কলকাতা, 29 ডিসেম্বর: শহরজুড়ে ফেস্টিভ মুড ৷ নিউ ইয়ার (New Year 2023) আসছে ৷ তার জন্য কতই না প্ল্যান, পরিকল্পনা ! কিন্তু, তাতে গ্রিটিং কার্ড (Greeting Card) বাদ ! বছর দশেক আগেও এমনটা ভাবা যেত না ৷ শিল্পী থেকে শিক্ষক, কিংবা বইয়ের দোকানের মালিক, সকলের গলাতেই এক সুর ৷
সে এক সময় ছিল বটে ৷ ইংরেজি বছরের শেষবেলা মানেই স্কুলের কচিকাঁচাদের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া ৷ দোকানে দোকানে উপচে পড়া ভিড় ৷ স্কুলের সহপাঠী থেকে কোচিংয়ের বন্ধু, যে স্যার-ম্যামকে ভীষণ ভালো লাগে তাঁরাও, সঙ্গে আরও অনেকে ! কাকে কাকে গ্রিটিংস কার্ড দেওয়া হবে, তার জন্য খাতা-পেন নিয়ে তৈরি হত তালিকা ! তারপর ছিল বড়দের ম্য়ানেজ করা ! সে এক বিরাট ঝক্কি ৷ বড়দের কাছ থেকে আদায় করা টাকা, আর টিফিনের বাঁচিয়ে রাখা খরচ, এভাবেই উঠত গ্রিটিং কার্ডের বরাদ্দ ! বাজেট বড় হলে নামী সংস্থার জমকালো গ্রিটিং কার্ড কেনা হত ৷ আর তেমনটা সম্ভব না হলে নিজের প্রতিভাই ভরসা ! আর্ট পেপার, রং পেনসিল, স্কেচ পেন, জড়ি, আঠা লাগানো অভ্র, এমনই হাজার উপকরণ কিনে, রাত জেগে তৈরি হত গ্রিটিং কার্ড ৷ বছর শুরুতে গ্রিটিং কার্ড পাওয়াটা উপহার পাওয়ার থেকে কম কিছু ছিল না ! এমনকী, কে, ক'টা কার্ড পেল, তা ছিল এক অলিখিত এবং অঘোষিত প্রতিযোগিতা !
আরও পড়ুন: প্রথমবার পাহাড়ে ট্যুরিজম ফেস্টিভ্যাল আয়োজনে জিটিএ
তেমন দিনের কথা ভেবে মন খারাপ হয় পারমিতা মাঝির ৷ পারমিতা পেশায় শিক্ষিকা ৷ বললেন, "যখন প্রথম টিউশনি শুরু করেছিলাম, যেকোনও উৎসবে বাচ্চারা গ্রিটিং কার্ড দিত ৷ নিজেদের হাতে কত সুন্দর সুন্দর কার্ড তৈরি করত ৷ এখন তো শুধু হোয়াট্সঅ্য়াপে মেসেজ আসে একটা !"
গ্রিটিং কার্ডের কথা বলতেই বিষাদের সুর শিল্পী স্বপন সরকারের গলায় ৷ তিনি বললেন, "আগে বাচ্চাদের মধ্যে গ্রিটিং কার্ড তৈরি করতে শেখার আগ্রহ ছিল ৷ এখনকার ছোটদের মধ্যে আর তেমনটা দেখি না ৷" এই ভোল বদল ভালো লাগছে না মানুষ গড়ার কারিগরদের ৷ তাঁরা বলছেন, গ্রিটিং কার্ড দেওয়ার মধ্যে যে আন্তরিকতা ছিল, স্মার্ট ফোনের মেসেজে তা নেই ৷ তাছাড়া, এই ধরনের আচার আদতে হাতেকলমে শেখার একটা বিরাট প্ল্যাটফর্ম ৷ এখনকার বাচ্চারা সেটা থেকে বঞ্চিত ৷
গ্রিটিং কার্ড নিয়ে আশার কথা শোনাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরাও ৷ শহরে একটি দোকান রয়েছে গণেশ মণ্ডলের ৷ খাতা, পেন, পেনসিলের মতো নানা ধরনের সামগ্রী বিক্রি করেন ৷ নিয়মরক্ষায় এখনও গ্রিটিং কার্ড দোকানে তোলেন গণেশ ৷ কিন্তু, ক্রেতা মেলে না ! গণেশ বললেন, "এখনকার বাচ্চারা তো গ্রিটিং কার্ড কিনতেই চায় না ৷ বাবা-মায়েরা তবু তাদের কিনতে বলেন ৷ কিন্তু, সবাই তা শোনে না ! অথচ, আগে এমনটা ছিল না ৷ এখন ওই যাদের শুধুমাত্র গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড আছে, তারাই একে-অপরের জন্য গ্রিটিং কার্ড কেনে ৷ তবে, সেই চাহিদাও আগের তুলনায় অনেক কম !"
হাতের স্মার্ট ফোনে এখন হাজারো অ্যাপ ৷ তেমনই কোনও অ্য়াপ হয়তো তৈরি করে দেবে আপনার পছন্দের ভার্চুয়াল গ্রিটিং কার্ড ! কিন্তু, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন, ভালোলাগা, প্রেমে পড়া কি শুধুই ভার্চুয়াল হয় ? গ্রিটিং কার্ডের অস্তিত্ব সঙ্কটের দিনে এমন প্রশ্ন উঠছেই ৷