কলকাতা, 1 জুন : আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে এখন হুলুস্থুলু । শুধু বাংলায় নয়, সমান স্নায়ুর চাপ বোঝা যাচ্ছে দিল্লিতেও । এ হল রাজায় রাজায় লড়াই । আলাপনকে আগলে রাখতে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয় কেন্দ্রও । সংবাদ শিরোনামে এখন শুধুই প্রাক্তন মুখ্যসচিব । একা আলাপনই নন, এর আগেও কেন্দ্রের অনেক ক্যাডারই সংবাদ শিরোনামে জায়গা পেয়েছেন ।
মনে পড়ে দময়ন্তী সেনের কথা? 2012 সাল । পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ । উত্তাল হয়েছিল গোটা রাজ্য । মুখ্যমন্ত্রীর সাজানো ঘটনা তত্ত্ব তাতে আরও বেশি করে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল । এই নারকীয়তার তদন্তের মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন দময়ন্তী সেন । সেই সময়কার যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) । যেটুকু অগ্রগতি হয়েছিল তদন্তে তাতে দময়ন্তী সেনের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল । তিনজনকে গ্রেফতারও করে নিয়েছিলেন । তারপর হঠাৎই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বদলি হয়ে যান । শোনা যায়, দময়ন্তীর 'অতি সক্রিয়তা' মোটেই পছন্দ ছিল না সরকারের । সেই কারণেই বদলি । পরে অবশ্য আবার লালবাজারে ফেরেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ।
গল্প আরও আছে । ভারতী ঘোষ । 2013 থেকে 2017 সাল পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার । তার আগে ছিলেন ঝাড়গ্রামে । যতদিন উর্দিতে ছিলেন, ততদিন মমতার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল । জঙ্গলমহলে একসময় তাঁর ভয়ে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত । মমতাকে ডাকতেন জঙ্গলমহলের মা বলে । বিরোধীরা বলতেন, ভোটের সময় নাকি মমতার হয়ে কাজও করেছিলেন ভারতী । কিন্তু এরপর আস্তে আস্তে খেলাটা ঘুরতে শুরু করে । সোনা-প্রতারণায় নাম জড়ায় । সরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ সুপারের পদ থেকে । এরপর ভারতী এখন পুরোদস্তুর বিজেপি নেত্রী । আইপিএস ভারতীর যে মেজাজটা ছিল, বিজেপি নেত্রী হিসেবেও সেই একই মেজাজ । লোকে বলে, সোনা কেলেঙ্কারির মামলা থেকে বাঁচতেই পদ্মশিবিরে গিয়েছেন তিনি ।
ভারতী ঘোষের কথা যখন হচ্ছে । তখন হুমায়ুন কবিরের নামও উঠে আসতে বাধ্য । এবারের ভোটে ভারতী ঘোষের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তৃণমূলের টিকিটে । দীর্ঘদিনের কানাঘুষো ছিল, হুমায়ুন কবির নাকি তৃণমূলের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন । আইপিএস পদে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই যোগ দেন তৃণমূলে । শোনা যায়, ডেবরায় ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে টিকিট পাওয়াটা আসলে মমতার গুডবুকে থাকার পুরস্কার ।
আরও পড়ুন : আড়াই লাখ মাসমাহিনা, কী কী সুবিধা পাবেন মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন ?
একটু অতীতে গেলে, মণীশ গুপ্ত । জ্যোতি বসুর আমলে রাজ্যের মুখ্যসচিব ছিলেন । পরে পালাবদলের ভোটে মমতার হয়ে লড়েন । দাঁড়িয়েছিলেন যাদবপুর থেকে । প্রতিপক্ষ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । জিতেও যান প্রাক্তন আমলা । সাড়ে 16 হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন বুদ্ধবাবুকে । পুরস্কার পেয়েছেন তিনিও । রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন । এখন রাজ্যসভার সাংসদ ।
উপেন বিশ্বাস । প্রাক্তন আইপিএস । প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ । পরে সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর । বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবকে গ্রেফতার করেছিলেন । এগারোর পালাবদলের ভোটে তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । বাগদা থেকে জিতে রাজ্যের মন্ত্রীও হন । 2016 সালের ভোটে অবশ্য আর জিততে পারেননি । এখন রাজনীতির সঙ্গে তেমন খুব একটা যোগাযোগ নেই উপেন বিশ্বাসের ।
মমতার আমলে কেন্দ্রের ক্যাডারদের সঙ্গে যেমন নরম-গরম সম্পর্ক ছিল, তেমনই অনেক প্রাক্তন ক্যাডারকেই রাজনীতির ময়দানে নামতে দেখা গিয়েছে । আলাপনও অবসর নিয়েছেন আইএএস পদ থেকে । আপাতত তিন বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা । তারপর ? তিনিও কি রাজনীতিতে আসবেন ? উত্তর মিলবে যথাসময়ে ।