কলকাতা, 30 জুন: আজ থেকে 17 বছর আগের ঘটনা ৷ বিহারের বেলহারা এলাকার কুমারীপুর গ্রামের বাসিন্দা তলমী হাত্তা তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেলা দেখতে গিয়েছিলেন ৷ তখন এক ছেলের বয়স ছিল 6 বছর, এক মেয়ে ছিল বিবাহযোগ্যা, অন্য মেয়ে পড়ছিল স্কুলে । দুই মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে মা গিয়েছিলেন মেলায় । মাকে নীচে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনজনে উঠেছিল নাগরদোলনায় । কিন্তু নাগরদোলা থেকে নেমে তারা আর খুঁজে পায়নি মাকে । অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । অবশেষে তাকেই খুঁজে পাওয়া গেল এ রাজ্য থেকে । হারিয়ে যাওয়া মাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল হ্যাম রেডিয়ো ।
করোনাকালে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল এক মহিলাকে ৷ লকডাউনে টহলদারির সময়ে পুলিশের নজরে পড়ে যান তিনি ৷ পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা কিছুই বলতে পারেননি প্রথমে ৷ ফলে পুলিশের উদ্যোগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে তুলে দেন কালীঘাটের মিশনারিজ অফ চ্যারিটির হাতে ।
তারপর তাঁকে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয়, দক্ষিণ 24 পরগনার বিষ্ণুপুরের মিশনারিজ অফ চ্যারিটির হোমে । সেই হোমেই এতদিন থাকছিলেন তিনি । সম্প্রতি সেই হোমের পক্ষ থেকে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের কাছে অনুরোধ করা হয় এই মহিলাকে বাড়ি পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য । কিন্তু শুধুমাত্র তাঁর বাড়ি কাটিহারে এটুকুই বলতে পারছেন ওই মহিলা ৷ কিন্তু এত বড় এলাকায় কীভাবে তাঁর পরিজনের খোঁজ করা হবে সেটাই ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ । সেই সমস্যারই সমাধান করল হ্যাম রেডিয়ো ৷
এই প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সভাপতি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, "কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না । গোটা ভারতবর্ষেই আমাদের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরদের কাছে তাঁর ছবি পাঠিয়েছিলাম । নিখোঁজদের খোঁজ চালাতে এভাবেই প্রয়াস চালাই আমরা । অবশেষে বিহারের কাটিহার থেকে একটা জবাব আসে ৷ জবাব দেন মহিলার মেয়ে মিনা দেবী । তিনি বর্তমানে বিহারের একটি পোস্ট অফিসে কর্মরত রয়েছেন । তিনি ওই মহিলার বড় মেয়ে । দীর্ঘদিন ধরে মাকে খুঁজছিলেন তিনি ।"
আরও পড়ুন: হ্যাম রেডিয়োর হাত ধরে, 15 বছর আগে কাশ্মীরে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেল মা
তিনি আরও জানান, প্রথম অবস্থায় অবশ্য এই ভদ্রমহিলাই যে তার মা তলমী হাত্তা সেটা মেনে নিতে পারছিলেন না । কারণ দীর্ঘদিনের ব্যবধান । মায়ের চেহারার বদল হয়েছে অনেকটাই । তবে অতীতের কিছু ঘটনা । স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে ওই ভদ্রমহিলার কথোপকথন । এসবের মাধ্যমেই অবশেষে তাকে সনাক্ত করা হয় তাঁকে । মা'কে ফিরে পেয়ে হ্যাম রেডিয়ো, কলকাতা পুলিশ এবং মিশনারিজ অফ চ্যারিটিকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন মিনা দেবী । তিনি বলছেন, "আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, মা মৃত । কিন্তু তাঁকেই ফিরিয়ে দিল যারা তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ ।"