কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারি : স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইলেকশন নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষকে কার্যত ঘেরাও করে রেখেছে তারা। আজ এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, "এটা কি লেবার কমিশনারের দপ্তর নাকি যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চাই।"
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "এটা কোনও কথাই নয়। কাউন্সিল তো বিধানসভায় পাশ হয়ে গেছে। তার থেকেও বড় কথা আমরা তো রাজ্যে কোথাও ছাত্র নির্বাচন করছি না। তাহলে অসুবিধাটা কী হচ্ছে? রাজ্যের সব জায়গার নিয়ম ভেঙে আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলব তোমরা নির্বাচন কর। এটা কী সম্ভব?"
ছাত্রদের অবস্থান-বিক্ষোভ ও সহ উপাচার্যকে কার্যত ঘেরাও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার নিজের একটা উপলব্ধি আছে। কেউ যদি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আর আমি যদি না বোঝাতে পারি যে তার এই ব্যবহার মোটেই ভালো নয় তাহলে আমি কী বলতে পারি? আমি শুধু বলব সব ছাত্র কখনই খারাপ নয়। দু-চারজন জন ছাত্র আছে যারা এটা করে। সবাই কি খুন করে? করে না। বিবেকবোধ নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু, শৃঙ্খলাটাও থাকবে।"
কোনও অবস্থাতেই সরকার এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না বলে আজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, "আমার কোনও রিপোর্ট লাগবে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্বয়ং এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে। সরকার এখানে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না। শিক্ষামন্ত্রী বলার পরও যদি কথাকে হুইলচেয়ারে করে উড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে কোনও কাজ থাকে না।"
এদিকে, সহ উপাচার্যকে দু'রাত ও দু’দিন কার্যত ঘেরাও করে রেখেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। আজ পরিস্থিতি নিয়ে আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (AFSU) সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "আমাদের অবস্থানের প্রায় ৪৮ ঘন্টা অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোনও সদুত্তর পাইনি। আজ সকালে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখন জানায় এখনই কিছু করে উঠতে পারবেন না তাঁরা। আগামীকাল কর্তৃপক্ষের তরফে আমাদের একটি কপি দেওয়ার কথা। যেখানে তাঁরা উল্লেখ করবেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। যাতে তাঁরা এটা বলেছেন, একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক তাঁরা চান। আগামীকালের জন্য আমরা সকলেই তৈরি হচ্ছি। আগামীকাল লড়াইটা জমবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য বিশেষ কিছু করে উঠতে পারবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না। তাই আমাদের আন্দোলনকে আরও কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, আরও কিভাবে সঠিক ও জোরদার করা যায় সে বিষয়ে কথাবার্তা বলা হবে।"
সহ উপাচার্য আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সোমবারের আগে তিনি কিছু করতে পারবেন না। তারপরও আন্দোলনকারীদের তরফে তাঁকে বলা হয়েছিল, "হয় বলে বেরোন, না হলে মেরে বেরোন।" আন্দোলনকারীদের কথা শুনে ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধে থেকেই ক্যাম্পাসে রয়েছেন প্রদীপ কুমার ঘোষ। তাঁকে কি যেতে দেওয়ার কোনও ভাবনা রয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করা হয়। উত্তরে দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "সহ উপাচার্য তাঁর কথা অনুযায়ী চলছেন। তিনি প্রথমেই বলেছিলেন আমাদের সঙ্গে কোনও কমিউনিকেট করবেন না। কোনও কথা বলবেন না। ফলে আজ সকালে যখন আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে যাই, যে স্যার আজকের কী পরিস্থিতি? তখন উনি আমাদের জানিয়ে দেন তাঁর কিছু করার নেই। আমরা যদি তাঁকে যেতে দিই তাহলে তিনি বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। কিন্তু আমরা পড়াশোনা বন্ধ করে এমনি এমনি শখ করে তো আর বসে নেই। বাধ্য হয়ে বসে আছি। নিজেদের জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বসে আছি। কিছু অংশের ছাত্র-ছাত্রী, কর্মচারী, কিছু অংশের কর্তৃপক্ষ তৃণমূলের কথায় চলছে এবং ক্যাম্পাসের গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে চলছে। তাই ক্যাম্পাসের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে আমাদের একজোট হওয়াটা আমাদের কর্তব্য।"
ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে পার্থ চ্যাটার্জি যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় নিজের ভূমিকা পালন করার পর যদি দেখা যায় পার্থ চ্যাটার্জি বা রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে বসতে চাইছে না, তাহলে তাঁদের উদ্দেশ্য সহজেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এটা ঠিকই, এখানে যাঁরা আমরা বসে আছি তাঁদের ৯৭ শতাংশ মনে করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ইউনিয়ন প্রয়োজন এবং অবিলম্বে নির্বাচন প্রয়োজন। তাই আমরা কমিশন না হতে পারি অন্তত ছাত্র সমাজের স্বার্থে আমরা একজোট তো হয়েছি। শিক্ষামন্ত্রী যদি নিজের কাজটা ঠিকমতো করতেন তাহলে আমাদের এখানে বসে থাকতে হত না।"