কলকাতা, 2 অগস্ট: রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন, উপাচার্যদের সমস্যার সমাধান বা কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস চুপ। এসব ক্ষেত্রে কোনও আলোচনা, সমালোচনা বা পরামর্শ তাঁর তরফ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ রাজ্যপাল বেছে বেছে কিছু ইস্যুকে তুলে ধরে জনপ্রিয় হতে চাইছেন ৷ বুধবার উপাচার্যদের সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যপালকে এই ভাষাতেই আক্রমণ করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷
এদিন অধ্যাপক, উপাচার্যদের একটি সংগঠনের কনভেনশনে রাজ্যপালকে এভাবেই আক্রমণ করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানেই রাজ্যপালের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী জানান, রাজ্যপাল শুধুমাত্র পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক হিংসা আর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েই সরব হচ্ছেন। আর এই প্রসঙ্গ তুলে আসলে তিনি সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে পেজ থ্রি'র সেলেব্রিটিদের মতোই জনপ্রিয় হতে চাইছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইছে। উচ্চশিক্ষায় গৈরিকীকরণ করতে চাইছে। এ রাজ্যে ছিনতাই করতে চাইছেন গোটা শিক্ষা পরিকাঠামো। শিক্ষা বিভাগকে অন্ধকারে রেখে উপাচার্য নিয়োগ, তাদের রিপোর্ট পেশ করতে বলছেন রাজ্যপাল।
রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী বা নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করছেন না বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী। এই প্রবণতার বিরুদ্ধে এদিন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তীব্র আক্রমণ শানান সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে। রাজ্যের সঙ্গে যে সমস্ত বিষয়ে টানাপোড়েন চলছে সেই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না-করলে ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যপাল চাইলে আলোচনার পথ খোলা আছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার 'উচ্চশিক্ষা সংকট ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক একটি কনভেনশন হয় কলকাতা ইউনির্ভাসিটি ইনস্টিটউট হলে। সেখানে কেন আচার্য পদে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বসানো প্রয়োজন, তা নিয়ে বিভিন্ন প্রাক্তন উপাচার্য এবং বর্তমান অধ্যাপকেরা বক্তব্য রাখেন। ছিলেন ভিন রাজ্যের একাধিক অধ্যাপক। জহরলাল ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপিকা রাজলক্ষ্মী, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক যোগেন্দ্র যাদব, রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ আরও অনেকেই। অবিজেপি রাজ্যে সেনা আধিকারিক, চিকিৎসক, জ্যোতিষী এমন লোকজনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রতিবাদে এদিন বক্তারা কটাক্ষ করে জানান, এবার উপাচার্যদের রাজ্যপাল থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ করবেন। উঠে এসেছে বছর চল্লিশ আগে সন্তোষ দত্তের প্রসঙ্গও।
রাজ্যপালের নিয়োগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে সেই সময় ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী সবাই একসঙ্গেই দাঁড়িয়ে অচল করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এবারও সেই পথে হাঁটবেন বলেও এদিন ব্রাত্যবসু স্পষ্টভাবে জানান। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তিনি উপাচার্যদের স্বাধীনতা বা স্বশাসনের উপর কোনওদিন হস্তক্ষেপ করেননি। বর্তমানে রাজ্যপাল যা করে চলেছেন। ইচ্ছামত উপাচার্যদের বহিষ্কৃত করছেন ইচ্ছামত নিয়োগ করছেন তাদের নানারকম ভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। সরকারকে গোটা বিষয়ে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্যই দরকার মনোনীত নয় নির্বাচিত প্রতিনিধি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে নিয়োগ করা কারণ, তিনি দিনের শেষে জনতার কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ ৷ যা রাজ্যপালকে করতে হয় না।"
আরও পড়ুন: 'এটা আমার বিষয় নয়', নুসরত প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী
এদিন কনভেনশন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে নিয়োগের পক্ষেই সাওয়াল ওঠে। উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও এই প্রসঙ্গে স্পষ্ট বলেন, "যে বিল রাজ্যপাল ফেলে রেখেছেন তার যদি সমস্যা থাকে তিনি ফেরত পাঠান আমরা কথা বলে আলোচনা করে আবার পাঠাব প্রয়োজনে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে, তারপরে যা হবে দেখা যাবে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকেই আমরা আচার্য পদে বসাতে চাই।"