্তন রেলকর্মী অমল বসুর বাড়িতে হানা দেয় কয়েকজন দুষ্কৃতী । স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসে তারা । চেঁচামেচি করলে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় অমলবাবুকে । তারপর ওই বৃদ্ধকে বেঁধে দু'টি আলমারির চাবি নিয়ে বের করা হয় 48 হাজার টাকা । পাশাপাশি লুট করা হয় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার সোনার গয়না । ওই বৃদ্ধ লুটেরাদের অনুরোধ করেন, লুটপাট না চালাতে। তিনি এমনিতেই মানুষজনকে অনেক সাহায্য করেন । তাদেরও প্রয়োজন মত সাহায্য করবেন । কিন্তু তাঁর কোনও কথায় শোনেনি ৷ টাকা এবং গয়না নিয়ে চম্পট দেয় তারা ।
শহরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বারবার টার্গেট হচ্ছেন অপরাধীদের । তাঁদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে । এই সমস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের তরফে তুলে দেওয়া হবে একটা ফর্ম ৷
হেল্প এজ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অনুরাধা সেন জানান, এই ফর্মের মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নথিভূক্ত করতে পারবেন প্রবীণরা । ফর্মগুলি পাওয়া যাবে সমস্ত থানায় । প্রত্যেক ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনাররা বিষয়গুলি দেখাশোনা করবেন । ফর্মগুলো পূরণের পর সংশ্লিষ্ট থানা তা পাঠিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে । তারপর সেগুলি নিয়ে হবে ট্রাইব্যুনালের মামলা । 2007 সালের সিনিয়র সিটিজেন অ্যান্ড প্যারেন্টস অ্যাক্ট অনুযায়ী, এই মামলায় নূন্যতম শাস্তি তিন মাসের জেল এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা । সর্বোচ্চ 10 হাজার টাকা জরিমানা । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত পক্ষ কোনও আপিল করতে পারবে না ।