কলকাতা, 11 অক্টোবর : রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনে 1 অক্টোবর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে । আজ পর্যন্ত চলবে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা । বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অক্টোবরে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমোদন জানানোর সময়ই নির্দেশ দিয়েছিল, অক্টোবরের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করতে । তবে, মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করে পুজোর আগেই ফলাফল প্রকাশ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।
এ বছর কোরোনা আবহে অনলাইন মাধ্যমেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত সেমেস্টার ও বিভিন্ন বিভাগের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষার্থীদের অনলাইন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । তাঁরা সেই প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে বাড়িতে বসেই ওপেন-বুক পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় শেষে অনলাইন মাধ্যমে তা আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তারপরে বিভাগ থেকে অনলাইনেই সেই সকল উত্তরপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকদের কাছে । পরীক্ষা শুরুর দিন থেকেই অনলাইনে উত্তরপত্র দেখে 1-2 দিনের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানোর চেষ্টা করছেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, 14 অক্টোবরের মধ্যে সব পরীক্ষার নম্বর জমা করতে । ডেডলাইনের মধ্যেই সেই কাজ করার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন JUTA-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "টিচারদের এখন রাত-দিন এক করে কাজ করতে হচ্ছে। রাত 1টা, 2টো পর্যন্ত কাজ করে চেষ্টা করছে যাতে পরীক্ষা শেষ হলেই নম্বরগুলো আমরা জমা দিয়ে দিতে পারি। অন্তত টিচারদের দিক থেকে যাতে সমস্তটা সম্পূর্ণ হয়ে থাকে সেইটা আমরা নিশ্চিত করার জন্য রাত-দিন মোটামুটি এক করে কাজ করছি। এবারে তো অনলাইনে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে খাতা এসেছে কি না তা মেইল চেক করে দেখতে হচ্ছে, সব ঠিকঠাক আছে কি না তা মেলাতে হচ্ছে। সেটাও এবারে একটা চ্যালেঞ্জ টিচারদের কাছে। আমরা চেষ্টা করছি শেষ পরীক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে নম্বরগুলো যাতে জমা করে দিতে পারি ।" 14 অক্টোবর সব পরীক্ষার নম্বর জমা পড়লে পুজোর আগেই ফলাফল প্রকাশ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অনলাইনেই প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের ।
এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "11 অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের পরীক্ষা চলবে। 14 অক্টোবরের মধ্যে সবাই নম্বর জমা দেবেন। আমরা লক্ষ্য রাখছি, 20 তারিখের মধ্যে রেজ়াল্ট প্রকাশ করার। অনলাইনেই 20 অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।" তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখা গেছে। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নম্বর জমা করায় তেমন সমস্যা দেখা না গেলেও, আর্টস ফ্যাকাল্টির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এত কম সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে নম্বর জমা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আর্টস ফ্যাকাল্টির কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তাঁদের বক্তব্য, এত তাড়াতাড়ি নম্বর জমা করা সম্ভব নয়। তাঁদের যুক্তি, অনলাইন মাধ্যমে কম্পিউটারে বসে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার কাজটা তুলনামূলক কঠিন হার্ডকপি মূল্যায়ন করার থেকে। 60-70টা উত্তরপত্র কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করে মূল্যায়ন করা খুব কঠিন কাজ। অনেক অধ্যাপককে দুটি বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়, সেই সব ক্ষেত্রে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেক উত্তরপত্র ই-মেইলের পরিবর্তে হোয়াটসঅ্যাপে এসেছে। সেগুলোকে একত্রিত করতে হচ্ছে। অনেক পরীক্ষার্থীই আবার উত্তরপত্রের নিম্নমানের ছবি পাঠিয়েছেন। সেগুলোকে কষ্ট করে পড়ে মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। এই ধরনের একাধিক জটিলতার কারণে এত তাড়াতাড়ি মূল্যায়ন করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নম্বর জমা নাও করতে পারেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন আর্টস ফ্যাকাল্টির কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা।
তবে, এইসব জটিলতা কাটিয়ে 20 অক্টোবরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করার চেষ্টা করতে চায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে যে সকল বিভাগ সময়ের মধ্যে নম্বর জমা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে ।